• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় আধা নিবিড় পদ্ধতিতে ৫০ গুণ বেশি চিংড়ি উৎপাদন

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৭ নভেম্বর ২০২২  

সাতক্ষীরায় পরীক্ষামূলকভাবে চলতি বছর আধা নিবিড় (সেমি ইনটেনসিভ) পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করে ব্যাপক সফলতা লাভ করেছেন চিংড়ি চাষিরা। এতে সাধারণ পদ্ধতির চেয়ে প্রায় ৫০ গুণ বেশি চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সাতক্ষীরার উপকূলীয় উপজেলা আশাশুনির আনুলিয়ায় সাবেক ইউপি সদস্য এনামুল হোসেনসহ শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ গ্রামের ২৫ জন মৎস্য চাষি আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে উৎসাহিত হয়ে এ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে মনোনিবেশ করেন তারা।

মৎস্য চাষিরা জানান, এ পদ্ধতিতে একটি ৩ বিঘা মৎস্য ঘেরে প্রায় ৩২ হাজার চিংড়ি পোনা ছাড়া যায় । যা প্রায় ৪ মাসের মাথায় মাছ বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। গত বছর থেকে এই পদ্ধতিতে উপকূলের কিছু চাষি চিংড়ি চাষ শুরু করেছেন। যা উৎপাদিত হয়েছে পূর্বের তুলনায় অনেকগুণ বেশি। সনাতন পদ্ধতিতে যেখানে হেক্টরপ্রতি ৩০০-৫০০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন হতো, সেখানে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে উৎপাদন পাঁচ হাজার কেজি ছাড়িয়ে যায়। 

আধা নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ দেখতে অনেকেই হাজির হয় এই প্রকল্পের ঘেরে। অনেকেই আগ্রহী হয়ে আগামী দিনে এ পদ্ধতিতে চাষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আশাশুনির আনুলিয়ার ইউপি সদস্য এনামুল হোসেন জানান, সাতক্ষীরার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী খাইরুল মোজাফফার মন্টু মিয়ার বিভিন্ন প্রজেক্ট দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজের ২৩ শতক জমিতে মাছ চাষ শুরু করেন। তার পুকুরে জীবাণুমুক্ত করে ২৫ হাজার রেনুপোনা ছেড়ে দেন। মাত্র ৪ মাস ১০ দিন লালন পালন করে ২৫ মন মাছ উৎপাদন করেছেন তিনি। 

তিনি বলেন, আমার খরচ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। আর মাছ বিক্রি করে ৭ লক্ষাধিক টাকা পাওয়া যাবে বলে আমি আশা করছি। 

তিনি বেকার যুবকদের উদ্দেশে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ করার পরামর্শ দেন। 

৬৭০ কেজি দরে তার ঘের থেকেই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করেন এবং সেটি সরাসরি খুলনার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। তবে মাছের দাম কম বলে লাভের পরিমাণ একটু কম হয়েছে বলে জানান তিনি।

শ্যামনগরের আধা নিবিড় চিংড়ি চাষি মিজানুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে তিনি এ চাষ শুরু করেন। প্রথমে ভয় কাজ করলেও পরবর্তীতে তা কেটে গেছে। পূর্বের চাষ পদ্ধতির থেকে তিনি বেশি উৎপাদন পেয়েছেন। যা উৎপাদন হয়েছে রীতিমত স্থানীয়দের মাঝে সাড়া পড়েছে বলে জানান তিনি।

দেবহাটা এলাকার চিংড়ি চাষি মাহমুদুল হক লাভলু জানান, তাদের এ সাফল্য দেখে এ অঞ্চলের চিংড়ি চাষিরা অল্প জমিতে অধিক উৎপাদনের আশায় আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।

শ্যামনগর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার জানান, আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করলে সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে চাষিরা বিঘাপ্রতি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন।

সাতক্ষীরা জেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, সাতক্ষীরা জেলায় ৫৯০৫৪ হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হয়েছে। এ বছর ২৫০০২ মেট্রিক টন বাগদা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যা গত বছর ছিল ২৪৫৭১ মেট্রিক টন। 

খুলনা বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা (সহকারী পরিচালক) রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, বাগদা চাষে এখন প্রধান সমস্যা হচ্ছে বাগদার পোনা টিকিয়ে রাখা। তবে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে সঠিক নার্সিংয়ের মাধ্যমে পোনার মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব। গতানুগতিক পদ্ধতি পরিহার করে উপকূলের চিংড়ি চাষিরা আধা নিবিড় পদ্ধতিতে অনেক বেশি লাভবান হওয়ায় চিংড়ি চাষে নতুন এক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা