• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

এই অচলাবস্থা আর কতদিন?

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

নগরমুখি মানুষের স্রোত আর অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি রাজধানীর যানজটকে আরো প্রকটতর করে তুলছে। কোনো সভা-সমাবেশ হলে তো কথাই নেই। সেদিনের জন্য রাজধানী স্থবির হয়ে থাকছে। অদ্ভুত এক নির্বিকারত্ব দেখা যাচ্ছে এক্ষেত্রে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন?

দুঃখজনক হচ্ছে দিন দিন যানজট বাড়ছে বৈ কমছে না। বেশ কয়েকদিন ধরে রাজধানী প্রায় স্থবির হয়ে থাকছে। থেমে চলছে সব ধরনের যানবাহন। মানুষের দুর্ভোগের কোনো অন্ত নেই। কিন্তু এ থেকে পরিত্রাণের সহসা কোনো পথ দেখা যাচ্ছে না। উন্নয়ন অগ্রগতিতে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকার। কিন্তু অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র রাজধানী ঢাকাকে অচল রেখে কোনো উন্নয়নই আখেরে গতি পাবে না। উন্নয়ন অগ্রগতির সর্বাগ্রে রাখা উচিত যানজটমুক্ত সচল ঢাকার মহাপরিকল্পনা।

যানজট নিয়ে কথা কম হয়নি। এবার সময় এসেছে কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়ার। প্রাইভেট গাড়িকে নিরুৎসাহিত করে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। মেট্রোরেল হচ্ছে। বাস র্যাপিড ট্রানজিট হচ্ছে। কিন্তু এর কাজ এগাচ্ছে খুব ধীর গতিতে। তাছাড়া সীমিত রাস্তায় এর কাঙ্খিত ফল কি আদৌ পাওয়া যাবে? পূর্বাচল উপ-শহর হচ্ছে হবে করে প্রায় বিশ বছর হয়ে গেল। পরিকল্পিত এই উপ-শহরটি চালু করা গেলেও ঢাকার ওপর চাপ কমতো। এই বিষয়টি সক্রিয়ভাবে ভাবা উচিত

উন্নয়ন অগ্রগতির সঙ্গে গাড়ির সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু বাস্তার বেহাল দশা যদি পূর্বাবস্থায় থাকে তাহলে গাড়ি-ঘোড়া বাড়লেই কী লাভ। প্রতিদিনই রাস্তায় নামছে অসংখ্য গাড়ি। এক হিসাবে দেখা গেছে, সারা দেশে যত ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করে তার ৭৮ শতাংশই চলে ঢাকার রাস্তায়।কিন্তু সে অনুযায়ী রাস্তাঘাট কি বাড়ছে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কি নিশ্চিত হচ্ছে। ট্রাফিক ব্যবস্থা কি আধুনিকায়ন হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা তো কম হলো না। অটো সিগন্যাল বাতি লাগানো হল। কদিন পরই সব নষ্ট। আবার ম্যানুয়াল। হাতের ইশারায় গাড়ি থামে আর চলে। একই রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের গাড়ি। রিক্সা, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি। জ্যামে পড়লে সবারই একই দশা। যদিও গুরুত্বভেদে জরুরি ভিত্তিতে কিছু গাড়ি চলাচলের কথা। কিন্তু রাস্তা তো একই। কিভাবে চলবে? ব্যতিক্রম দেখা যায় শুধু ভিআইপি, ও ভিভিআইপিদের বেলায়। তখন রাস্তা ফাঁকা হয়ে যায় মুহূর্তেই। আর এর জের টানতে নগরবাসীকে দুর্বিষহ যানজটে আটকা থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

সাম্প্রতিক এক গবেষণা রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, যানজট ও যানবাহনের ধীরগতির কারণে বছরে ক্ষতি হচ্ছে ১১.৪ বিলিয়ন ডলার বা লক্ষ কোটি টাকা। শুধু ধীরগতির কারণেই বছরে ক্ষতি হচ্ছে ৩ হাজার কোটি টাকা। গবেষণা রিপোর্ট অনুসারে, যানজটের কারণে ঢাকায় প্রতিদিন ৮.১৬ মিলিয়ন কর্মঘণ্টা সময় নষ্ট হচ্ছে। শুধু উৎপাদনশীলতা বা আর্থিক মানদণ্ডে এই ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ সম্ভব নয়। দেশ ও নগরবাসীর উপর ঢাকার যানজটের অর্থনৈতিক, সামাজিক-মনস্তাত্বিক ক্ষয়ক্ষতি আরো ব্যাপক ও সুদূরপ্রসারি-এই বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে।

যানজট নিয়ে কথা কম হয়নি। এবার সময় এসেছে কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়ার। প্রাইভেট গাড়িকে নিরুৎসাহিত করে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। মেট্রোরেল হচ্ছে। বাস র্যাপিড ট্রানজিট হচ্ছে। কিন্তু এর কাজ এগাচ্ছে খুব ধীর গতিতে। তাছাড়া সীমিত রাস্তায় এর কাঙ্খিত ফল কি আদৌ পাওয়া যাবে? পূর্বাচল উপ-শহর হচ্ছে হবে করে প্রায় বিশ বছর হয়ে গেল। পরিকল্পিত এই উপ-শহরটি চালু করা গেলেও ঢাকার ওপর চাপ কমতো। এই বিষয়টি সক্রিয়ভাবে ভাবা উচিত। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে মুক্ত হয়ে সময় অনুযায়ী সব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। এখন আর একদণ্ড সময় নষ্ট করার মত সময় নেই। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ করেও যানজট কমানো যায়। সবকিছু ঢাকাতেই হতে হবে-এই পুরনো ধ্যানধারণা থেকেও বেরিয়ে আসতে হবে। শরীরের সকল মাংসপিণ্ড মুখে চলে আসার নাম যেমন স্বাস্থ্য নয় তেমনি রাজধানীতেই সবকিছু করার নামও উন্নয়ন নয়। যানজটে জট পাকিয়ে যাচ্ছে সবকিছুর। এটি আমাদের নীতি নির্ধারকরা যতো তাড়াতাড়ি বুঝবেন দেশ ও জাতির জন্য তা ততোই মঙ্গলজনক হবে।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা