জেল হত্যা: ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়
আজকের সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ৩ নভেম্বর ২০২১
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর। বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কময় ও বেদনাবিধুর একটি দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ৩ নভেম্বর মধ্যরাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে জাতীয় চার নেতা বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানকে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। একাত্তরের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের শত্রুরা সেদিন দেশ মাতৃকার সেরা সন্তান জাতীয় এই চার নেতাকে শুধু গুলি চালিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, কাপুরুষের মতো গুলিবিদ্ধ দেহকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে একাত্তরের পরাজয়ের জ্বালা মিটিয়েছিল। প্রগতি-সমৃদ্ধির অগ্রগতি থেকে বাঙালিকে পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। ইতিহাসের এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় শুধু বাংলাদেশের মানুষই নয়, স্তম্ভিত হয়েছিল সমগ্র বিশ্ব। কারাগারের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকা অবস্থায় বর্বরোচিত এ ধরনের হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর খুনি মোশতাক গং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পর মোশতাক গংকে পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থানের ভয় পেয়ে বসে। যদিও তৎকালীন চারজন সিনিয়র নেতাসহ অনেকেই কারাগারে এবং অনেকে আত্মগোপনে ছিলেন। বাকি নেতারা প্রকাশ্য কিংবা অপ্রকাশ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের সাথে সমঝোতা করেন। অনেকে আবার রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান।
কিন্তু সেনাবাহিনীর মধ্যে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা ছিল। সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিল ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। একদিকে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং অন্যদিকে মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ। মোশতাক গংরা ভেবেছিলেন খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে সে অভ্যুত্থান আওয়ামী লীগ বা বাকশালের পক্ষে হচ্ছে। ক্ষমতাসীন মোশতাক বা তার সমর্থকরা চাননি যে তাদের বিরোধী আরেকটি শক্তি শাসন ক্ষমতায় পুনর্বহাল হোক। ঐ ধরনের একটা সরকার যদি হতো তাহলে জেলে থাকা সে চারজন ছিলেন সম্ভাব্য নেতা। সেই চিন্তা থেকেই তারা চার নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। তারা বিশ্বাস করতেন যদি এই চার নেতাকে হত্যা করা হয় তাহলে পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থান হলেও তার রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেবার মত কেউ থাকবে না।
মোশতাক গংদের এই নোংরা এবং কুৎসিত চিন্তাই পরবর্তীতে তাদেরকে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের দিকে ধাবিত করে। রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের নেতৃত্বে তারা ৫ জনের একটি ঘাতক দল গঠন করে। ঠান্ডা মাথায় খুনের ব্যাপারে এ ঘাতক দলের সদস্যরা ছিল বিশেষভাবে পারদর্শী। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন পর মোসলেহ উদ্দিনকে অনারারি লেফটেন্যান্ট পদে উন্নীত করা হয়। ১৫ অগাস্ট শেখ মনির বাসায় হত্যাযজ্ঞে নেতৃত্ব দিয়েছিল এই মোসলেহ উদ্দিন। মোশতাক গং অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় চার নেতা হত্যার ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করে।
মোশতাক গংরা খুনের জন্য বেছে নেয় কারাগারের মত নিরাপদ জায়গাকে। যে কারাগারে প্রত্যেকটি কয়েদী রাষ্ট্রের নিরাপত্তা হেফাজতে থাকে এবং প্রত্যেক কয়েদীকে কারাগারে যথাযথ নিরাপত্তা দেয়া রাষ্ট্রের অবশ্য কর্তব্য বলে বিবেচিত হয়। খুনিরা সেই রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে কারাগারে প্রবেশ করে। তারপর সকল আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চার নেতাকে কারাগারের ভিতর ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। খুনিরা শুধু ব্রাশফায়ার করে ক্ষান্ত হয়নি, তারা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে চার নেতার মৃত্যু নিশ্চিত করে বীরদর্পে বেড়িয়ে যায়। পৃথিবীর ইতিহাসে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হেফাজত তথা কারাগারের ভেতর এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের উদাহরণ বিরল।
শুধু হত্যাকাণ্ড নয় এই হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রমকেও বন্ধ করে দেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। জেলখানায় প্রতিদিন ভোরে, অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা পর পর একটি প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দিতে হয়। জেলহত্যার পর তৎকালীন জেলার মো. আমিনুর রহমান একটি প্রতিবেদন তৈরি করে আইজি (প্রিজন) নুরুজ্জামান হওলাদারকে দেন। পাশাপাশি ৪ নভেম্বর কারা কর্তৃপক্ষ লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলায় রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, তার নেতৃত্বে চার-পাঁচ সেনাসদস্য কারাগারে ঢুকে চার নেতাকে হত্যা করে। প্রথমে গুলি করে, পরে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘাতকরা।
মামলা দায়েরের পরদিন (৫ নভেম্বর) আইজি (প্রিজন) নুরুজ্জামান হাওলাদার জেলহত্যার প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে জমা দেন। ৬ নভেম্বর বিচারপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরী, বিচারপতি কে এম সোবহান ও বিচারপতি মোহম্মদ হোসেনের সমন্বয়ে ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ৭ নভেম্বরের প্রেক্ষাপটে জেনারেল জিয়াউর রহমান দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলে তিনি এই তদন্ত কমিটির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে জেলহত্যার তদন্ত প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে যায়। শুধু হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম বন্ধ নয় এই হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করা হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন দেশে চাকরী দিয়ে ।
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয়নি৷ তৎকালীন শাসকগণ নির্লজ্জের মত বিষয়টিকে এড়িয়ে গেছেন। তবে হত্যাকাণ্ডের ২৩ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে মামলাটি সচল করে এবং ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়৷ ২০০৪ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত এ মামলার রায়ে আসামি তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং এবং ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন৷ ২০০৮ সালে হাইকোর্ট রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলেও মৃত্যুদণ্ড পাওয়া অন্য দুই আসামি মারফত আলী ও হাশেম মৃধাকে খালাস দেন৷ এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ফারুক, শাহরিয়ার রশিদ, বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিন আহমেদকেও খালাস দেয়া হয়৷ কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ রায়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের দেয়া তিন জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ১২ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখে৷
সর্বোপরি চরম নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতার সাক্ষী হচ্ছে এই ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর। দেশের আপামর জনতা যাদের নেতৃত্বে ও নির্দেশে মাত্র নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এ দেশেকে স্বাধীন করেছিল, যারা মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকারের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে এদেশের জনগণকে একত্রিত করে দেশের বিজয়ের পতাকা উঁচিয়ে ধরেছেন সেই চার নেতাকে চরম নির্মমভাবে এই ৩ নভেম্বরে হত্যা করা হয়। তাই এই ৩ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত এবং কালো অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
- বুবলীর আগেও বিয়ে হয়েছিল, মেয়েও আছে সেই ঘরে?
- এই গরমে ডায়রিয়া হলে কী করবেন
- প্রিজন ভ্যানেই নারী ধর্ষণ!
- বাঘের আক্রমণে মৌয়াল নিহত
- স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রীর আত্মহত্যা
- গণভবনের শাক-সবজি কৃষক লীগ নেতাদের উপহার দিলেন শেখ হাসিনা
- ইসরায়েলে কী রকম অস্ত্র দিয়ে হামলা চালাল ইরান
- হত্যার হুমকির পর এবার সালমানের বাড়ির সামনে গুলি
- উত্তেজনার মধ্যেই ইসরায়েলি জাহাজ জব্দ করল ইরান
- সদকাতুল ফিতর কখন কার ওপর ওয়াজিব
- ব্রাজিলিয়ান বিকিনি মডেলের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন আরিয়ান!
- মন্ত্রীর নাতির সঙ্গে মেয়ে জাহ্নবীর প্রেমের কথা স্বীকার করলেন বনি!
- ইউনেস্কোর ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার পাননি ড. ইউনূস: শিক্ষামন্ত্রী
- পবিত্র কাবা থেকে সাড়ে ৩ কিলোমিটার ছাড়াল নামাজের কাতার
- চিকিৎসক হলেন ৩ ফুট উচ্চতার ভারতীয় তরুণ
- রোজা রাখলে শরীরে যা ঘটে
- বই বিক্রির অর্থ মসজিদ নির্মাণে দিলেন সঙ্গীতশিল্পী তাশরিফ
- ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েরা
- দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতি অভিযোগ
- বাঙালির হৃদয়কে আবিষ্ট করেছিল ৭ মার্চের ভাষণ: প্রধানমন্ত্রী
- মানুষের অধিকাররক্ষায় কাজকরে র্যাব,তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা গ্রহণ নয়
- রাজনীতি নিয়ে নতুন সিদ্ধান্তে মাহি
- ছেলেকে নিয়ে খবর, মেসি বললেন—এটা মিথ্যা
- ৭২ বিজিবি সদস্যকে পদক পরিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
- রমজানে ভোক্তাদের যেন হয়রানি না হয়: প্রধানমন্ত্রী
- ভোমরা স্থলবন্দরে দুর্নীতি, ডেপুটি কমিশনারকে প্রত্যাহারের দাবি
- ভোমরা স্থলবন্দরের কাস্টমস অফিস এখন অনিয়ম, দুর্নীতি ও হয়রানির আখড়া
- রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার
- আমাদের পুলিশ আরও স্মার্ট বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠবে: প্রধানমন্ত্রী
- স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করা হবে: প্রধানমন্ত্রী
- ইউনেস্কোর ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার পাননি ড. ইউনূস: শিক্ষামন্ত্রী
- ব্রাজিলিয়ান বিকিনি মডেলের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছেন আরিয়ান!
- সদকাতুল ফিতর কখন কার ওপর ওয়াজিব
- মন্ত্রীর নাতির সঙ্গে মেয়ে জাহ্নবীর প্রেমের কথা স্বীকার করলেন বনি!
- ইসরায়েলে কী রকম অস্ত্র দিয়ে হামলা চালাল ইরান
- স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে স্ত্রীর আত্মহত্যা
- উত্তেজনার মধ্যেই ইসরায়েলি জাহাজ জব্দ করল ইরান
- বাঘের আক্রমণে মৌয়াল নিহত
- হত্যার হুমকির পর এবার সালমানের বাড়ির সামনে গুলি
- গণভবনের শাক-সবজি কৃষক লীগ নেতাদের উপহার দিলেন শেখ হাসিনা
- প্রিজন ভ্যানেই নারী ধর্ষণ!
- এই গরমে ডায়রিয়া হলে কী করবেন
- বুবলীর আগেও বিয়ে হয়েছিল, মেয়েও আছে সেই ঘরে?