• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

লোপাস : একটি ভয়ঙ্কর রোগ

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

লোপাস এক আজব রোগ। নিজের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়াই এর কাজ। বাইরে থেকে শরীরে কোনো ক্ষতিকর ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়া অথবা অন্য কোনো রোগ প্রবেশ করলে তা ধ্বংস করে শরীরকে রোগমুক্ত রাখে যে অ্যান্টিবডি ‘লোপাস’ নামক রোগটি হলে বাইরে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া অথবা অন্য রোগ প্রবেশ করলে সহজে সেগুলো প্রতিরোধ করতে পারে না। উপরন্তু লোপাস নামক রোগটি শরীরের সুস্থ কোষকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে লোপাস হয়েছে, এমন রোগীর শরীরে সারাক্ষণ জ্বলুনি ভাব চলতেই থাকে।

লোপাস একটি গ্রিক শব্দ। এর অর্থ নেকড়ে। নেকড়ে যেমন হঠাৎ দ্রুতগতিতে আক্রমণ করে শিকারকে মেরে ফেলে, তেমনি লোপাস আকস্মিকভাবেই আক্রমণ করে ত্বক, স্নায়ুতন্ত্র, কিডনি, রক্ত সঞ্চালনতন্ত্রকে আক্রমণ করে মানুষকে অসুস্থ করে তোলে। এটি সিস্টেমিক লোপাস ইরাইথেমেটোসাস বা এসএলই রোগ হিসেবেও পরিচিত।

বিশিষ্ট রিওম্যাটোলজিস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রিউমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা: সৈয়দ আতিকুল হক বলেন, ‘লোপাস নির্মূল করা যায় না। এটি কেবল ওষুধ প্রয়োগে নিয়ন্ত্রণ করে রাখা যায়। নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে লোপাস আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে।’

মেয়েরাই বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে লোপাসে। কিছু কিছু পুরুষও আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে এদের সংখ্যা খুব কম। নারী ও পুরুষের মধ্যে রোগটি হওয়ার অনুপাত ৯:১। সাধারণত ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সীরাই রোগটিতে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে এটা দেখা যাওয়ার তথ্য নেই। কোনো কোনো সময় বয়ঃসন্ধিকালেও কিশোরীদের মধ্যে রোগটির লক্ষণ স্পষ্ট হতে শুরু করে।
রোগটি হলে ত্বক (স্কিন) ও জোড়া (জয়েন্ট) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণত দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেহে প্রোটিন তৈরি করে, যা অ্যান্টিবডি নামে পরিচিত। লোপাস বাইরে থেকে শরীরে আসা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন জীবাণু এবং সুস্থ কোষের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। সে সব ধরনের কোষকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে শরীরে দেখা দেয় জ্বালাপোড়া, ব্যথা।

লোপাস হলে চুল পড়া, মাথাব্যথা, নাকের দুই পাশে চোখের নিচে প্রজাপতির পাখার মতো লালচে র‌্যাশ দেখা দেয়। একে বাটারফ্লাই র‌্যাশও বলা হয়ে থাকে। একই সাথে ক্লান্তি অথবা অবসাদ দেখা দিয়ে থাকে। জ্বর হতে পারে, মুখে বা নাকে ঘা-আলসারও হতে পারে। ঘা থেকে গিরা ফোলা, অস্বাভাবিক রক্ত জমাট বাঁধা, গভীর নিঃশ্বাস নেয়ার সময় ব্যথা, রোদে হাঁটলেই ত্বকে জ্বালাপোড়া অনুভূতি, ঠাণ্ডায় আঙুল সাদা বা নীলাভ হয়ে যেতে পারে। ঘন ঘন শ্বাসপ্রশ্বাসও দেখা দিতে পারে। এর বাইরে রোগটির কারণে আক্রান্ত হতে পারে কিডনি। লিভারে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে যায় লোপাসের প্রতিক্রিয়ায়। মস্তিষ্কও আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

এশিয়া, উত্তর আমেরিকা, আফ্রিকা ও ইউরোপে প্রতি লাখে এক থেকে ২৫ জনের আক্রান্তের তথ্য রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতকায় মানুষের মধ্যে প্রতি লাখে ১৬৪ জন এবং আফ্রিকান-আমেরিকানের মধ্যে লাখে ৪০৬ জন আক্রান্ত পাওয়া যায়। বাংলাদেশে লোপাস নিয়ে কোনো পরিসংখ্যান নেই। চিকিৎসকেরা বলছেন, রোগটি সাধারণ মানুষের কাছে তেমন পরিচিত নয়। মানুষ এ সম্বন্ধে খুব বেশি জানেন না। চিকিৎসকেরাও খুব বেশি সচেতন নন রোগটি সম্পর্কে।

মেডিসিন অথবা রিউমাটোলজি বিভাগের স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক বাংলাদেশে লোপাসের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। বিএসএমএমইউর লোপাস ক্লিনিকে স্বল্প খরচে এ রোগের চিকিৎসা দেয়া হয়। 
লোপাস হলে ঠাণ্ডা হতে পারে, সর্দি, কফ, নাক দিয়ে পানি পড়তে পারে। লোপাস আক্রান্তদের দ্রুত ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার কারণ হিসেবে চিকিৎসকেরা বলছেন, তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল বলে এমনটি হয়ে থাকে।

সর্দির জন্য চিকিৎসকেরা টিকা নিতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এ ছাড়া প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’-জাতীয় খাবার, ফলসহ প্রচুর শাকসবজি খেতে বলেন তারা। ধুলাবালি এড়িয়ে চলা, আদা চা বা গরম পানি দিয়ে গোসল করারও তাগিদ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা। ঠাণ্ডা কিভাবে লাগে তা থেকে বেঁচে থাকার উপায় নিজেই বের করে নেয়া সম্ভব, একটু সচেতন হলেই। 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগে লোপাস রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। প্রতি রোববার ৩০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনেই সেবাটি পাওয়া যায় সেখানে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রতি বুধবার এবং সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগেও প্রতি সোম ও বুধবার আউটডোরে চিকিৎসা দেয়া হয়।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা