• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

কালিগঞ্জের তারালী ও দক্ষিণ শ্রীপুরে খাল খননে অনিয়মের অভিযোগ

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২২  

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার তারালী ও দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নে দু’টি খাল খননে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এস্কেবেটর মেশিন দিয়ে যেততেন ভাবে মাটি কেটে খালের দুইপাড় ড্রেসিং করে দেয়া হয়েছে। বরাদ্দের অর্ধেকেরও কম টাকা খরচ করে খনন কাজের অনিয়ম ঢাকতে দ্রুত পানি তুলে দেয়া হয়েছে খাল দু’টিতে। মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে জলাশয় সংস্কারের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় ৬৬ লক্ষ টাকায ব্যয়ে কালিগঞ্জের এই খাল দু’টি খনন করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার তারালী ইউনিয়নের খলিশখালী খাল এবং দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ঘোষ খালি খাল খননে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু দুর্নীতি ঢাকতে খলিশখালী খাল খননের প্রকল্প সাইনবোর্ডে ১৭ লক্ষ টাকা ও দলনেতা জনৈক আব্দুল আজিজের নাম ছাড়া আর কোন তথ্য দেয়া হয়নি।

অনুরূপভাবে দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের ঘোষ খালি খাল খননে দু’টি অংশে ৩৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রকল্প সাইনবোর্ডে ১৭ লক্ষ টাকা ও দলনেতা আবু সাঈদ সরদার এর নাম ছাড়া আর কোন তথ্য দেয়া হয়নি।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, খাল দু’টি খননে পুকুর চুরি করা হচ্ছে। বরাদ্দের বাকি টাকার কাজ না করে ভেকুর (এস্কেবেটর) সাহায্যে নামমাত্র খনন করে জনগণের চোখ ফাঁকি দিতে দ্রুত খাল দু’টিতে পানি তুলে দিয়ে জোয়ার ভাটা চলমান করে দেয়া হয়েছে।

এদিকে খননকাজে অনিয়মে এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান এবং খুলনা মৎস্য অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান ঘটনাস্থলে এসে মাপ জরিপ করে অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছেন। সেসময় জনগণের চাপে পড়ে পরে আবার খাল কেটে দেয়া হবে বলে জানালেও আজও সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি।

তারালীর খলিশখালী খাল পাড়ে গেলে বরেয়া গ্রামের আব্দুস সেলিম, তারালী গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, মোহাম্মদ আলী, হরিদাস, জাফরপুর গ্রামের আশরাফুল এবং দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের টোনা গ্রামের অনিমেষ, সান্তনু সরকার, নারায়ন সরকার, গোবিন্দকাটি গ্রামের আশুতোষ সরকার, রাজময় সরকারসহ স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানান, ৫ হাজার ৮ শত ফুট করে লম্বা দু’টি খালের ৫০ ফুট চওড়া এবং ২৯ ফুট তলা ও ৬ ফিট গভীর করে খননের কথা থাকলেও কোন মাপ জরিপ ছাড়াই দায়সারাভাবে এস্কেবেটর মেশিন খালের পাস কেটে ছেটে দ্রুত পানি তুলে খাল ভর্তি করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও গোমর ফাঁস হওয়ার ভয়ে স্থানীয় কোন এস্কেবেটর মেশিন ব্যবহার না করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যশোর থেকে দু’টি এস্কেবেটর মেশিন ভাড়া করে নিয়ে আসে। আর ওই দু’টি খালের খনন কাজ শেষ করার জন্য দুই এস্কেবেটর মেশিন মালিককে মাত্র ২০ লক্ষ টাকা চুক্তি করে দেয়া হয়। বাকি টাকা ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট তদারকি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পকেটে চলে গেছে। ফলে তারা দায়সারা গোছের কাজ করে খননকাজ শেষ করেছে।

প্রকল্পের বরাদ্দ ও দরপত্র সংক্রান্ত বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হক এর নিকট জানতে চাইলে তিনি জেলা মৎস্য কর্মকর্তার দোহাই দিয়ে নিজের দায় এড়িয়ে যান। এছাড়া কোন কাজের সিডিউল বা বরাদ্দকৃত টাকার পরিমান জানাতে অস্বীকার করেন।

এদিকে সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান এবিষয়ে তার কিছু জানা নেই উল্লেখ করে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে কথা বলতে বলেন।

মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান এর কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় আশরাফুলের সঙ্গে কথা বলেন। আমি গ্রামবাসীর প্রতিবাদের মুখে পুনরায় খাল কেটে দেবো বলে এসেছিলাম কিন্তু এখনো দেয়নি?

তিনি আরো বলেন, মৎস্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় থেকে যারা এই প্রকল্পটি নিয়ে এসেছে তাদের অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এ কারণে একটু সমস্যা হতে পারে। তারপরও বিষয়টি আমি দেখছি।

এ প্রসঙ্গে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রবিউল ইসলাম বলেন, খাল খননের বিষয়টি মৎস্য অফিসের। যদি খাল খননে কোন অনিয়ম দুর্নীতি হয়ে থাকে তাহলে সেখানে অভিযোগ করতে বলেন।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা