• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

ভোমরা স্থলবন্দরে দুর্নীতি, ডেপুটি কমিশনারকে প্রত্যাহারের দাবি

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ৩ মার্চ ২০২৪  

সাতক্ষীরা ভোমরা কাস্টমস এখন দুর্নীতি আর অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। প্রতি মাসে আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে জোর পূর্বক হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা। যে কারণে ব্যবসায়ীরা ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানিতে আগ্রাহ হারাচ্ছেন। ফলে সরকার এ বন্দর থেকে রাজস্ব হারাচ্ছে। এদিকে ভোমরা স্থলবন্দরে পণ্য আমদানিতে কাস্টমস কর্মকর্তাদের দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

একটি সূত্র জানায়,ভোমরা স্থলবন্দর কাস্টমসের ডিসির নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাগেজ সেকশনে বিভিন্ন উপায়ে যাত্রীদের নিকট হতে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করা হচ্ছে, যা বর্তমানে যাত্রী হয়রানীর চরম পর্যায়ে উপনীত হয়েছে।আগমন ও বহির্গমন সকল যাত্রীদের নিকট হতে ন্যূনতম ১০০ টাকা করে চাঁদা জোরপূর্বক আদায় করা হচ্ছে।বিদেশি যাত্রীদের মদের বোতল আনায়নের ক্ষেত্রে মদের কাগজে কাস্টমস সিল ব্যবহার করে বৈধতা দেয়ার ক্ষেত্রে ৪০০-৫০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। যাত্রীরা ভারত থেকে পণ্য সামগ্রী আনলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের ভয় দেখিয়ে ৫০০-১০০০ টাকা চাঁদা জোরপূর্বক আদায় করা হচ্ছে। চাঁদা না দেয়া হলে তাদের পণ্য সামগ্রী জব্দ করা হচ্ছে।কোন যাত্রী চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদের পাসপোর্ট আটক করে রাখা হচ্ছে।চিকিৎসার জন্য ভারতে গমনের ক্ষেত্রে টাকা বহনের জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অনুমতি পত্র দেয়ার জন্য ১৪-১৫ হাজার টাকা দাবি করছে।কোন যাত্রী গাড়ির কোন যন্ত্রাংশ নিয়ে আসার সময় ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কিনা জানতে চাওয়া হচ্ছে। এভাবে বিভিন্ন উপায়ে যাত্রীদের নিকট থেকে অর্থ আদায় করার জন্য তাদেরকে হয়রানি করা হচ্ছে।

ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশন ভবনে সিএন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশন, সাতক্ষীরা চেম্বার অব কর্মাস এ্যাসোসিয়েশনসহ বন্দর সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠন জরুরি এক যৌথ সভা করে বন্দরের ডেপুটি কমিশনার মো. এনামূল হকের প্রত্যাহার দাবি করেছেন।

ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান, সাবেক সভাপতি আশরাফুজ্জামান আশু, শেখ এন্টারপ্রাইজের শেখ হাসান হক মোস্তফা ও কর্মচারী এ্যাসোসিয়েশনের মহাসিন কবির জানান, আমদানিকৃত ভারতীয় ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর বিল অব এন্ট্রি করার জন্য কাস্টমস অফিসে অগ্রিম ২ হাজার টাকা না দেয়া পর্যন্ত বিল অব এন্ট্রি নাম্বার ফেলতে দেয়া হয় না।

ভারতীয় ট্রাক বন্দর থেকে বের করার জন্য প্রতিদিন প্রায় ৪০টির অধিক স্ট্যাম্প করতে হয়। স্ট্যাম্প প্রতি ডেপুটি কমিশনারকে নগদ ২ হাজার টাকা এবং পরীক্ষণে দায়িত্বর কর্মকর্তাকে ৫০০ টাকা প্রদান না করা পর্যন্ত স্ট্যাম্পে সাক্ষর করেন না তিনি।

রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রেও বিল অব এন্ট্রি প্রতি অগ্রিম এক হাজার টাকা প্রদান না করলে বিল অব এন্ট্রি নাম্বার ফেলতে দেয়া হয়না এবং পণ্যের ডলার মূল্য বাড়ানোর ভয় দেখিয়ে বিল অব এন্ট্রি প্রতি ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত অবৈধ ভাবে আদায় করছে। এসব টাকা উত্তোলনের জন্য নির্ধারিত লোকও ঠিক করে দেয়া হয়েছে।

তাদের হাতে টাকা না পৌঁছানো পর্যন্ত কোন ফাইল ছাড়া হয় না। পন্যের ডলার মূল্য বাড়ানোর ভয় দেখিয়ে বিল অব এন্ট্রি সংখ্যা বৃদ্ধি করে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য পাথরের ক্ষেত্রে ১০ ট্রাকে একটি এবং অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে ৫ ট্রাকে ১টি বিল অব এন্ট্রি নির্ধারণ করে দিয়েছে। ব্যবসায়িদের এসব হয়রানির ফলে অনেক ব্যবসায়ি এই বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন।

আমদানিকারক মিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজের শাহ আলম শিমূল জানান, সার্কভূক্ত দেশ গুলোতে সাপঠার ক্ষেত্রে ডিউটি ফ্রি পণ্য যেমন খৈল ও ভূসি। ক্ষেত্রও জোর পূর্বক বিল অব এন্ট্রি প্রতি ৩০ হাজার টাকা করে অবৈধ ভাবে আদায় করা হচ্ছে। যা বেআইনি। টাকা না দিলে ফাইলে সাইন করেন না ডেপুটি কমিশনার এনামূল হক। এসব বিষয়ে বেশি কথা কললে ব্যবসায়িদের লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দেন তিনি।

সভায় উপরোক্ত অবৈধ টাকা আদায় এবং ডেপুটি কমিশনারের অনিয়ম বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। অন্যথায় ভোমরা বন্দরে এ বিষয়ে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং আন্দোলনের প্রক্রিয়া তৈরি হলে ভোমরা সি এন্ড এফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশন কোন প্রকার দায়ভার গ্রহণ করবে না বলে জানান ব্যবসায়িরা।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু বলেন, ভোমরা স্থলবন্দরের ডেপুটি কমিশনার এনামূল হকের অনিয়ম দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করেছে। ভারত থেকে পণ্য আমদানিকারক ব্যবসায়িরা বিষয়টি তাকে জানিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে খুলনার কাস্টমস কমিশনারকে বিষয়টি অবগত করেছেন। অবিলম্বে তাকে ভোমরা বন্দর থেকে অপসারণসহ ব্যবসায়িদের হয়রানি ও অনিয়ম বন্ধের জোর দাবি জানান।

ডেপুটি কমিশনার মো. এনামুল হক তার বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে স্কেলে এখন জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। যে কারণে ব্যবসায়িরা অবৈধ সুযোগ না পেয়ে এসব অভিযোগ তুলছেন। আমি যোগদানের পর থেকে রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ হয়েছে।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা