• বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

স্প্যানিশ ফ্লু থেকে করোনা, মাস্কই ভরসা আবার অপরাধীর মুখোশ!

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২০  

করোনার মতোই মহামারি এক ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বে। ঘাতক ওই ফ্লু থেকে বাঁচার কোনো উপায় জানা ছিল না কারো। তখন এই রোগের চিকিত্সার জন্য কোনো কার্যকরী ওষুধ বা ভ্যাকসিন ছিল না। ঠিক এখন যেমন করোনাভাইরাস প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। শুধু মাস্ক ও ব্যক্তিগত সচেতনতাই ছিল ভাইরাস থেকে বাঁচার অন্যতম পন্থা।

বলছি, ১৯১৮ সালে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরা স্প্যানিশ ফ্লুর কথা। যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রাণঘাতী ভাইরাস হিসেবে বিবেচিত। কারণ এই ভাইরাসের কবলে প্রাণ যায় বিশ্বের ১০০ মিলিয়ন মানুষের। আক্রান্ত হন অন্তত ৫০০ মিলিয়ন মানুষ। যা তখনকার বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এর মধ্যে মার্কিনদের সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৭৫ হাজার। 

বলা হয় স্প্যানিশ ফ্লু প্রথম বিশ্বযুদ্ধের থেকেও বেশি মানুষের প্রাণহানির জন্য দায়ী। ১৯১৮ সালে এই ফ্লু’টি দ্রুত ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু তখন ভাইরাসটি প্রতিরোধে কোনো ওষুধ ছিল না তাই ব্যক্তিগত সচেতনতা ও পরিষ্কার থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল সবাইকে। যেসব দেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছিল সেসব স্থানে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল মাস্ক ব্যবহার করার।

মাস্কের প্রচলন শুরু

১৯১৮-সালের এই স্প্যানিশ ফ্লু মহামারি পর্যায়ে চলে গেলে নিউইয়র্কের স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশে জনবহুল অঞ্চলে মানুষের চলাচল বন্ধ করা হয়। পাশাপাশি স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন দোকানও বন্ধ করে দেয়া হয়। এ মহামারিতেই প্রথম টোকিওর স্কুলছাত্রীরা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিরক্ষামূলক মুখোশ তৈরি করে। যা ১৯১৮ থেকে ১৯২০ সালের ফ্লুর মহামারি এবং পরবর্তীকালে রোগের প্রাদুর্ভাবের সময় জাপানি জনগণ ব্যবহার করতেন। আর তখন থেকেই মুখোশ বা মাস্কের ব্যবহার শুরু হয়। সেসময় থেকেই মাস্কের প্রচলন শুরু।

তখনো বাণিজ্যিকভাবে মাস্ক উৎপাদন শুরু হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই রোগীদেরকে মাস্ক বিতরণ করত। মাস্ক তৈরির কাজে নিয়োজিত থাকত নার্সরা। তবে যখন রাষ্ট্রীয়ভাবে সবাইকে মাস্ক পরার ঘোষণা দেয়া হয় তখন অবশ্য যে যেভাবে পারত সেভাবেই এক টুকরো কাপড় নাকের উপর থেকে মাথার পেছনের দিকে নেকাবের মতো বাধা হত। তবে ধীরে ধীরে ডাক্তাররা অপারেশনের সময় যে সার্জিকেল মাস্ক ব্যবহার করে তেমন ঘরানার মাস্ক বাজারে আসে।

এর বিশেষত্ব হলো, এতে ব্যবহৃত কাপড় জীবাণুর ফিল্টার হিসেবে কাজ করে। এতে করে জীবাণু সহজেই নাকে বা মুখে প্রবেশ করতে পারে না। এই মা্স্কগুলো চিবুক পর্যন্ত জুড়ে থাকে। কিছু মাস্ক দুই কানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। আবার কিছু মাস্কের ডিজাইন অনুসারে মাথার পিছনে বাঁধতে হয়। 

মাস্ক ও অপরাধ

সার্জিকেল মাস্ক শুধু রোগ-ব্যাধি থেকেই সুরক্ষা দেয় না বরং পরিচয় গোপন করতে বা চেহারা লুকাতেও কাজে লাগে। অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই! জানেন কি? মাস্ক ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক অপরাধীরাই ঘটিয়েছেন নানা কর্মকাণ্ড। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যাংক ডাকাতির রেকর্ড ঘাটলে দেখা যায়, প্রায় সব অপরাধীই পরিচয় লুকাতে মাস্ক ব্যবহার করেন। এছাড়াও মাস্ক পরে অপরাধী কাউকে খুন করেছেন এমন তথ্যও অনেক রয়েছে। ২০১৯-২০ সালে হংকং বিক্ষোভের সেখানকার সরকার মাস্কের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে।

স্প্যানিশ ফ্লুর উদ্ভব

এই ভাইরাসের নাম স্প্যানিশ ফ্লু। নাম শুনেই নিশ্চয় ধারণা করতে পারছেন, এর উৎপত্তিস্থল ছিল কোথায়! স্পেনেই এই ফ্লু প্রথম থাবা বসায়। বিশ্ব অর্থনীতিতেও এই মহামারি ফ্লু ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলকারখানা ও কোম্পানির কর্মচারীরা অসুস্থ থাকায় ব্যবসা বন্ধ হয়ে পড়ে। কিছু জায়গায় ফসল তোলার মতো পর্যাপ্ত খামার শ্রমিকও ছিল না।

স্প্যানিশ ফ্লুর লক্ষণ কেমন ছিল? 

১৯১৮ সালের বসন্তের শেষের দিকে আঘাত হানে এই মহামারি ফ্লু’টি। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে শারীরিক কোনো জটিলতা প্রকাশ পায়নি। সামান্য ঠাণ্ডা, জ্বর, কাশি, ক্লান্তি বোধ এসব লক্ষণই প্রকাশ পেয়েছিল। একেবারেই সাধারণ সর্দি-কাশির সমস্যার মতোই এর লক্ষণ ছিল। ওই বছরেরই শরৎকালে ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো এক সংক্রমণে অনেকেই মারা যান।

এতে আক্রান্তরা কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের মধ্যেই মারা গিয়েছিলেন। আক্রান্তদের ত্বক নীল হয়ে গিয়েছিল। সেইসঙ্গে ফুসফুস পানিতে ভরে যাওয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে তারা মারা যায়। ১৯১৮ সালে মাত্র এক বছরেই মার্কিনদের গড় আয়ু ১২ বছর কমে গিয়েছিল। 

স্প্যানিশ ফ্লু মহামারি শেষ হয় কবে?

১৯১৯ সালের গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপে এই ফ্লুর মহামারি ভাব কেটে যায়। এরইমধ্যে আক্রান্তদের সবাই মারা গিয়েছিলেন। এর প্রায় ৯০ বছর পর ২০০৮ সালে গবেষকরা স্প্যানিশ ফ্লুর মারাত্মক প্রভাব সম্পর্কে জানতে সক্ষম হন। তারা আবিষ্কার করেন, তিনটি জিন দ্বারা গঠিত একটি দলীয় ভাইরাস এটি। 

যা ব্রঙ্কিয়াল টিউব এবং ফুসফুসকে দুর্বল করার মাধ্যমেই আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটায়। এই গবেষণার মাধ্যমেই মহামারি ফ্লু’টি শনাক্ত করে এর নাম দেয়া হয় এইচ ওয়ান এন ওয়ান ভাইরাস। ১৯১৮ সালে পর ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত আরো এক ইফ্লুয়েঞ্জা মহামারিতে রূপ নেয়। অতঃপর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষ এতে মারা যায়।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা