• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

বিলুপ্তির পথে সাতক্ষীরার টালি শিল্প

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২৩  

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ধস নেমেছে টালি শিল্পে। লোকসানের কারণে গত ছয় বছর বন্ধ হয়ে আছে অন্তত ৪০টি টালি কারখানা। বেকার হয়ে পড়েছেন এসব কারখানায় কাজ করা কয়েক হাজার শ্রমিক। কারখানা মালিকদের দাবি, টালি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা।
সরেজমিন দেখা যায়, ইটালিপাড়া বলে খ্যাত সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ৫২টি টালি কারখানার মধ্যে ৪০টি বন্ধ হয়ে গেছে। যে ১২টি কারখানা রয়েছে, তাও চলছে ঢিমেতালে।
কারখানার মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কলারোয়ার পালপাড়া এলাকায় অর্ধশতাধিক কারখানায় তৈরি হতো উন্নতমানের টালি। আকর্ষণীয় এসব টালি কারখানায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল পাঁচ হাজারেরও বেশি শ্রমিকের। কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা এখন বেকার। রফতানিযোগ্য এমন উন্নত দোআঁশ মাটির টালি দেশের আর কোথাও তৈরি হয় না।
এই মাটির টালিতে নোনা ধরে না বলে বিদেশের বাজারে এর চাহিদা ছিল প্রচুর। বছরে তাই ২৫ কোটি টাকারও বেশি টালি রফতানি হতো ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশে। তবে এখন সেসব অতীত। টালি এখন বিদেশে সীমিত আকারে রফতানি হচ্ছে। আর দেশের বাজারেও টালির চাহিদা কমে গেছে। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়লেও কমেছে রুপটালির দাম। এসব কারণে বিগত ৬ বছরে বন্ধ হয়েছে ৪০টি কারখানা।
টালি কারখানার মালিক মোকসেদুল হক জানান, দেশি বাজারে টালির স্থান দখল করেছে অ্যাজবেস্টার টিন। এছাড়া স্কুল-কলেজ নির্মাণে দেশি রুপটালির বাজার দখল করেছে ভারতীয় টালি।
কলারোয়ার টালি কারখানা মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি গোষ্ঠবিহারী পাল জানান, রফতানিকারকেরা পাওনা শোধ টাকা করেন না। এসব মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে কারখানা মালিকদের কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। বহু দেনদরবার করেও এসব টাকা পাওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া স্বল্পসুদে ঋণের দাবি বহুদিন করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয় না।
গোষ্ঠবিহারী আরও জানান, কাঠ-কয়লা-মাটিসহ অন্যান্য উপকরণের দাম বাড়লেও বাড়েনি রুপটালির দাম। এক যুগ আগে যে টালি বিক্রি হতো ৬ টাকায় এখনো তা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে পাঁচ টাকা থেকে ৬ টাকায়।
কলারোয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু বলেন, ‘১৫-১৬ বছর আগে এখানকার টালি বিদেশে রফতানি করে সরকার রেমিট্যান্স পেত এবং এলাকার ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হতো। মালিকদের মধ্যে ঐক্য নেই। সরকারও এদিকে নজর দেন না। তা ছাড়া যাদের কাছে টালি বিক্রি করা হয়, তাদের কাছে লাখ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। এ নিয়ে বহুবার সালিশ করেছি। তবে দেনাদাররা টাকা পরিশোধ করেন না।
সাতক্ষীরা বিসিকের (বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প করপোরেশন) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সাকলাইন বলেন, আগে ৫২টি কারখানা ছিল, এখন মাত্র ১২ জন উদ্যোক্তা টাইলস বানাচ্ছেন। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে বিসিক বদ্ধপরিকর। আমরা তাদের কথা শুনেছি, তাদের সংকট নিয়ে আমরা একটি প্রস্তাবনা প্রধান কার্যালয়ে পাঠাব। তাদের প্রশিক্ষণ, তাদের মার্কেটিং সুবিধা অথবা আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার ব্যবস্থা করব।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা