• শুক্রবার ১০ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৭ ১৪৩১

  • || ০১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

বজ্রপাত প্রতিরোধী ও অর্থনৈতিক মূল্যে এগিয়ে তালগাছ

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৮ আগস্ট ২০২৩  

ঐ দেখা যায় তালগাছ ঐ আমাদের গাঁ” কবির এই অমর পক্তিমালা হতে আমরা সহজেই অনুভব করি তাল গাছের প্রয়োজনীয়তা, অপরিহার্যতা, গুরুত্ব আর জীবন ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি। আবার ভাদ্র মাসের তালের বোড়া না খেলে কালে পায় এমন প্রবাদ ও আমাদের জনসমাজে প্রচলিত সাহিত্য, সঙ্গীত, রম্যরচনায়, সংস্কৃতিতে, খাদ্যে তালগাছ কেবল বিশেষ স্থান দখল করেছে তা নয়, তাল বৃক্ষ সত্যিকার অর্থে জীবনের কথা বলে, প্রকৃতির রুদ্র রোষ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, প্রকৃতির হিংস্রতার প্রতিপক্ষ ঃ সর্বাপেক্ষা বজ্রপাতের প্রতিরোধি শক্তি হিসেবে তাল গাছ অনন্য অসাধারন ভূমিকা পালন করে চলেছে। বজ্রপাত প্রকৃতির শক্তি, আর এই প্রকৃতির শক্তিকে প্রতিরোধ করনে আরেক প্রকৃতির দান তালগাছ। পরিবেশ রক্ষার্থেও তালগাছের অবদান কম নয়, সাতক্ষীরার বাস্তবতায় দিনে দিনে তালগাছ হ্রাস পাচ্ছে। নগরায়ন আর মানুষ তার দৈনন্দিন প্রয়োজনে তাল বৃক্ষ নিধন করে নিজেদের অজান্তেই বড় ক্ষতিকে বরন করছে। জেলার দীর্ঘ শতশত কিলোমিটারের কাচা পাকা সড়কের ধারে অনায়াসেই তালগাছ রোপন করা সম্ভব। উপকূলীয় ভেড়িবাঁধ গুলোতেও তাল বৃক্ষ রোপনের বিকল্প নেই। তাল গাছ কেবল বজ্রপাত নিরোধ বা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে তা নয় তালগাছের অর্থনৈতিক মূল্য অপরিসীম। তালের রস, তালগুড় বা মিষ্টি, কাচাতাল এবং শাঁস, তালের পিঠা সব যেমন অর্থনৈতিক মূল্যকে এগিয়ে নেয় অনুরুপ সুস্বাদু ও রসনা তৃপ্তকে আচ্ছাদন করে। তালের পাতার পাখা গ্রামীন জনপদের অতি লোভনীয় ও উপকারী, তাল পাতার পাটি, তাল গাছের কাঠ ঘরবাড়ী নির্মানে ব্যবহৃত হয় এবং যুগের পর যুগ তা অক্ষত থাকে। তাল গাছ গ্রামীন জনপদের সাথে মিশে একাকার এবং সৌন্দর্য বিকিরন করে চলেছে। এক কথায় বলা যায় তাল গাছ গ্রামীন জনপদকে সৌন্দর্যে আর সমৃদ্ধে এগিয়ে নিয়ে গ্রামীন জনপদের অতি আলোকময় প্রতিচ্ছবিতে পরিনত হয়েছে। তাল গাছে শিল্পি পাখি বাবুই বাসা তৈরী করে সে এক অপরুপ দৃশ্য এছাড়াও অত্রজন পাখি তালগাছে আশ্রয় নিয়ে থাকে। কিন্তু ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হচ্ছে তাল গাছ আর এ কারনে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাল গাছ কেবল বজ্রপাতের প্রতিপক্ষ নয় এই বৃক্ষ ভূমিক্ষয়, ভূমি ঢস, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, ভূগর্ভস্থ পানির মজুত বৃদ্ধি করে। গত কয়েক বছর যাবৎ তালগাছের সংখ্যা অতি দ্রুততার কমতে থাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে। ৯০ থেকে ১০০ ফুট উচ্চতার বা তার কম বেশী উচ্চতা হওয়ায় বজ্রপাত অতি সহজেই তাল গাছের কাছে কাবু হয় অর্থাৎ পরাজিত হয়। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে রাস্তার দুই পাশে তাল গাছের চারা রোপনের নির্দেশ দেন। বজ্রপাত হতে রক্ষা পেতে রাস্তার দুই পাশে তাল গাছ রোপনের এমন সিদ্ধান্ত সত্যিকার অর্থে যুগান্তকারী এবং অত্যন্ত প্রশংসনীয়। গত কয়েক বছর যাবৎ সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকাতে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সুখের খবর পুলিশের পক্ষ হতে বিগত দিনে বাইপাস সড়কের দুই পাশে তাল গাছ রোপন করা হয়। বাইপাস সড়কে যে কেউ পৌছালে দৃষ্টিনন্দন আর সৌন্দর্য্যরে বহতায় দুলতে থাকা তাল গাছ এর পাতা ও গাছের সৌন্দর্য্য উপভোগ করবেন। সাতক্ষীরার বাইপাস সড়কের দুই পাশের তালগাছ বজ্রপাত রোধে কাজ করবে। জেলার প্রতিটি এলাকায় রাস্তার ধারে, পুকুর পাড়ে, পতিত জায়গায়, আগানে বাগানে তালগাছ রোপন করি সাতক্ষীরার বিশলক্ষাধীক মানুষকে বজ্রপাতের কবল হতে রক্ষা করি এবং তালের অপরাপর গুনাগুন স্বাদ ভোগ করি। এই বর্ষার সময়ই প্রকৃত সময় এবং এখনই সময়।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা