• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

অপচয় করা হারাম

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০১৯  

ইসলামের মূল সৌন্দর্যই হলো মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা। ইসলাম যেভাবে অপচয়কে নিষেধ করেছে তেমনি কৃপণতাকেও নিষেধ করে। এ জন্য কুরআন সুন্নাহ মুসলিমদের পানাহার, পরিচ্ছদ, বাসস্থান, সৌর্ন্দয, যোগাযোগের মাধ্যম, বিবাহ-শাদীতে সব কিছুতেই চিহ্নিত করে দিয়েছে। এ জন্যই একজন মুসলিম খরচ করার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিধানাবলী পালন করা আবশ্যক : অর্থনৈতিক দিক যেন মুমিনদের গ্রাস করে না ফেলে, বরং মুমিন ব্যক্তি তার আকিদা ও মুমিনের চরিত্র অনুযায়ী তার অর্থনীতি পরিচালনা করবে। মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে সম্পদ ব্যয় করা; অহঙ্কার বর্জন করা; হারাম থেকে দূরে থাকা; নিয়মতান্ত্রিকতা মেনে সম্পদ ব্যয় করা; সচ্ছলতার সময় অসচ্ছল সময়ের জন্য সম্পদ জমা করে রাখা। একজন মুসলমান শরিয়াহ্ প্রণীত সীমারেখার মধ্যেই তার সম্পদ ব্যয় করবে।

আর এটি ওঠা-নামা করবে বৈধ ও হারামের মধ্যে। এটি হলো বৈধতার পর্যায়ে। যা অপচয় ও কৃপণতার মাঝামাঝি অবস্থান করা। সৌর্ন্দয ও একেবারেই পরহেজগারিতার মধ্যবর্তী অবস্থান কিন্তু বেশির ভাগ লোক এই নীতি গ্রহণ করে না। তারা সৌর্ন্দযের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। এ ক্ষেত্রে অনেকে অপচয়ও করে ফেলে। অথচ মধ্যমপন্থা অবলম্বন করাও আল্লাহর বান্দাদের একটি গুণ। আল্লাহ বলেন, এবং তারা যখন ব্যয় করে তখন অযথা ব্যয় করে না, কৃপণতাও করে না এবং তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী। নবী সা: বলেন, তোমরা খাও, পান করো, দান-সদকা করো, তবে অহঙ্কার ও অপচয় ব্যতীত।

সৌর্ন্দয অবলম্বন করা অবশ্যই বৈধ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, এবং আপনার পালনকর্তার নিয়ামতের কথা প্রকাশ করুন। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, হে বনি আদম, তোমরা সাজসজ্জা করে নাও প্রত্যেক নামাজের সময়, আর খাও পান করো অপব্যয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপব্যয়ীদের পছন্দ করেন না। নবী সা: বলেন, আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের মধ্যে তাঁর দেয়া নিয়ামতের প্রভাব দেখতে ভালোবাসেন। হাদিসটির সনদ হাসান সহিহ্। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই লক্ষণীয় যে, সৌর্ন্দয যেন সীমা ছাড়িয়ে না যায়। যেন অপচয়ের পর্যায়ে না পড়ে। দুনিয়া বিমুখতা : এটি একটি প্রশংসনীয় গুণ। খুব কম মানুষই এ গুণে গুণাম্বিত। এই গুণে গুণাম্বিত ছিলেন নবী রাসূলগণ আ:, অতঃপর পূর্বেকার অনেক আলেম আর পরবর্তী যুগের খুব কমসংখ্যক লোক।

এই কাজে অবশ্যই নিজের চাহিদা ত্যাগ করতে হয়, নিজের উপরে অন্যকে প্রাধান্য দিতে হয়। আর অর্থনীতির ক্ষেত্রে তা অনেক কল্যাণকর। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা মুহাজিরদের আগমনের আগে মদিনায় বসবাস করেছিল এবং ঈমান এনেছিল তারা মুহাজিরদের ভালোবাসে, মুহাজিরদের যা দেয়া হয়েছে তজ্জন্য তারা অন্তরে ঈর্ষা পোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদের অগ্রাধিকার দান করে। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত তারাই সফলকাম। কৃপণতা করা হারাম। কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহর শত্রু এমনকি তার নিজেরও শত্রু এবং প্রত্যেক ওই জিনিসের শত্রু যা মানুষের উপকার করে। এভাবে যে সে নিজের প্রয়োজনও পূরণ করে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা কৃপণতা করছে তারা নিজেদেরই প্রতি কৃপণতা করছে। নবী সা: বলেন, তোমরা কৃপণতা থেকে দূরে থাকো, কারণ তোমাদের পূর্ববর্তীদের অনেকেই কৃপণতার জন্য ধ্বংস হয়েছে। (শয়তান) তাদের কৃপণতার আদেশ দিত আর তারা কৃপণতা করত, সে তাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার আদেশ দিলে তারা তা ছিন্ন করত এবং সে তাদের পাপাচারে লিপ্ত হতে নির্দেশ দিলে তারা তাতে লিপ্ত হতো।

জীবনযাপনের সব ক্ষেত্রেই অপচয় ও অপব্যয় করা হারাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, এবং অপব্যয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপব্যয়ীদের পছন্দ করেন না। অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, এবং কিছুতেই অপব্যয় করো না। নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। নবী সা: বলেন, আমার উন্মাতের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তি, যারা বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার খায় এবং বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরিধান করে আর লম্বা লম্বা কথা বলে বেড়ায়। এ জন্য সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে ইসলাম সুনির্দিষ্ট নিয়ম বেঁধে দিয়েছে। যেমন : বিলাসবহুল জীবনযাপন না করা। অর্থাৎ দুনিয়ার চাকচিক্য ও বিলাসিতাতে গা ভাসিয়ে না দেয়া। এ ধরনের বিলাসিতাকে ইসলাম সমর্থন করে না বরং নিন্দা করে। আর বিলাসিতার কারণেই আল্লাহর আজাব-গজব নেমে আসে।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা