• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

দেশের সর্ববৃহৎ ইফতার মাহফিল সাতক্ষীরায়

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০২৩  

এক হাজার নয়, দুই হাজার নয়, প্রতিদিন গড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার রোজাদার একসঙ্গে ইফতার করছেন। পুরো রমজান মাসব্যাপী এ আয়োজনটি করে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশন। কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, এটিই দেশের সর্ববৃহৎ ইফতার মাহফিল। ফকির, মিসকিন, গরিব-ধনী সব শ্রেণীর মানুষ ভেদাভেদ ভুলে প্রতিদিনই অংশ নিচ্ছে এই ইফতার মাহফিলে। দূর-দূরান্ত থেকেও ইফতারের উদ্দেশ্যে রোজাদাররা ছুটে আসেন নলতা শরীফের এই বিশাল জমায়েতে। ইফতার সামগ্রী বিতরণের জন্য রয়েছে এলাকার তিন শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী যুবক।

ইফতারের তালিকায় রয়েছে ফিরনি, ছোলা ভুনা, কলা, চিড়া, খেঁজুর ও সিঙ্গাড়া রোজাদারদের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার প্যাকেট ইফতারের আয়োজন করা হয়। নলতা ওরছ শরীফের আশপাশ এলাকাসহ পাশ্ববর্তী মসজিদগুলোতে পৌছে দেওয়া হয় ইফতার।

মিশন কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিদিন তিন লাখ টাকা খরচ হয় ইফতারে। পুরো টাকাই আসে দান থেকে। আয়োজনে থাকে নলতা আহছানিয়া কেন্দ্রীয় মিশন।

১৯৩৫ সালে অভিভক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ্ নলতায় প্রতিষ্ঠা করেন আহছানিয়া মিশন। সে সময় থেকে স্বল্প পরিসরে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন তিনি। ধীরে ধীরে বেড়েছে এর ব্যাপ্তি। প্রতিবছর রমজানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নলতা শরীফে বিশাল ছাউনির নিচে এই ইফতারের আয়োজন করা হয়। এখন শুধু স্থানীয়রাই নন, দূর দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন ইফতার করতে।

ইফতার করতে লালমনিরহাট থেকে এসেছেন হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ছোটো বেলা থেকে শুনে এসেছি প্রতিবছর নলতা আহ্ছানিয়া মিশনে হাজার হাজার মানুষ একসঙ্গে ইফতার করে, কিন্তু কখনও আসার সুযোগ হয়নি। এবছর আসতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে ।

নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের ইফতার মাহফিল আয়োজক কমিটি জানিয়েছে, ইফতার তৈরিতে নিয়োজিত থাকা রাঁধুনী আজগর আলী বলেন, আমরা প্রতিদিন ভোর ৫ থেকে রান্নার কাজ শুরু করি। শেষ হতে বেলা ৫টা বেজে যায়। এখানে আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সাথে সিংগারা, ছোলা, ফিরনি তৈরি করি।

স্থানীয় মাসুদ পারভেজ জানান, ছোটবেলা থেকেই আমি এখানে ইফতার করতে আসি। একসাথে সকলে মিলে ইফতারি করতে খুব ভাল লাগে। আমি এই উপজেলার সন্তান হিসেবে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন নিয়ে গর্ববোধ করি।

ইফতার আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত মোয়াল্লেম তারেক আহসান বলেন, ‘খান বাহাদুরের জীবদ্দশায় এখানে ইফতার চালু হয়। সেটা ১৯৩৫ সাল। সেই বছরই তিনি নলতায় প্রতিষ্ঠা করেন আহছানিয়া মিশন। তবে তখন সেটা ছিল স্বল্প পরিসরে। বর্তমানে বাড়তে বাড়তে ৭-৮ হাজারে পৌঁছেছে। প্রতিদিন ইফতারে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়। তিনি আরও বলেন, ইফতারের আইটেমগুলো প্যান্ডেলের পাশেই তৈরি বা রান্না হয়। আছরের নামাজের পরপরই ইফতারি দিয়ে প্লেট সাজানোর কাজ শুরু হয়।

নলতার ইফতার মাহফিল দেশের সবচেয়ে বৃহৎ বলে দাবি করেন কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের এডহক কমিটির সদস্য আবু ফজল বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, বাংলাদেশে এত বৃহত্তর পরিসরে আর কোথাও ইফতার মাহফিল হয় না। করোনার ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ১০ হাজার মানুষের আয়োজন কমিয়ে ৭ হাজার করা হয়েছে। যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে তাহলে পূর্বের মত আবারও আয়োজন বাড়িয়ে ১০ হাজার করা হবে। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর থেকে ২৫-৩০ জন বাবুর্চি ইফতার তৈরি বা রান্নার কাজ শুরু করেন, চলতে থাকে দুপুর পর্যন্ত। রান্না শেষে পরিবেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বিশাল ছাউনির নিচে যেখানে বসে ইফতার করেন একত্রে ৭ হাজার মানুষ। আসরের নামাজের পরপরই ইফতার দিয়ে শুরু হয় প্লেট সাজানোর কাজ। এলাকার ছোট-বড় সব মিলিয়ে তিনশো যুবক স্বেচ্ছাশ্রমে এসব কাজ করেন প্রতিদিন।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা