• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

বিপদ-মুসিবতের মোকাবিলায় করণীয়

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

বস্তুত সবর ও শোকরের গুণদ্বয় শুধু মোমিনদের পক্ষেই লালন করা সম্ভব। যেহেতু মোমিন বিশ্বাস করে যাবতীয় অর্জনের ক্ষমতা আল্লাহই তাকে দিয়েছেন, তখন সে কৃতজ্ঞ হয়। আর যাবতীয় বিপদ-মুসিবত দয়াবান ও পরম দয়ালু তার মালিক আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে, তখন সে ধৈর্যধারণ করে; ভেঙে পড়ে না। ভেঙে পড়ে শয়তানকে হতাশা জাগানোর সুযোগ দেয় না। রাসুল (সা.) বলেছেনÑ ‘মোমিনের বিষয়টি বিস্ময়কর! তার সব বিষয় কল্যাণকর। এটা তো শুধু মোমিনের ক্ষেত্রেই ঘটে। আনন্দকর কিছু ঘটলে সে শুকরিয়া আদায় করে, তখন তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর কোনো বিপদে আক্রান্ত হলে সে সবর করে, ফলে তা-ও তার জন্য কল্যাণকর হয়ে যায়।’ (মুসলিম : ২৯৯৯)

মোমিন ব্যক্তি বিশ্বাস করেনÑ এ পৃথিবী পরীক্ষাস্থল। পরম সুখ ও নিরেট শান্তি শুধু জান্নাতে। আল্লাহ তাকে পরীক্ষা করার জন্যই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিপদাপদ, রোগ-শোক ও দুঃখ-কষ্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। পরীক্ষার পর পরীক্ষার মাধ্যমে পরম সুখের জন্য তাকে তৈরি করেন। যেখানে কোনো মৃত্যু নেই, কোনো দুঃখ নেই, কষ্ট নেই। আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন তাকেই পরীক্ষার মুখোমুখি করেন। রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই মহাবিপদের প্রতিদানও মহান। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা কোনো কওমকে ভালোবাসলে তাদের পরীক্ষায় ফেলেন। যদি তারা সন্তুষ্ট থাকে; তবে তাদের জন্য সন্তষ্টিই রয়েছে। আর যদি তারা অসন্তুষ্ট হয়; তবে তাদের জন্য অসন্তুষ্টি রয়েছে।’ (তিরমিজি : ২৩৯৬, ইবনে মাজাহ : ৪০৩১)।
তাই তো যুগে যুগে মহাপরীক্ষার মুখোমুখি হয়েছেন আল্লাহর প্রিয় নবী-রাসুলরা, আলেম-ওলামা, দাঈরা এবং দ্বীনদার বুজুর্গরা।
আখেরাতের জন্য শাস্তি পুঞ্জীভূত করে রাখার চেয়ে দুনিয়ায় বিপদাপদ দিয়ে কিছু শাস্তি লাঘব করা বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়া। আল্লাহ যার ভালো চান অনেক সময় তাকে দুনিয়ায় শাস্তি দেন, যাতে দুনিয়াতেই তার পাপ মোচন হয়ে যায় কিংবা নেকি বৃদ্ধি হয়। গাফেল অন্তর যেন সতর্ক হয়। গোনাহগার যেন তওবা করে, আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। পাপী যেন সিজদায় পড়ে তাঁর কাছে কান্নাকাটি করে, ক্ষমা চায়। হাদিসে এসেছে, ‘যদি আল্লাহ কোনো বান্দার ভালো চান, তাহলে দুনিয়াতেই তাকে শাস্তি দেন। আর যদি তার মন্দ চান, তাহলে তার গোনাহটিকে ধরে রাখেন, যাতে কেয়ামতের দিন পূর্ণভাবে সেটার প্রাপ্য তাকে দিতে পারেন।’ (তিরমিজি : ২৩৯৬)।
বিপদাপদের প্রথম ধাক্কাতেই মোমিন অন্তর থেকে ঈমানের সঙ্গে পড়ে ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন’ (নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর মালিকানাধীন এবং আমরা আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব)। এর মাধ্যমে মোমিন হতাশা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। মোমিন বিশ্বাস করে, এ মহাবিশ্বের সবকিছুর মালিকানা আল্লাহর। সুতরাং আমরা তাঁর অনুগত দাস হওয়াই বাঞ্ছনীয় এবং তাঁর কাছে প্রার্থনা করাই বুদ্ধিদীপ্ত; যেন তিনি ঘটে যাওয়া ক্ষতি পূরণ করে দেন ও এর উত্তম প্রতিস্থাপন দান করেন। কোরআনে এসেছে, ‘তারা কোনো মুসিবতে অক্রান্ত হলে বলেÑ ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।’ (সূরা বাকারা : ১৫৬)। 
হাদিসে এসেছে উম্মে সালামা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে বলতে শুনেছি, কোনো মুসলিম যদি মুসিবতে আক্রান্ত হয়ে আল্লাহ তাকে যা বলার নির্দেশ দিয়েছেন তা বলেÑ ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা জুরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফ লি খাইরান মিনহা’ (নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর মালিকানাধীন এবং আমরা আল্লাহর কাছে ফিরে যাব। হে আল্লাহ! আমার মুসিবতের কারণে আমাকে সওয়াব দিন এবং আমাকে এর চেয়ে উত্তম বিকল্প দান করুন), তখন আল্লাহ তাকে ওই মুসিবতের উত্তম বদলা এবং আগের চেয়ে উত্তম বিকল্প দান করেন।’ (মুসলিম : ৯১৮)। এ মহিলা সাহাবি যখন তার স্বামীকে হারিয়ে এ দোয়া করেছিলেন, এ দোয়ার ফলে পরবর্তী সময়ে তিনি স্বামী হিসেবে আল্লাহর রাসুলকে পেয়েছিলেন। যিনি ছিলেন আবু সালামার উত্তম প্রতিস্থাপন।
বিপদাপদ থেকে বাঁচার জন্য কিংবা মুক্ত থাকার জন্য মোমিন সব ধরনের উপায়-উপকরণ গ্রহণ করে। এটি তার তকদিরের ওপর বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। বরং সব সহায়-সম্বল গ্রহণ করেই মোমিন আল্লাহর ওপর নির্ভর করে। যেহেতু কারণের ভিত্তিতে ফল দেওয়া এটা আল্লাহর চিরায়ত নিয়ম। এটাকে বলা হয়Ñ ‘তকদিরে কাউনি বা বিশ্ব পরিচালনায় আল্লাহর সাধারণ নিয়ম।’ এ জন্য ওমর (রা.) প্লেগগ্রস্ত এলাকায় প্রবেশ করেননি, বরং বলেছেনÑ ‘আমরা আল্লাহর তকদির থেকে আল্লাহর তকদিরের দিকে পলায়ন করছি।’ কিন্তু কোনো কিছু ঘটে যাওয়ার পরে মোমিন বলবে নাÑ ‘যদি’ এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতো এ বিপদটি ঘটত না। ‘যদি’ শয়তানের জন্য পথ খুলে দেয়। বরং আমরা তকদিরের ওপর এভাবে বিশ্বাস রাখব যে, যা ঘটার ছিল সেটাই ঘটেছে। হাদিসে এসেছেÑ ‘জেনে রাখ, তুমি যা পেয়েছ বা তোমার ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, তা তোমার ক্ষেত্রে না ঘটার ছিল না। আর যা তুমি পাওনি বা যা তোমার ক্ষেত্রে ঘটেনি, তা তোমার ক্ষেত্রে ঘটার ছিল না।’ (আবু দাউদ : ৪৭০১)।
ঘটনার আলোচনা-পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ হতে পারে। সেটা ভবিষ্যতে উত্তম উপায়-উপকরণ গ্রহণ করার পরামর্শ ও প্রস্তাবনা হিসেবে। অতীতের ঘটনাকে রোধ করার আক্ষেপ থেকে নয়।
মোমিন বিশ্বাস করে বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করলে এর প্রতিদান অফুরন্ত ও অগণিত। মোমিনদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর ধৈর্যধারণকারীদের বিনা হিসাবে তাদের পুরো পুরস্কার দেওয়া হবে।’ (সূরা জুমার : ১০)। 
বস্তুত সবর ও শোকরের গুণদ্বয় শুধু মোমিনদের পক্ষেই লালন করা সম্ভব। যেহেতু মোমিন বিশ্বাস করে যাবতীয় অর্জনের ক্ষমতা আল্লাহই তাকে দিয়েছেন, তখন সে কৃতজ্ঞ হয়। আর যাবতীয় বিপদ-মুসিবত দয়াবান ও পরম দয়ালু তার মালিক আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে, তখন সে ধৈর্যধারণ করে; ভেঙে পড়ে না। ভেঙে পড়ে শয়তানকে হতাশা জাগানোর সুযোগ দেয় না। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মোমিনের বিষয়টি বিস্ময়কর! তার সব বিষয় কল্যাণকর। এটা তো শুধু মোমিনের ক্ষেত্রেই ঘটে। আনন্দকর কিছু ঘটলে সে শুকরিয়া আদায় করে, তখন তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর কোনো বিপদে আক্রান্ত হলে সে সবর করে, ফলে তা-ও তার জন্য কল্যাণকর হয়ে যায়।’ (মুসলিম : ২৯৯৯)। 

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা