• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দোয়া এবং ইসলামে নৈতিকতা

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ ২০২৩  

চাচা আবু তালেব ও স্ত্রী খাদিজা (রা.) এই দুই প্রিয় মানুষকে হারিয়ে দুঃখ, দুশ্চিন্তা ও মনোবেদনায় কাতর হয়ে পড়েন নবীজি (সা.)। অন্যদিকে কাফেররা প্রকাশ্যে রাসূল (সা:)-কে কষ্ট দিতে শুরু করল। আবু তালেবের ইন্তেকালের পর কোরাইশরা নবী (সা.) এর ওপর এত বেশি নির্যাতন চালিয়েছিল, যা তার (আবু তালেব) জীবদ্দশায় তারা চিন্তাও করতে পারেনি।

রাসূলুল্লাহ (সা.) আশ্রয়ের খোঁজে তায়েফ চলে যান। কিন্তু সেখানে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হয়ে ওঠে। তিনি সেখানে কোনো সাহায্যকারী পেলেন না এবং নবীজি (সা.)-কে কেউ আশ্রয়ও দিলো না। এমনকি একজন লোকও দীনের দাওয়াত কবুল করল না। বরং তারা তাকে আরো বেশি কষ্ট দিলো। এত কষ্ট তিনি ইতোপূর্বে তার জাতির লোকদের থেকেও ভোগ করেননি। তার সঙ্গে ছিলেন তারই মুক্ত করা ক্রীতদাস জায়েদ ইবনে হারেসা (রা.)।

রাসূল (সা.) তায়েফে ১০ দিন অবস্থান করেন। এ সময়ে তিনি তায়েফের সকল গোত্রীয় সর্দারদের কাছে দীনের দাওয়াত দেন। কিন্তু সবাই একই কথা বলল যে, তুমি আমাদের শহর থেকে বেরিয়ে যাও। শুধু এ কথা বলেই ক্ষান্ত হয়নি; বরং তারা দুষ্ট বালকদের তার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। ফেরার পথে তায়েফের মূর্খ ও দুষ্টরা তার পিছে লাগল। তারা আল্লাহর রাসূলকে গালি দিচ্ছিল, তার পেছনে হৈচৈ করছিল এবং পাথর নিক্ষেপ করছিল। পাথরের আঘাতে নবীজি (সা.) এর শরীর থেকে রক্ত ঝরে পায়ের জুতায় জমাট বেধে গেলো। জায়েদ ইবনে হারেসা (রা.) প্রিয়নবী (সা:)-কে রক্ষা করছিলেন। একটি পাথর এসে তার মাথায় লেগে গেল। এতে তার মাথা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেল। নবীজি (সা.) তায়েফ থেকে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে মক্কায় ফিরে আসলেন।

যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তায়েফ ছাড়ছিলেন তখন আল্লাহর নির্দেশে ফেরেশতা এসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে তায়েফবাসীদের পাহাড়চাপা দিয়ে ধংস করে দেওয়ার অনুমতি চাইলেন। এই দিনের ঘটনা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি আবদে ইয়ালিস ইবনে আবদে কুলালের সন্তানদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলাম; কিন্তু তারা আমার দাওয়াত গ্রহণ করেনি। আমি দুঃখ-কষ্ট ও মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় কারোন সাআলেব নামক স্থানে পৌঁছে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। সেখানে মাথা তুলে দেখি মাথার ওপরে এক টুকরা মেঘ, ভালোভাবে তাকিয়ে দেখি সেখানে জিবরাইল (আ.)। তিনি আমাকে বলেন, আপনার জাতি আপনাকে যা যা বলেছে, আল্লাহ সবই শুনেছেন, আপনার কাছে পাহাড়ের ফেরেশতাদের পাঠানো হয়েছে। এরপর পাহাড়ের ফেরেশতারা আমাকে আওয়াজ দিলেন, সালাম জানালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ কথা সত্যি, আপনি যদি চান, তাহলে আমরা ওদের দুই পাহাড়ের মধ্যে পিষে দেব। আমি বললাম, না, আমি আশা করি, মহান আল্লাহ ওদের বংশধরদের মধ্যে এমন মানুষ সৃষ্টি করবেন, যারা শুধু আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না।’ (সহিহ বুখারি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৫৮)

কোনো কোনো বর্ণনায় ফেরার পথে রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর দরবারে এই প্রসিদ্ধ দোয়াটিও করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে স্বীয় দুর্বলতা, (মানুষকে বুঝাতে) আমার কলা-কৌশলের স্বল্পতা এবং মানুষের কাছে আমার মূল্যহীনতার অভিযোগ করছি। হে সর্বাধিক দয়ালু! আপনি দুর্বলদের প্রভু, আমারও প্রভু। আপনি আমাকে কার কাছে ন্যস্ত করছেন? আপনি কি আমাকে দূরের এমন অচেনা কারো হাতে ন্যস্ত করছেন, যে আমার সঙ্গে কঠোর ব্যবহার করবে? নাকি কোনো শত্রুর হাতে সোপর্দ করছেন, যাকে আপনি আমার বিষয়ের মালিক করে দিয়েছেন? আপনি যদি আমার উপর রাগান্বিত না হন; তাহলে আমি কোনোকিছুই পরওয়া করি না। তবে নিঃসন্দেহে আপনার ক্ষমা আমার জন্য সর্বাধিক প্রশস্ত ও প্রসারিত। আমি আপনার সেই চেহারার আলোর আশ্রয় চাই, যা দ্বারা অন্ধকার দূরিভূত হয়ে যায় এবং যা দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতের সকল বিষয় সংশোধন হয়। এই কথার মাধ্যমে আমার উপর আপনার ক্রোধ নেমে আসা হতে অথবা আমার উপর আপনার অসন্তুষ্টি নাজিল হওয়া থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই আমার সকল প্রচেষ্টা। আপনার সাহায্য ছাড়া অন্যায় কাজ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয় এবং আপনার তাওফিক ও শক্তি ছাড়া আপনার আনুগত্য করা অসম্ভব।’

হজরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দোয়াটিও করতেন এবং সাহাবিগনকে এই দোয়া করতে উৎসাহিত করতেন- ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে হেদায়েত (পরিশুদ্ধ জীবন) কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা পরহেজগারি কামনা করি এবং আপনার কাছে সুস্থতা তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ-সামর্থ্য (আর্থিক স্বচ্ছলতা) কামনা করি।’

ধর্ম মানুষের কল্যাণের জন্য এবং অকল্যাণ থেকে পরিত্রাণের জন্য। ইসলামি বিধানমতে, মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য দ্বিবিধ। যথা- (১) ‘হক্কুল্লাহ’ বা আল্লাহর প্রতি কর্তব্য এবং (২) ‘হক্কুল ইবাদ’ বা বান্দার প্রতি করণীয়।

মানুষের প্রতি মানুষের হক বা ‘হক্কুল ইবাদ’ তথা বান্দার হক তিনটি। অর্থাৎ, প্রত্যেক মানুষের জন্য অন্য মানুষের তিনটি জিনিস সংরক্ষণ করতে হবে। তা হলো- (১) সব মানুষের জীবন, (২) সম্পদ ও (৩)সম্মান।

প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ভাষণে বলেছিলেন, ‘এই মক্কা নগরী যেমন সম্মানিত, এই আরাফাতের প্রান্তর যেমন মর্যাদাবান, এই হজের দিবস যেমন ফজিলতপূর্ণ, এই কাবাঘর যেমন পবিত্র; প্রত্যেক মানুষের জান, মাল ও ইজ্জত অনুরূপ সম্মানীয় ও পবিত্র এবং তা অপরের জন্য হারাম ও নিষিদ্ধ।’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া)।

উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিষয় বা বিবরণ অসম্পূর্ণ রাখা অথবা আংশিক পরিবর্তন করা এবং সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণ ও সত্য গোপন করা ইসলামে হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা জেনেশুনে সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশিয়ো না, আর সত্যকে গোপন কোরো না।’ (সূরা: ২ বাকারা, আয়াত: ৪২)

ইসলামে মিথ্যাকে সব পাপের জননী বলা হয়েছে। প্রতারকেরা নবীজি (সা.) এর উম্মত নয় বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। (মুসলিম: ১০১)

হে মহান আল্লাহ-রাব্বুল আলামিন, আপনি আমাদেরকে মিথ্যা আর প্রতারণা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা