• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

ফিল্ম পলিটিক্সের শিকার ঢাকার ছবির যে নায়কেরা

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২০  

ঢাকাই ছবিতে যুগে যুগে সম্ভাবনাময় অনেক নায়কই এসেছেন। নিজ প্রতিভাগুণে এগিয়েও গিয়েছিলেন অনেক পথ। কিন্তু মাঝপথে থমকে যেতে হয়েছে অনেককে। নানা চক্রান্তের শিকার হয়ে আড়াল হয়েছেন কেউ কেউ। আবারও অনেককে প্রাণও দিতে হয়েছে। এ ফিল্মী রাজনীতি চলছে এখনও। হয়তো চলবে আজীবন। চক্রান্তের শিকার হওয়া কয়েকজন নায়কের গল্প নিয়েই আজকের এ আয়োজন। বিস্তারিত লিখেছেন- অনিন্দ্য মামুন

সফল মানুষের সাফল্যের পেছনে থাকে হাজারো টুকরো টুকরো গল্প। এ গল্প কখনও হয় সুখকর, আবার কখনও কষ্টের। কারণ সিঁড়ি বেড়ে ওপরে উঠার পথে অনেকেই তাদের টেনে ধরে থাকেন। নানা ফাঁদও পেতে রাখেন, সাফল্য ঠেকিয়ে রাখতে। যারা বিষয়টিকে বুঝে সঠিক পথে স্থির থাকতে পারেন, সফল হন তারাই। আর যারা আত্মসমর্পণ করেন, সাফল্য তাদের ঝুলিতে আর ফিরে না। ইতিহাস থেকে তারা হারিয়ে যান আড়ালে। তাদের খবরও রাখেন না কেউ। মূলত নানা চক্রান্তের কারণেই কোণঠাসা হয়ে পড়েন সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়া মানুষগুলো। এ চক্রান্ত পরিবার থেকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং কর্মজীবনের নানা পেশায়ই বিদ্যমান। নিজেদের স্বার্থের কারণেই চক্রান্ত করে মানুষ। তবে এতে চক্রান্তকারীদের লাভ যে হয় তা কিন্তু নয়। ইতিহাসের দিকে তাকালে যুগে যুগে তাদের পাল্লায় ক্ষতির পরিমাণটাই বেশি লক্ষ্যণীয়। তবুও তারা এ পথেই এগোবেন। অন্যের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে নিজের সাফল্যের আশায় কারও না কারও ক্ষতি করে যাবেন। 

বিষটি রাজনীতির মাঠে বেশি দেখা গেলেও প্রায় প্রতিটি সেক্টরেই রয়েছে চক্রান্তের জাল। আছে আমাদের ঢাকাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেও। যে চক্রান্তের কারণেই ঢাকাই ছবির অনেক নায়কের শুধু ক্যারিয়ারই ধ্বংস হয়ে যায়নি, কাউকে কাউকে অকালে প্রাণও দিতে হয়েছে। মূলত নিজ স্বার্থ বাস্তবায়নের জন্যই এমন দুষ্টু চক্রান্তে নেমে থাকেন চারাপাশের লোকেরা। ফলাফল চলচ্চিত্র হারায় প্রতিভাবান নায়ককে। আর দর্শকরা হারায় তাদের প্রিয় তারকাকে। ঢাকাই ছবিতে এরকম চক্রান্তের শিকার হতে দেখা গেছে সোহেল চৌধুরী, সালমান শাহ, রিয়াজ, শাকিল খান। সর্বশেষ হাল আমলের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খানও চক্রান্তের শিকার বলে দাবি করছেন।

সোহেল চৌধুরী

কথিত আছে, চিত্রপাড়ার এক শ্রেণীর মানুষের অসুস্থ চক্রান্তের শিকার হয়ে প্রাণ দিয়েছেন সোহেল চৌধুরী। ১৯৮৪ সালে এফডিসির ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রুপালি জগতে পা রাখেন দিতি ও সোহেল। কয়েক বছর পর দু’জনে বিয়ে করেন। দিতি ঢালিউডে তার আসন পাকাপোক্ত করতে পারলেও সোহেল চৌধুরী সফল হননি। শত্রুদের কারণে পরপারে পাড়ি দিতে হয়েছে। ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেলকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

 ঘটনার দিনই তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় হত্যা মামলা করেন। অভিযোগ গঠনের পর মামলা খারিজ চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিল আসামি পক্ষ। তাতেই নিন্ম আদালতে আটকে যায় বিচার। বর্তমানে মামলার প্রায় দুই দশক সময় হয়ে গেলেও সেই জট এখনও খোলেনি।

সালমান শাহ

৯০ দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের এক ধূমকেতুর নাম ছিল সালমান শাহ। যিনি হুট করে এসে বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের মন জয় করেন। এ হুট করে এসে নিজ প্রতিভাগুণে শীর্ষ নায়কের তকমা দখল করে নেয়াটা মেনে নিতে পারেননি অনেকেই। তাই লেগে পড়েছিলেন তার পেছনে। জীবিত থাকাকালীন নানা ষড়যন্ত্রের জাল থেকে বের হতে পারেননি এ নায়ক। বিভিন্ন সময় কতিপয় পরিচালক ও প্রযোজক মিলে তাকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চালিয়েছেন। বেশ কয়েকবার তাকে নিষিদ্ধের তালিকায়ও পড়তে হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন এ নায়ক। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। চিরতরে চলে যেতে হয়েছে তাকে। যে খুনের রহস্য মেলেনি এখনও। তবে অনেকেই তার খুনের ব্যাপারে নিজের স্ত্রীর জড়িত থাকার ব্যাপারেও সন্দেহ করেন। সালমান শাহর মৃত্যুর পর তার বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী রমনা থানায় অপমৃত্যু মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে মা নীলা চৌধুরী সালমানের স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়িসহ কয়েকজনকে আসামি করে আদালতে হত্যা মামলা করেন। সর্বেশষ প্রকাশিত পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয় ‍খুন নয় আত্মহত্যাই করেছেন সালমান।  তবে পিবিআইয়ের এই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করেছেন সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। 

শাকিল খান

সালমান শাহ পরবর্তী সম্ভাবনাময় নায়ক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন শাকিল খান। চলচ্চিত্রের চক্রান্তের শিকার হয়েছেন তিনিও। তার চক্রান্তটা কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে। ফলে দাঁড়াতে পারেননি আর। সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও বিদায় নিতে হয়েছে। ১৯৯৭ সালে ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রুপালি পর্দায় হাজির হন শাকিল খান। ওই ছবিটি পরিচালনা করেন সোহানুর রহমান সোহান। এতে শাকিল খানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন পপি। অন্যদিকে ১৯৯৭ সালে ‘কুলি’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে এই নায়িকার। মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত এই ছবিতে তার অভিনয় নৈপুণ্য সবার চোখে পড়ে। প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেন তিনি। শাকিল-পপি জুটি একে একে অনেক ব্যবসা সফল ছবি উপহার দিয়েছে। সেই সময় থেকেই তাদের সম্পর্ক নিয়ে অনেক গুজব তৈরি হয়। এ সফল জুটি এক সময় প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে বলে কথা ওঠে। তাদের নিয়ে সিনেপাড়ায় তখন অনেক কানাঘুষা ছিল। একপর্যায়ে গুজব ওঠে শাকিল-পপি গোপনে বিয়েও করেছেন। কিন্তু তার আর সত্যতা মেলেনি এখনও। শোনা যায় সে সময় পপির মা ছিলেন তাদের প্রেমের ঘোরবিরোধী। এ কারণে তিনি পপিকে চোখে চোখে রাখতেন। পপিকে সময় দিতে গিয়ে শাকিলের ব্যক্তিগত ব্যস্ততা একটু বেশিই বেড়ে যায়। ফলে নির্মাতাদের ঠিকভাবে সময়ও দিতে পারতেন না তিনি। এসব কারণে মিডিয়ায় ও সিনেমাপাড়ায় শাকিল খানের ইমেজের ভাটা পড়তে থাকে। পাশাপাশি তাকে নিয়ে চলে ফিল্মি পলিটিক্স। শাকিল-পপির বিয়ের গুজব থেকে সৃষ্ট জটিলতার কারণে এক সময় জুটি ভেঙে যায়। রাজনীতির কারণে শাকিলও ছিটকে পড়েন সিনেমা থেকে। এরপর শাকিল খান ঢাকাই চলচ্চিত্রে একজন সাবেক নায়ক হিসেবেই হারিয়ে যান।

রিয়াজ

সিনেপাড়ায় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পর কৌশলে চিত্রনায়ক রিয়াজকেও একটি মহল সরিয়ে দিয়েছেন বলে ধারণা করেন অনেকেই। কারণ রিয়াজ-শাবনুর যখন তুমুল হিট জুটি তখনই তাদের উভয়ের বিরুদ্ধে প্রেমের রব তুলে একটি মহল। একসময় বিতর্কের কারণে জুটি ভেঙে যায় তাদের। ফলাফল তারাও ধীরে ধীরে হারিয়ে যান শীর্ষস্থান থেকে।

শাকিব খান

চলচ্চিত্রপাড়ার এমন চক্রান্তের জালে এবার আটকা পড়েন দেশের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান। অনেকেই বলছেন শাকিব খানের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়েই তাকে ধরার ফাঁদ পাতা হয়েছিল। গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে পরিচালকদের বিপক্ষে যাওয়াতেই বিষয়টিকে ইস্যু বানিয়ে শাকিব খানকে উকিল নোটিশ অতঃপর তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পরিচালক সমিতি। এরপর থেকেই শুরু হয় শাকিব খানের প্রতি নির্মাতাদের ক্ষোভ ঝাড়ার পালা। একেকজন নির্মাতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও নানা অনলাইন মাধ্যমে যে যার মতো শাকিব খানকে নিয়ে এলোমেলো কথা বলেন বছর খানে আগেই।  বিষয়টি নিয়ে তখন সমাধানের পথে না হেঁটেই তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সমিতি। ক্ষমা চাইতে বলেন শাকিব খানকে। অবশেষে মুরব্বিদের মধ্যস্থতার মাধ্যমে সুরাহা হয় বিষয়টির। এর আগে অকাল প্রয়াত সুপারস্টার সালমান শাহের মতো নিজেকে চক্রান্তের শিকার বলে দাবি করেছিলেন শাকিব খান। এ প্রসঙ্গে তার ফেসবুক ফ্যান পেজে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির পক্ষ থেকে ‘বয়কট’ বিজ্ঞপ্তির ব্যাপারে নিজের বক্তব্য পেশ করে ২১ বছর আগে ১৯৯৬ সালের একটি পেপার কাটিং এবং পরিচালক সমিতির বর্তমান বিজ্ঞপ্তি সংযুক্ত করে সালমান শাহর মতো সেই চক্রান্তের শিকার বলে দাবি করা হয়। সালমান শাহের এই পেপার কাটিংয়ের সঙ্গে শাকিব খান ফেসবুকে লেখেন, ‘নিচের ছবি ২টি দেখলে আপনারা বুঝবেন ১৯ জুলাই ১৯৯৬ সালে প্রয়াত নায়ক সালমান শাহের সঙ্গে যেভাবে চক্রান্ত শুরু হয়েছিল, বর্তমানে একই কাজ আমার সঙ্গে হচ্ছে। তাই আমি একটা কথাই বলব, চলচ্চিত্রের স্বার্থে আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত বন্ধ করুন।’

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা