• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার দুই যুবককে কলোম্বিয়ায় আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবি

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১ মার্চ ২০২৩  

ভাগ্য ফিরাতে কলম্বিয়ায় যেয়ে দালাল চক্রের কবলে পড়ে চরম বিপদে পড়েছেন কালিগঞ্জের তিন যুবক। মুক্তিপণ দিয়ে এক যুবক কলম্বিয়া থেকে দেশে ফিরলেও টাকা যোগাড় করতে না পারায় ফিরতে পারছেনা দু'জন। মুক্তিপণের টাকার জন্য তাদের উপর চালানো হচ্ছে অমানসিক নির্যাতন। কলম্বিয়ায় নির্যাতনের শিকার দুই যুবক হলেন উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের পূর্ব মৌতলা গ্রামের খাঁন ছবেদ আলীর ছেলে শাহিনুর খাঁন (২৪) ও খান ছুন্নত আলীর ছেলে খাঁন রাব্বি হুসাইন (২৫)। আর ৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বাড়িতে ফিরেছে শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ি ইউনিয়নের কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সাকিবুল ইসলাম (২৫)। ভুক্তভোগী রাব্বি হোসেনের মা রোজিনা বেগম ও শাহিনুর ইসলামের মা শাহানাজ পারভীন জানান, গত একবছর আগে পূর্ব মৌতলা গ্রামের মৃত খান সোবহান ময়রার ছেলে কুরবান খান (৪৫)  তাদের ছেলেদের  সিঙ্গাপুর পাঠিয়ে দেওয়ার  প্রলোভন দেখায়। ১২ লক্ষ টাকা দিলে রাব্বি ও শাহিনুরকে সিঙ্গাপুর পাঠিয়ে দিতে পারবেন বলে জানান কুরবান। সেই ফাঁদে পা দেন রোজিনা বেগম ও শাহনাজ পারভীন। ১২ লক্ষ টাকা দিয়ে কুরবানের মাধ্যমে তাদের ছেলেদের সিঙ্গাপুর পাঠাতে রাজি হয়ে যান তারা। এনজিও থেকে সুদে ১২ লক্ষ টাকা নিয়ে কুরবানের হাতে তুলে দেন রোজিনা বেগম ও শাহনাজ পারভীন। এক মাসের মধ্যে ভিসা দেওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও সিঙ্গাপুর নিয়ে যেতে ব্যার্থ হন তিনি। পরবর্তীতে নতুন কৌশল অবলম্বন করেন  কুরবান। তাদেরকে প্রলোভন দেখিয়ে বলে সিঙ্গাপুরের চেয়ে কলোম্বিয়ায় গেলে ৭০ হাজার টাকা বেতন হবে তাদের। তার আপন শ্যালক সেখানে রয়েছে ভিসা খুব দ্রুত দিতে পারবে। তাদের ছেলেদের কলোম্বিয়ায় পাঠাতে রাজি হন তারা। সেখানে ভয়ংকর ফাঁদ পেতে রেখেছে কুরবান সেটা অজানা ছিল তাদের। গত  ৩ মাস আগে  ভ্রমনের ভিসা দিয়ে রাব্বি ও শাহিনুরকে কলোম্বিয়ায় পাঠায়ি দেয় কুরবান। তারা এয়ারপোর্টে  পৌঁছালে কুরবানের সাথে জড়িত দালাল চক্রের সদস্যরা রাব্বি ও শাহিনুরকে নিয়ে যায় তাদের আস্তানায়।পরবর্তীতে কুরবানের নির্দেশে তাদেরকে  জিম্মি করেন দালাল চক্রের সদস্যরা।তাদের মুক্তি পণের জন্য ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। 
টাকা আদায়ের জন্য তাদের উপর চালানো হয় অমানসিক নির্যাতন। সেই নির্যাতন ভিডিও কলের মাধ্যমে দেখানো হয় তাদের পরিবারের সদস্যদের। ছেলেদের বাঁচাতে দিশেহারা হয়ে যান তাদের পরিবার। সেই মুহূর্তে  এলাকা ছেড়ে চলে যায় আদম ব্যবসায়ী কুরবান। গত তিন মাস যাবত ধার দেনা করে  বিকাশের মাধ্যমে দালাল চক্রের সদস্যদের ৩ লক্ষ  টাকা দিয়েছে তাদের পরিবার। বর্তমানে  আরো ৫ লক্ষ টাকা  দাবি করছে ওই দালাল চক্রের সদস্যরা। মুক্তিপণ দিয়ে ছেলেদের দেশে ফিরিয়ে আনতে টাকার জন্য বিভিন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন রাব্বি ও শাহিনুরের অসহায় মায়েরা। বিষয়টি জানতে  কুরবান খাঁনের বাড়িতে একাধিকবার গেলেও তার দেখা পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মৌতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফেরদৌস মোড়ল জানান, বিদেশে নিয়ে যাওয়ার নাম করে অনেক পরিবারকে পথে বসিয়েছে কুরবান। রাব্বি ও শাহিনুরকে কলোম্বিয়ায় আটকে রেখে দালাল চক্র ১০ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছে বিষয়টি তিনি অবগত আছে বলে জানান। এ ছাড়া ঘটনার পর থেকে কুরবান এলাকা থেকে পালিয়ে রয়েছে নিশ্চিত করেন চেয়ারম্যান। তবে রাব্বি ও শাহিনুরকে  ফিরিয়ে আনতে এবং কুরবানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে জানার জন্য কোরবান আলীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা