• শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

  • || ০৮ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার বাইপাস সড়ক, সুফল পাচ্ছে ২২ লাখ মানুষ

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০২৩  

জেলা শহরকে যানজটমুক্ত করতে সাতক্ষীরার মানুষের প্রাণের দাবি ছিল বাইপাস সড়ক। সাতক্ষীরার মানুষের দাবি পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাইপাস সড়ক নির্মাণ করে তিনি সাতক্ষীরার মানুষের প্রাণের দাবি মিটিয়েছেন। তার সুফল পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। 

শহরের যানজট নিরসনে বাইপাস সড়ক নির্মাণের দাবি উঠতে থাকে ৯০ এর দশকের প্রথম দিকে। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি এবং বিভিন্ন সময়ে সাতক্ষীরার উন্নয়নে গঠিত বিভিন্ন নামের সংগঠন এই দাবি জানাতে থাকে। 

এক পর্যায়ে শহরে যানজট বাড়তে থাকায় এবং ১৯৯৬ সালে ভোমরা স্থল বন্দর চালু হওয়ার পর বাইপাস নির্মাণের এই দাবি আরো জোরালো হয়ে উঠে। 

এর প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ২৩ জুলাই শ্যামনগরে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরায় বাইপাস সড়ক নির্মাণের ঘোষণা দেন। এর কিছু দিন পর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ একনেকে ভোমরা স্থল বন্দর সড়ক থেকে বিনেরপোতা পর্যন্ত ২২ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বাইপাস সড়কের জন্য ১১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। পরবর্তীতে সেটি সংশোধন করা হয় এবং ১৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে লাবসা পলিটেনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন সড়ক হয়ে বিনেরপোতা বিসিক শিল্প নগরী পর্যন্ত ১২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার বাইপাস সড়ক নির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। 

তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সাতক্ষীরা ১ আসনের সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান জানান, ভোমরা স্থল বন্দর সড়কের সঙ্গে যুক্ত করেই বাইপাস সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। কারণ জেলা পর্যায়ের সড়কে বাইপাসের জন্য এত বিপুল পরিমাণ টাকা পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ ছিল। তাই বাইপাস সড়ক ভোমরা স্থল বন্দর জাতীয় মহাসড়ক হওয়ায় তার সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। 

তিনি বলেন, টাকা পাওয়া যাবে কি যাবে না সেটা মাথায় রেখেই ভোমরা স্থল বন্দরের বিষয়টি হাইলাইট করা হয়। 

জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৯৯০ সাল থেকে সাতক্ষীরাবাসী বাইপাস সড়কের জন্য আন্দোলন করে আসছে। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরায় এসে বাইপাস সড়ক নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকাতায় ২০১০ জেলা প্রশাসনের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সে অনুযায়ী আলিপুর চেকপোস্ট এলাকা থেকে সড়কটি মেডিকেল কলেজ ও সিটি কলেজের পেছন দিয়ে কাশেমপুর গ্রাম হয়ে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন সড়কে গিয়ে মিশে যাবে। সেখান থেকে মুথরাপুর মোড় হয়ে খেজুরডাঙ্গি হয়ে বিনেরপোতা মেঘনা মোড়ে গিয়ে খুলনার সড়কের সাথে মিশে যাবে। । 

সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণে ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে একনেকের বৈঠকে ১৭৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। গত ৩১ মার্চ সাতক্ষীরা-২ আসনের এমপি মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবির উদ্বোধনের মাধ্যমে মূল সড়কের মাটির কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়। 

সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুরুল কবির জানান, ২২ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বাইপাস সড়কের জন্য ১১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রকল্পের বাইরে আলিপুর চেকপোস্ট থেকে ভোমরা স্থলবন্দর পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার দুই লেনের রাস্তা নির্মাণ করা হয়। প্রকল্পের ভোমরা সড়কের কাজ শেষ হয়েছে। ৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাইপাসের ১২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করতে পলাশপোল, কাশিমপুর, বাবুলিয়া, বাঁশঘাটা, লাবসা, মথুরাপুর, বিনোরপোতা এই ৮টি মৌজা ৯২ দশমিক ৫৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। 

সড়ক ও জনপদ বিভাগের সূত্র আরো জানায়, ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে একটি সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়। যেখানে ১২ দশমিক ৩৫০ কিলোমিটার দুই লেনের (২৪ ফুট চওড়া) সড়কের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১৭৪ কোটি টাকা। কিন্তু একনেকে ১৭৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়।

সড়কটি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের লেক থেকে শুরু হয়ে সিটি কলেজের পেছন হয়ে কাশেমপুর গ্রাম দিয়ে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন যশোর সড়কে গিয়ে মিশে যাবে। সেখান থেকে মুথরাপুর মোড় হয়ে খেজুরডাঙ্গি হয়ে বিনেরপোতা মেঘনা মোড়ে গিয়ে খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের সঙ্গে মিশে যাবে। আর এ সড়ক নির্মাণ করার জন্য ৯২ দশমিক ৫৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। 

সাতক্ষীরা সদর দুই আসনের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি ছিল মেডিকেল কলেজ। তিনি করে দিয়েছেন। বাইপাস সড়ক করে দিয়েছেন। ভোমরস্থল বন্দর আধুনিকায়নের কাজ চলমান আছে। এছাড়া জেলায় অসংখ্য রাস্তাঘাট স্কুল কলেজ মাদরাসা মসজিদ তৈরি করে দিয়েছেন। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে উন্নয়ন হয়নি। 

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর থেকে সাতক্ষীরা একের পর এক উন্নয়ন চলমান আছে। এক সময়ের অবহেলিত জেলা আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে চিহিৃত হয়েছে। কেউ কোনো দিন ভাবেনি সাতক্ষীরায় মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হবে।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা