• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় কৃষকনেতা লস্কর’র মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সভা

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০১৯  

আজ ৫ ডিসেম্বর ’১৯ বৃহস্পতিবার কৃষকনেতা সাইফুল্লাহ লস্কর’র ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সকাল সাড়ে ১০টায় তার সাতক্ষীরা জেলার কাঠিয়া লস্কর পাড়ার সমাধিস্থলে পুষ্পমাল্য অর্পন করা হয়। এ সময় সংগঠনের কেন্দ্রীয়  সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হকের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সাতক্ষীরা সদর থানা আহ্বায়ক মাহমুদ উদ্দিন লস্কর ও তালা থানার সভাপতি আব্দুল হাকিমসহ স্থানীয় এলাকাবাসী পুষ্পমাল্য অর্পন করেন। প্রয়াতের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন ও শপথ পাঠ করা হয়। শপথ পাঠ করান কামরুল  হক লিকু। 
    
এরপর বিকাল সাড়ে ৩ টায় সাতক্ষীরা জেলার তালা ডাকবাংলা চত্বরে এক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তোজাম্মেল হোসেন। অন্যান্যের মধ্যে রাখেন কৃষক সংগ্রাম সমিতির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি খালেক লস্কর, যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যাপক তাপস বিশ্বাস, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি নাজিউর রহমান নজরুল, কৃষক সংগ্রাম সমিতির খুলনা জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট খুলনা জেলা সভাপতি আবুল হোসেন, কৃষক সংগ্রাম সমিতির যশোর জেলা সহ-সভাপতি সোহরাব উদ্দিন মাস্টার ও আবু বক্কার সরদার, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ যশোর জেলার সভাপতি আশুতোষ বিশ্বাস, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সাতক্ষীরা জেলার তালা থানার সভাপতি আব্দুল হাকিম, সাংবাদিক রঘুনাথ খাঁ, জাতীয় ছাত্রদলের খুলনা জেলা আহবায়ক সুকৃতি সরকার ও যশোর জেলা নেতা মধুমঙ্গল বিশ্বাস প্রমূখ। সভাটি পরিচালনা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হক লিকু।

সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, সাইফুল্লাহ লস্কর সমগ্র জীবন ধরে শ্রমিক-কৃষক মেহনতি জনগণ ও সাতক্ষীরার ক্ষেত্রে ভূমিহীন গরীব কৃষকদের খাস জমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তাঁর প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা নিবেদনে তাঁর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য সর্বস্তরের জনগণের ঐক্যবদ্ধ লড়াই-সংগ্রামের বিকল্প নাই। একই সাথে দেশের কৃষকসহ শ্রমিকশ্রেণি ও জনগণের সমস্যা-সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে জীবন-জিিবকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের কৃষিতে আত্মনির্ভরতার মিথ্যাচার উন্মোচিত হয়েছে ব্যাপক খাদ্য সংকট ও তা মোকাবেলায় খাদ্য আমদানীর মধ্যদিয়ে। প্রতিবেশি ভারত কর্তৃক অভিন্ন নদীতে বাঁধ, গ্রোয়েন, ড্যাম, ব্যারেজ ইত্যাদি নির্মাণ করে পানি নিয়ন্ত্রণের অপকৌশলের ফলে সৃষ্ট বন্যায় উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে কৃষির উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ ও বিধ্বস্ত হলেও সরকার গলাবাজি করে কৃষকের পাশে না দাঁড়িয়ে লুটপাট চালায়। বাঁচার তাগিদে ঋণে জর্জরিত কৃষক পুনরায় ঋণ করে উৎপাদন করলেও মৌসুমে ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে ঋণগ্রস্থ ও জমিহারা হয়ে আরো গরিব হয়েছে। এর সাথে পেঁয়াজ, চাল, তেল, শাক-সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের অগ্নিমূল্য শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনতাসহ মধ্যবিত্তদের জীবন-জীবিকাকে নাভিশ্বাস করে তোলে। এই অবস্থাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে সরকারী দলের ছত্রছায়ায় ব্যবসায়ীরা আমদানী ও অগ্নিমূল্যে বিক্রি তথা সকল রূপে বেপরোয়া লুটপাট চালিয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে প্রতিবেশি ‘বন্ধু রাষ্ট্র’ পেঁয়াজ রপ্তানী বন্ধ করায় মূল্য নজির সৃষ্টি করেছে। সম্প্রতি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। 

দেশ ও জাতীয় জীবনের সমস্যা সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে চললেও সরকার তাকে আড়াল করে উন্নয়নের গালভরা বুলি আউড়িয়ে ক্ষমতায় অব্যাহত থাকার জন্যে সাম্রাজ্যবাদী প্রভুর আর্শীবাদ পাওয়ার লক্ষে উগ্র বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ও ৭১’র ‘মুক্তিযুদ্ধ’র স্বপক্ষের শক্তির ঐক্যর স্লোগান সামনে আনছে। আবার প্রতিক্রিয়াশীল প্রধান বিরোধীদল বিএনপি’র নেতৃত্বে ২০দলীয় জোট জনজীবন ও জাতীয় জীবনের সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে, ভারত বিরোধিতা বাদ দিয়ে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে প্রভুর আর্শীবাদ নিয়ে তাদের নেত্রীর কারামুক্তির দাবিকে সামনে রেখে ক্ষমতায় আসার জন্যে তৎপর।

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থল সংযোগ সেতু এবং প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের সংযোগকারী মালাক্কা প্রণালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরীয় দেশ হিসেবে ভূ-রাজনৈতিক ও রণনীতিগত গুরুত্বের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশসহ এতদ্বাঞ্চলকে নিয়ে আন্তঃসাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বীতা সুতীব্র। আমাদের দেশসহ এতদ্বাঞ্চলে মার্কিনের প্রাধান্য থাকলেও সাম্রাজ্যবাদী রাশিয়া ও পুঁজিবাদী চীন তাদের অবস্থান প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক তৎপর। এ প্রেক্ষাপটে উভয় পক্ষই এতদ্বাঞ্চলের প্রধান আঞ্চলিক শক্তি নয়াউপনিবেশিক-আধাসামন্ততান্ত্রিক ভারতকে স্বপক্ষে রাখা ও টানার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। সাম্রাজ্যবাদী অন্যায়যুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে কাশ্মির, রোহিঙ্গা, এনআরসি ইস্যু এবং বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে রাডার স্থাপন তারই অংশ।

বাংলাদেশে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ’ বাস্তবায়নের কথা বলে সাম্রাজ্যবাদী একচেটিয়া পুঁজির লুণ্ঠন সর্বাত্মক করার জন্যে বিনিয়োগ, সড়ক-রেল-নৌ যোগাযোগ তথা অবকাঠামো উন্নয়ন বৃদ্ধির কথা বলে চীনের বিসিম অর্থনৈতিক করিডোর, ভারতের উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা ইত্যাদিকে সামনে রাখা হচ্ছে। অপরদিকে ভারতের মূল ভূখন্ডের সাথে উত্তর-পূর্ব ভারতের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষে সড়ক-রেল-নৌ-বিদ্যুৎ করিডোর প্রদান, চীনের বিনিয়োগ, জাপানের ‘বে-অফ বেঙ্গল ইন্ডাষ্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি)’ উদ্যোগের প্রেক্ষিতে  শেখ হাসিনা সরকার দেশটিকে বিদেশীদের আরো বেশি করে সুযোগ দিয়ে ঋণের ভারে জর্জরিত করে চলেছে। তাই প্রয়াত কৃষকনেতার সংগ্রামী জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে শ্রমিক-কৃষক জনগণের রাষ্ট্র, সরকার ও সংবিধার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি স্মরণসভা থেকে উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়।
 

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা