• বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

অযত্নে চোখের ক্ষতি

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১২ অক্টোবর ২০২৩  

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিদিন তিন হাজারের বেশি রোগী চোখের বিভিন্ন সমস্যায় শুধু এ প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসা নেন। তাদের তথ্য বলছে, দেশের এক কোটি ৪৩ লাখ লোক দৃষ্টিত্রুটিতে ভুগছেন এবং দিন দিন চোখের রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, স্মার্টফোন-ট্যাবের মতো গ্যাজেটে আসক্তি, এরকম নানা কারণে অল্প বয়স থেকেই চোখের নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

আজ (১২ অক্টোবর) বিশ্ব দৃষ্টি দিবস। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অন্ধত্ব এবং চোখের বিকলতা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে এই দিবস পালন করা হয়। ২০০০ সালে লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘সাইট ফার্স্ট ক্যাম্পেইনের’ ফলশ্রুতিতে এই দিবসের শুরু হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘কর্মক্ষেত্রে চোখের যত্ন নিন’।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীতে মানুষ যেসব কারণে দৃষ্টিশক্তি হারায়, তার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিসের কারণে চোখে যে সমস্যা তৈরি হয় তার নাম ‘ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি’। চিকিৎসকদের মতে, ডায়াবেটিস চোখের সব অংশের তুলনায় রেটিনার বেশি ক্ষতি করে। যার যত বেশি দিন ধরে ডায়াবেটিস রয়েছে, তার রেটিনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তত বেশি।

ডায়াবেটিস চোখের ছোট ছোট রক্তনালীর ক্ষতি করে। ফলে রক্তক্ষরণ হয়। রক্তনালী থেকে চর্বিজাতীয় জিনিস অর্থাৎ কোলেস্টেরল ও লিপিড বের হয়ে আসে। একই সঙ্গে রেটিনার বিভিন্ন স্তরে জমা হয় তরল পদার্থ। সবকিছু মিলে রোগী ধীরে ধীরে কম দেখতে শুরু করে। কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে কম দেখা বা ক্ষীণ দৃষ্টি এক ভয়ংকর সমস্যা। এতে পড়তে সমস্যা হয়, কম্পিউটারে দেখতে সমস্যা হয়, এমনকি লিখতেও ঝামেলা হয়। একপর্যায়ে রেটিনায় রক্তক্ষরণ হয় এবং রেটিনা ছিঁড়েও যেতে পারে। সার্বিক চিকিৎসা না হলে এই রোগী ধীরে ধীরে অন্ধত্ব বরণ করে।

এছাড়া ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী এই একই সমস্যায় ভুগতে পারেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোটবেলা থেকে স্মার্টফোন ও ট্যাবে ভিডিও গেমসের আসক্তি শিশুদের চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যাসহ নানা ধরনের মানসিক সমস্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এছাড়া শিশুদের রেটিনার ক্যানসারও উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।

চিকিৎসকরা জানান, শিশুদের চোখের সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হলো ‘রেটিনোব্লাস্টোমা’। এটি মূলত ক্যানসার, যা রেটিনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তবে সবার এ ধরনের রোগ হয় না। ১৫ থেকে ১৮ হাজার শিশুর মধ্যে হয়তো একজন এই ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। বংশগত কারণেও হতে পারে এই রোগ। পরিবারে কারও এই রোগ থাকলে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৫০ শতাংশ বেশি। দেশে কী পরিমাণ এ ধরনের রোগী আছে, কিংবা রেটিনোব্লাস্টোমায় আক্রান্ত হয়েছে, তার সঠিক কোনও তথ্য কারও কাছে নেই।

অপথালমোলজি সোসাইটি অব বাংলাদেশের মহাসচিব বিএসএমএমইউ’র চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. তারিক রেজা আলী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ২০১৯ সালে ভারতীয় এক গবেষণা প্রবন্ধে জানানো হয়, বিশ্বে ‘রেটিনোব্লাস্টোমা’ রোগীদের ৪৩ শতাংশই এশিয়া মহাদেশের ছয়টি দেশে। ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ছাড়াও বাংলাদেশে এই রোগীর সংখ্যা ছিল ১৮৪ জন। সবচেয়ে বেশি রোগী ছিল চীনে, এক হাজারেরও বেশি। আগে বাংলাদেশে চিকিৎসা না থাকলেও এখন উন্নত চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

তিনি বলেন, এই রোগে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ভোগে। দুই থেকে তিন বছরের শিশুদের মধ্যে এই রোগ দেখা দেয়। তবে পাঁচ বছর বয়সেও হতে পারে, আবার ছয় মাসেও হতে পারে। যেহেতু ক্যানসার, সেহেতু অধিকাংশকেই বাঁচানো যায় না। তবে ইদানীং আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় এর চিকিৎসা আমরা দিতে পারছি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষুবিজ্ঞান বিভাগ ও কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগে চোখের সব ধরনের রোগের উন্নত চিকিৎসাসেবা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেকোনও দিবস পালনের উদ্দেশ্য হলো জনগণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে চোখের অনেক ক্ষতি হয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করা উচিত।

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, সবাই সচেতন হলে চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখা সম্ভব।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা