• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

আমাকে ইকোনমি বোলার হতে হবে: মিরাজ

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ৮ জুলাই ২০১৯  

‘বোলিং আর কই ভালো হলো। মুস্তাফিজকে দেখছেন, ২০ উইকেট নিল।  সবাই তো উইকেট দিয়ে সাফল্য মাপে।’ – অনানুষ্ঠানিক কথায় মুস্তাফিজকে নিয়ে ‘হিংসা’ করলেন নাকি প্রশংসায় ভাসালেন মেহেদী হাসান মিরাজ, তা বোঝা যায়নি।

তবে সাফল্যের মাপকাঠি যে উইকেট তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রান খরচে কতোটা কৃপণতা দেখিয়েছেন কিংবা প্রতিপক্ষ শিবিরে কতোটা দাপট দেখাতে পেরেছেন তা ভুলে যায় সবাই।  কিন্তু মিরাজ ভিন্ন।  বিশ্বকাপে নিজের বোলিং নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট।

মিরাজ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের সারপ্রাইজ প্যাকেজ। ইংলিশ কন্ডিশন, ছোট মাঠ ও ভয়ংকর প্রতিপক্ষ; মিরাজ কতোটা পেরে উঠবেন তা নিয়েই ছিল সংশয়। শেষ পর্যন্ত পেরেছেন।  তাইতো সেরা বোলিং ইকোনমি মিরাজের দখলে।  ৭ ম্যাচে ৬৭ ওভারে ৩৪১ রান দিয়ে পেয়েছেন ৬ উইকেট।  বোলিং গড় ৫৬.৮৩, ইকোনমি ৫.০৮।

নিজের প্রথম বিশ্বকাপ নিয়ে মিরাজ কথা বলেছেন ।

ইংল্যান্ডের উইকেটে অফস্পিনের কার্যকারিতা নিয়ে অনেক সংশয় ছিল। কিন্তু আপনি ভালো বোলিং করেছেন।  বিশ্বকাপের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের সফরের কথা যদি বলতেন

মেহেদী হাসান মিরাজ: আসলে আমি যে পরিকল্পনা করেছিলাম, পুরো বিশ্বকাপে আমি সেই পরিকল্পনায় স্থির ছিলাম।  দেশ থেকে যখন এখানে আসি তখন থেকেই আমার পরিকল্পনা ছিল আমি ইকোনমি ঠিক রেখে বোলিং করবো।  সেটাই হয়েছে। হয়তো আমি বেশি উইকেট পাইনি।  উইকেটের জন্য চেষ্টাও করিনি।  লাইন ও লেন্থ ঠিক রেখে এক জায়গায় বোলিং করে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।  এর ভেতরে যদি উইকেট পেয়ে যেতাম সেটা দলের জন্য উপকার হত। আমার টার্গেটই ছিল রান চেক দেওয়া। 

বাংলাদেশ তো অনেক আশা নিয়ে বিশ্বকাপে এসেছিল কিন্তু আটে থেকে শেষ করল বিশ্বকাপের মিশন। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রাপ্তি?

মেহেদী হাসান মিরাজ: দল ভালো করলে বেশি ভালো লাগে।  দল সেমিফাইনালে গেলে আরও বেশি ভালো লাগত।  দলে ব্যক্তিগত কিছু পারফরম্যান্স আছে সেগুলো অনেক বড় প্রাপ্তি। সাকিব ভাই অসাধারণ পারফরম্যান্স করেছে।  এরকম পারফরম্যান্স বিশ্বে খুব কমই দেখা যায় ওয়ার্ল্ড ক্রিকেটে।  ৬০৬ রান ও ১১ উইকেট, এটা অনেক বড় প্রাপ্তি আমার দেশের ক্রিকেটের জন্য।

সাকিবের পারফরম্যান্স মাঠ থেকে দেখেছেন।  আপনিও সাকিবের মতো স্পিন অলরাউন্ডার।  দুজনের মধ্যে পার্থক্য? সাকিব হতে হলে আপনার কি করতে হবে? তার কোন জিনিসটা আয়ত্ত্ব করতে চান?

মেহেদী হাসান মিরাজ: সাকিব ভাইকে যতটুকু আমি আগের থেকে চিনি কিংবা যতটুকু কাছ থেকে দেখেছি, ওয়ার্ল্ডকাপ শুরুর আগে সাকিব ভাই কিন্তু দুই-আড়াই মাস অনেক কঠোর পরিশ্রম করেছে। সেই পরিশ্রম কিন্তু আমরা কেউ দেখিনি। উনি আইপিএলে থাকাকালিন পরিশ্রম করেছিল। শারীরিক, মানসিকভাবে অনেক ভাবে নিজেকে তৈরি করেছেন বিশ্বকাপের জন্য।  সবকিছু ভালো করেছে।  

আমরা যখন সাকিব ভাইকে দুই মাস পর দেখি, তাকে দেখে অনেকেই অবাক হয়েছি। এতোটা পরিশ্রম করেছে! এতোটা শুকিয়েছে! আসলে ওই সময়ে তাকে দেখলেই মনে হচ্ছিল সে কিছু না কিছু করবে। আল্লাহর অশেষ রহমত, সে যেভাবে চেয়েছে, যেভাবে পারফর্ম করার পরিকল্পনা করেছে সেভাবেই করতে পেরেছে। এই বিশ্বকাপ নিয়ে উনি অনেক বেশি সিরিয়াস ছিল।  সেই ফল সে পেয়েছে।  দুজনের পার্থক্য বলবো এই পরিশ্রম। উনি জানেন কোথায় যেতে হলে কতোটা পরিশ্রম করতে হবে।

তার থেকে কি নিতে চান?

মেহেদী হাসান মিরাজ: তার মানসিক চিন্তা অনেক ওপরে।  যখন ক্রিকেট খেলেন তখন নিজের ধাঁচে ক্রিকেট খেলেন। যেভাবে পছন্দ করেন সেভাবেই খেলে যান।  বেশি চিন্তা করে ক্রিকেট খেলা যায় না। অনেক ভেবে চিন্তেও অনেক কিছু করা যায় না।  আমার কাছে মনে হয় উনি বেশি কিছু চিন্তা না করে নিজের জায়গায় থেকে খেলে। উনার এই মানসিকতা নেওয়ার মতো।  তার মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গি এবং শীর্ষে যাওয়ার তাড়ণা অন্যরকম। 

স্পিন বোলিং কোচ সুনীল যোশীর থেকে শেষ কয়েক বছরে আপনি কি শিখেছেন।  আপনার বোলিং উন্নতিতে উনার ভূমিকা?

মেহেদী হাসান মিরাজ:  ও আমাকে বলে যে, আমাকে ইকোনমি বোলার হতে হবে।  টপ ওয়ার্ল্ডের স্পিনার হিসেবে এক নম্বর হতে হবে।  এক নম্বর দেখতে চায় আমাকে।  সব সময় উৎসাহিত করে। ভালো পরামর্শ দেয়। এইতো…খেলার ভেতরে, বাইরে টিপস দেয়।  সাকিব ভাইও হেল্পফুল। স্পিনার হিসেবে কোন জায়গায় বল ফেললে ভালো হবে তা বুঝিয়ে দেন। তার বোলিং দেখে অনেক সময় আমি রিড করতে পারি যে আমার কি করা লাগবে।

আপনার অস্ত্রের ভান্ডার বেশ সীমিত।  বড় টার্ণ করাতে পারেন না।  দুসরা নেই।  ক্যারাম বল নেই।  নিখুঁত লাইন ও লেন্থ আপনার ভরসা।  এতো স্বল্প অস্ত্র নিয়ে বোলিংয়ে লড়াইয়ের সাহস পান কোথা থেকে?

মেহেদী হাসান মিরাজ: আমার কাছে মনে হয়, আমি কিভাবে মাঠে পারফর্ম করবো সেই মানসিক শক্তিটা আমার থাকতে হবে। আপনি যখন মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী হোন কিংবা চিন্তা করেন আমি পারবোই তাহলে যেকোনো কন্ডিশনেই আপনি পারবেন।  কিন্তু আপনি যদি মানসিকভাবে পিছিয়ে থাকেন, তখন অনেক কিছু থাকা সত্ত্বেও কিন্তু আপনি কিছু করতে পারবেন না।  আমি সব সময় চিন্তা করেছি যে ইংল্যান্ডে আমাকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। তারপরও আমাকে সেই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। ইকোনমি ভালো থাকতে হবে। তাহলে হয়তো সফল হবো।

আপনার চোখে কঠিন প্রতিপক্ষ?

মেহেদী হাসান মিরাজ: ইংল্যান্ড কন্ডিশনে স্পিনারদের বিপক্ষে প্রতিটি ব্যাটসম্যান ডমিনেট করেছে।  আমার কাছে মনে হয়, প্রত্যেকটা ব্যাটসম্যান এখানে সহজে ব্যাটিং করেছে।  ওরা সব সময় বাউন্ডারি খোঁজে। আমি চেষ্টা করেছি সেটা নামিয়ে রাখতে এবং সিঙ্গেল রান দিতে।  কোনো ব্যাটসম্যানকে কঠিন মনে হয়নি কারণ আমি নিজেকে ওভাবে তৈরি করেছি। মনোবল শক্ত রেখেছি।  সব সময় নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলেছি।  এজন্য কোনো ব্যাটসম্যানকে শক্তশালী মনে হয়নি নিজের কাছে।  এরকম চিন্তায় বোলিং করে সফলতা পেয়েছি।  মাথায় ছিল যত বড় ব্যাটসম্যানই হোক আমি আগ্রাসন দেখানোর করার চেষ্টা করবো।  এটা আমার জন্য সহজ হয়ে গেছে।

বিশ্বকাপে আপনার সেরা উইকেট?

মেহেদী হাসান মিরাজ: ফাফ ডু প্লেসি

সেরা বোলিং কাদের বিপক্ষে?

মেহেদী হাসান মিরাজ: পাকিস্তান

ভারতের বিপক্ষে হারের মধ্য দিয়ে আমাদের বিশ্বকাপের যাত্রা শেষ হয়েছিল।  ওই সময়টায় আপনি ড্রেসিংরুমে ছিলেন।  কেমন ছিল ওই পরিবেশটা?

মেহেদী হাসান মিরাজ: অবশ্যই এটা আমাদের জন্য কষ্টকর ছিল। সবার মন খারাপ ছিল।  একটা বড় টুর্নামেন্ট খেলতে এসেছি।  সবার একটা প্রত্যাশা থাকে।  নিজেদের স্বপ্ন থাকে।  স্বপ্ন যখন পূরণ না হয় তখন নিজেদেরই তো সব থেকে বেশি খারাপ লাগে।  খেলোয়াড় হিসেবে সবার মন খারাপ ছিল।  এখন এগিয়ে যেতে হবে।  এটা নিয়ে বসে থাকলে সামনের ফলও খারাপ হবে।  এটাই জীবন। এভাবেই এগিয়ে যেতে হবে এবং পারফর্ম করতে হবে।

লর্ডসে খেলার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

মেহেদী হাসান মিরাজ: সবার স্বপ্ন থাকে লর্ডসে খেলার। আমারও স্বপ্ন ছিল এখানে খেলার।  স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে, কারণ বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডের প্রথম বলটা আমি করেছি।  এটা অন্যরকম অর্জন হয়ে থাকবে।

দলের কম্পিউটার অ্যানালাইস্ট শ্রীনিবাসন চন্দ্রশেখরের সঙ্গে কি আপনার নিয়মিত আলাপ হয়।  সম্প্রতি তার সঙ্গে কি নিয়ে বসেছিলেন?

মেহেদী হাসান মিরাজ: আমি সব সময় ওর সাথে বোলিং নিয়ে কথা বলি, আমার বোলিং খারাপ হচ্ছে কোথায়? যেদিন ভালো হয় সেদিনও বলি, খারাপ যেদিন যায় সেদিনও বলি।  আগের ম্যাচগুলোর সব ভিডিও ওর থেকে নেওয়ার চেষ্টা করি।  ভালো বোলিংয়ের ভিডিও নিয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ট্রাই করি।  আর খারাপ বোলিংয়ের গুলো নিয়ে ভুলগুলো শুধুরে নেই।

বিশ্বকাপে আপনার সবথেকে বড় প্রেরণা কে ছিলেন?

মেহেদী হাসান মিরাজ: সবাই আমাকে সাপোর্ট করেছে। বিশেষ কারো নাম বলতে পারবো না।  সবাই সবাইকে সাপোর্ট করেছে।  টিম মেট হিসেবে সবাই অনুপ্রাণিত করেছে।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা