• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

কলারোয়ায় জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষে ভালো ফলনে কৃষকের হাসি

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ৩১ অক্টোবর ২০২২  

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পানিফলের চাষ। জলাবদ্ধ পতিত জমির সর্বত্রই এখন চাষ হচ্ছে এ ফলের। খেতে বেশ সুস্বাদু ও কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ চাষ এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মৌসুমি এ পানিফল (স্থানীয় ভাষায় ‘পানি সিঙ্গারা’ নামে পরিচিত) চাষে। এরই মধ্যে লাভজনক এই ফল চাষ করে পরিবারের সুদিন ফিরেছে অনেক প্রান্তিক চাষির। উপজেলার জলাবদ্ধপতিত জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে পানিফলের গাছ। প্রতিদিন ভােরে মৗেসুমী ব্যবসায়ীরা যাত্রীবাহি বাস, ভ্যানগাড়ি, ইজিবাইকের মাধ্যমে বস্তায় ভরে এই পানিফল বিক্রির জন্য নিচ্ছেন সাতক্ষীরা সদর, যশোর, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন বাজার গুলি তে। এছাড়া কলরােয়া পৗেরসদরের মুরারীকটি থেকে যুগিবাড়ী পর্যন্ত সাতক্ষীরা-ঢাকা মহাসড়কের দুইপাশে সারিবদ্ধভাবে পানিফল বিক্রি করছে স্থানীয় কৃষকরা। কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উপজেলা কৃষি অফিসার আবুল হোসেন বলেন, পানিফল একটি বর্ষজীবি জলজ উদ্ভিদ। কলারোয়া উপজেলায় চলতি বছর ৩৭ হেক্টর পতিতজমিতে পানিফল চাষ হয়েছে। পানিফলের পুষ্টিরমান অনেক বেশি। উপজেলার পতিত জমিতেএই পানিফলের চাষ ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মুলত কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এ ফলচাষে আগ্রহী হচ্ছে এখানকার কৃষকেরা। প্রতিবছর বোরো ধান কাটার পর, জলাবদ্ধ পতিতজমি, পানি জমে থাকা ডোবাসহ খাল-বিলে এই ফলের লতা রোপণ করা হয় (জমে থাকা পানিতে)। তিনি বলেন, তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে গাছে ফল আসে। এ ফল চাষে সার-কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। খোঁজনিয়ে জানাগেছে, বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি পানিফল প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২৫/৩০ টাকা। প্রথমদিকে কেজি প্রতি দাম ছিলো ৪০/৪৫ টাকা। এদিকে ডোবা আর বদ্ধ জলাশয়, পতিত জমি তে পানিফল চাষ কে র পরিবারের সুদিন ফিরেছে উপজেলার শতাধিক হতদরিদ্র কৃষকের। এদিকে, স্থানীয় পানিফল চাষি কৃষকরা জানান, সাতক্ষীরার কলারোয়ায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে পানিফল চাষ শুরু হয়। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিনেদিনে এই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন দরিদ্র প্রান্তিক কৃষকরা। কৃষকদের দাবি, কলারোয়ায়পানিফল চাষে সফলতা পাওয়ায় দেশের অন্যান্য উপজেলার চাষিরা অনুপ্রাণিত হয়ে এমনকি অনেকে সরজমিনে এসে চাষাবাদ পদ্ধতি শিখে তাদের পতিত জমিতে চাষ শুরু করছেন। কলারোয়া পৌরসদরের মুরারীকাটি গ্রামের চাষী পানি ফল চাষী আবু হাসান জানান, অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে পানি ফলের চাষ। সুস্বাদু এ ফলটি জলাবদ্ধ এলাকায় পতিত জমিতে খুব সহজেই চাষ করা যায়। এছাড়া অল্প খরচ করে উৎপাদন বেশি ও লাভজনক হওয়ায় পানি ফলের চাষে ঝুঁকছে এখানকার চাষীরা। তিনি বলেন, ফলটি বাজারে তৈরি সিঙ্গারার মতো দেখতে হওয়ায় স্থানীয় ভাষায় ‘পানি সিঙ্গারা’ নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছে। পানিফল চাষী রেজাউল ইসলামসহ কয়েক কৃষক বলেন, ১৩ বছর ধরে কলারোয়া পৌর সদরেরদ গোপিনাথপুরে পতিত ও জলাবদ্ধ জমি তে পানিফল চাষ কে র আস ছেন। পানি ফলে সার কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। অন্যান্য ফসলের থেকে এর পরিচর্যাও কম। এছাড়া অল্প খরচে লাভ অনেক বেশী। খেতেও সুস্বাদু। কৃষক রেজাউল ইসলাম বলেন, এবছর তাঁর ৬বিঘা জমিতে পানিফল চাষে খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এরইমধ্যে পানি ফল বিক্রি হয়েছে ১লাখ ৪০হাজার টাকা। এখনও জমিতে ফল রয়েছে, আশা করছি এবার ৬বিঘা জমিতে ১লাখ ৮০ হাজার টাকার ফল বিক্রয় হবে। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য ফসলের থেকে পানিফল চাষে দ্বিগুণ লাভ হচ্ছে। ফলে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে এই ফল চাষে আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গোপীনাথপুর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, মুরারীকটি পতিত জমিতে ৫ বিঘা পানিফল চাষ করেছেন , বর্তমানে ফল তুলে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, গত মৌসুমে খরচ বাদে পানিফল চাষ করে ৯০ হাজার টাকা লাভ করেছি। এবার ফলন ও বাজারমূল্য দুটোয় ভালো। তাই গতবারের চেয়ে বেশি লাভের আশা করছি। এদিকে পানিফল চাষী ওয়াজেদ আলী, আব্দুল মাজেদ, শিল্পি, একুব্বার, শফিকুল ইসলাম, মুনসুর আলী, নাজির গাজী, শামসুর রহমানসহ অধিকাংশ কৃষকরা জানান, সরকারি- বেসরকারি খাত থেকে ঋণ সহায়তা পেলে আরো অনেক প্রান্তিক কৃষকরা পানিফল চাষের সুযোগ পাবে। ফলে একদিকে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হতে পারবে ঠিক তেমনই গ্রামীণ অর্থনীতিতেও অবদান রাখা সম্ভব হবে এমনটাই দাবি করেন এসব কৃষকেরা। কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, বর্তমানে পানিফল কৃষিতে নতুন এক সম্ভাবনাময় ফসল। আমাদের কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে পানিফল চাষের বিস্তার ঘটাতে। যে কোন পতিত পুকুর, ডোবা অথবা জলাশয়ে পানিফল চাষ করা সম্ভব। তুলনামূলক এর উৎপাদন খরচ কম। তিনি বলেন, চলিত বছর প্রায় ৩৭ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষ করা হয়েছে। যা আগামী বছর বৃদ্ধি পেয়ে আরো বেশি জমিতে চাষ হবে বলে তিনি মনে করেন।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা