• বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১

  • || ০৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

রাতারাতি অসংখ্য নুরুল জন্ম নেবে না: ইনু

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৮ মার্চ ২০১৯  

প্রশ্ন: প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারে, এই আশঙ্কা করেন?

হাসানুল হক ইনু: তারা এখনো নিঃশেষিত হয়ে যায়নি। সবাই বলছেন বিরোধী দলের শূন্যতা পূরণ করতে হবে। কিন্তু তা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বা যান্ত্রিকভাবে হবে না। এটা একটা রাজনৈতিক যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধের চশমা দিয়ে সমগ্র যুদ্ধটাকে মাপতে হবে। অন্য কোনো মাপকাঠিতে মাপলে এর উত্তর পাব না। জঙ্গিবাদের বিষদাঁত অনেকটা ভোঁতা হয়েছে, কিন্তু রাজনীতির মাঠে তাদের সমর্থক গোষ্ঠীর সংখ্যা তেমন কমেনি। ৫-১০ ভাগ কমেছে।

প্রশ্ন: কারও মতে, আগের রাতে আর ব্যালট বাক্স ভরা যাবে না, সম্প্রতি এমন মন্তব্য করে সিইসি বিএনপির অভিযোগকে ভিত্তি দিয়েছেন। ‘একতরফা’ ভোটে হতাশ মানুষ উপজেলা নির্বাচনে যায়নি। নির্বাচনব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করা মঙ্গলজনক?

হাসানুল হক ইনু: নির্বাচনী ব্যবস্থার ত্রুটিবিচ্যুতি গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গলজনক নয়। কিন্তু রাজনীতির যুদ্ধের ময়দান থেকে যখন সাম্প্রদায়িক ও জঙ্গিবান্ধব শক্তি পিছু হটছে, তখন আপনি যে নির্বাচনী ত্রুটির কথা বলছেন, তা দেশের মানুষ শুধরে নেবে। তবে ফরমায়েশি বিরোধী দল সেটা পারবে না। সে জন্য সময় দরকার। আর নির্বাচনী সেই অভিযোগগুলোকে সূত্রবদ্ধ করার মতো রাজনৈতিক দক্ষতা কারও নেই।

প্রশ্ন: আপনি বিশ্বাসযোগ্য তথ্যপ্রমাণ দেখছেন না?

হাসানুল হক ইনু: নির্বাচনী ত্রুটিবিচ্যুতির বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য–প্রমাণ সেটা যা–ই হোক। নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীরা যদি জোরালোভাবে সক্রিয় থেকে নির্বাচন করতেন, তাহলে আপনি সেটা দেখতে পেতেন, ধরতে পারতেন। এখানে মাঠে সক্রিয় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকার কারণে একতরফা ভোট হয়েছে।

প্রশ্ন: ডাকসুতে একজন নুরুলের জেগে ওঠা কি প্রতীকী নয়? নুরুলরা কি নির্বাচনী–প্রক্রিয়ার ত্রুটিগুলো শুধরে দেবেন? তাঁর বিজয়কে স্বাগত জানাবেন?

হাসানুল হক ইনু: নির্বাচনব্যবস্থার, সরকার ও প্রশাসনের ক্ষমতার অপব্যবহার, ত্রুটিবিচ্যুতি, দুর্নীতি, দলবাজি, ক্ষমতাবাজির বিরুদ্ধে সমাজের অভ্যন্তরে যে প্রতিবাদ আছে, তা বুদ্‌বুদের মতো এখন প্রকাশ পাচ্ছে একজন নুরুলের মাধ্যমে। আমি তঁাকে স্বাগত জানাই। কিন্তু আমাদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে। এখন আপনি যদি মনে করেন একজন ইনু বা মেনন বীরের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে এখানে ভূমিকা রাখবে বা বিরোধী দলের জন্ম দেবে, এটাও যেমন বাস্তবসম্মত নয়, তেমনি রাতারাতি অসংখ্য নুরুলের জন্ম হবে, সেটাও বাস্তবসম্মত নয়। আপনি আগামী দু–তিন বছর দেখেন। অ্যাজেন্ডা তিনটি। বৈষম্য কমাও, দুর্নীতি ধ্বংস করো ও দলবাজি বন্ধ করে সুশাসন দাও। গত ১০ বছর রাজাকারমুক্ত বলেছি। এখন বলব সুশাসন লাগবে। সেই বাংলাদেশে নুরুলের মতো অসংখ্য নতুন প্রজন্মের মানুষ আসবে। বিএনপি–জামায়াতের মতো পুরোনো বামপন্থীরাও পথ হারানোর পথে।

প্রশ্ন: আপনারা আওয়ামী লীগের পাল তোলা নৌকায় না উঠলে সেই বিকল্প হতে পারতেন?

হাসানুল হক ইনু: ৩০ ডিসেম্বরের আগে মহাজোটের ভেতরে ও বাইরের বাম প্রগতিশীলদের মধ্যে কোনো বিভাজন রেখা টানা যেত না। কারণ, বিএনপি–জামায়াত ভোটে আসবে না এমন প্রচারণাই প্রাধান্য পেয়েছিল। ভোট হবে না, একটি অস্বাভাবিক সরকার আসবে। একটি ভূতের সরকার আসবে। তাই মহাজোটের প্রস্তুতি ছিল, তারাই ভোট করবে। শেষ মুহূর্তে তারা ভোটে এসেছে। বিএনপি–জামায়াতের পুনরুত্থানের ফাঁকফোকরটা বন্ধ করা এই মুহূর্তের প্রধান কাজ।

প্রশ্ন: আওয়ামী লীগ হেফাজতকে ধরল না ছাড়ল? সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে সে আঁতাত করেছে কি না? পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনা তার প্রমাণ কি না?

হাসানুল হক ইনু: না। হেফাজত বা তেঁতুল হুজুরের সঙ্গে কোনো সমঝোতা বা আঁতাত শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ করেনি। যদি করতেন, তাহলে জাসদ সভাপতি হিসেবে আমি ১৪ দলে থাকব কি না, সেটা ভাবতাম। কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি। কওমিকে শিক্ষার মূলধারায় আনা হয়েছে মাত্র। একজন বামপন্থী হিসেবে মনে করি, শতাব্দী পরে তাদের মূলধারায় আনা একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। তবে হ্যাঁ,পাঠ্যপুস্তকসহ অন্যত্র সাম্প্রদায়িকতার যে ছিটেফোঁটা ছাপ লক্ষ করি, আমি তার নিন্দা জানাই। এখানে পরিবর্তন চাই। সম্প্রতি নারীর ওপর তেঁতুল হুজুর একটি নতুন বয়ান দিলে প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিবাদ করেন।

প্রশ্ন: আচ্ছা, ৭ নভেম্বর ট্যাংকের ওপরে আপনাকে দেখা যাওয়ার কথিত আলোকচিত্রটি?

হাসানুল হক ইনু: ডাহা মিথ্যা। একটি বানোয়াট ছবি, যা জামায়াতি ওয়েবসাইট ‘বাঁশের কেল্লা’য় দেখা গিয়েছিল। খুনি মোশতাকের ৮৩ দিনের সরকার জাসদের শতাধিক নেতা-কর্মী হত্যা করেছিল।

প্রশ্ন: কিন্তু ত্বকী খুনের মতো বহু হত্যার বিচার হয়নি। জেনারেল এরশাদের অবৈধ ক্ষমতা দখল মামলার আপনি বাদী ছিলেন, বিচার করেন না কেন। জেনারেল মঞ্জুর হত্যার বিষয়ে কী বলবেন?

হাসানুল হক ইনু: আপনার কথা ঠিক যে সুশাসন চাইলে দুই ধরনের চশমা দিয়ে দেখা বন্ধ করতে হবে। আমি এরশাদের বিচার চাইব। কে বৈধ, কে বৈধ রাষ্ট্রপতি নয়, সেই বিষয়ে মন্ত্রিসভার একটি সিদ্ধান্ত আছে। সেই সিদ্ধান্তমতে, জিয়া ও সম্ভবত এরশাদ বৈধ নন। এ কারণে তাঁরা ভাতা পান না। সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী মামলার রায়ে এরশাদের বিচারের পথ খোলা। তবে আজ কিন্তু আমি এরশাদের প্রশংসাও করব। কারণ, ১৫তম সংশোধনী যাতে অবৈধ ক্ষমতা দখলের সাজা মৃত্যুদণ্ড করা হয়, তাতে সই দিয়ে তিনি সংবিধানের প্রতি আনুগত্য মেনেছেন। যুদ্ধাপরাধের বিচার সমর্থন করেছেন। সে জন্য তাঁর সঙ্গে এখন আমাদের সদ্ভাব।

প্রশ্ন: সমালোচকেরা বলবেন, আপনি সুবিধাবাদী। শ্যাম রাখছেন, কুল রাখছেন।

হাসানুল হক ইনু: না, আমি তাঁকে সম্মান করি। কিন্তু বিচার চাই। আমি শ্যামও রাখছি না, কুলও রাখছি না। শেখ হাসিনার আমি প্রশংসা করি। জাপার সঙ্গে ঐক্য হয়েছে। কিন্তু তাই বলে এরশাদের একটি মামলাও তুলে নেননি।

প্রশ্ন: এটা তো তাঁকে বাগে রাখার কৌশল—

হাসানুল হক ইনু: এখানেই শেখ হাসিনার চমৎকারিত্ব। কওমিকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন, কিন্তু তেঁতুল তত্ত্বকে বৈধতা দিচ্ছেন না।

প্রশ্ন: জাপা ফরমায়েশি বিরোধী দল নয় কি?

হাসানুল হক ইনু: জাপা তো সিদ্ধান্ত নিয়েই গেছে। আওয়ামী লীগের যাঁরা আমাদের বিরোধী দলে বসার কথা ভাবছেন, তাঁদের বলি, ফরমায়েশি বিরোধী দল হব না। শক্তিশালী বিরোধী দলের নামে জঙ্গি–সন্ত্রাসীদের জামাই আদর করে সংসদে আনারও দরকার নেই। সামনের রাজনীতি দুর্নীতি রোধ, উচ্চকক্ষ ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন চালু, ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন (যদিও তা মন্ত্রীদের সমালোচনা নিরোধক নয়), সংবিধানে থাকা গোঁজামিল দূর করব কি করব না, তা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। সংবিধানের দুর্বলতা দূর করার স্বার্থে একটি সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন বা সংসদের ভেতরেই আরেকবার কমিটি হতে পারে।

প্রশ্ন: তথ্য মন্ত্রণালয়–সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে কী করবেন?

হাসানুল হক ইনু: সংবাদমাধ্যমকে রাষ্ট্রের মুখোমুখি করা যাবে না, আমি তথ্যমন্ত্রী হিসেবে এটা রোধে অনেকটা সফল হয়েছি। তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পত্রিকা চালানো না। সম্প্রচার কমিশন ও প্রেস কাউন্সিলের শক্তি বৃদ্ধি পাক, সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তারাই বোঝাপাড়া করবে। রাষ্ট্র বা তার অঙ্গ সকাল–বিকেল ফোন করে কোনটা ছাপবে কোনটা ছাপবে না, এই রকম খবরদারির দায়িত্ব তথ্যমন্ত্রীর বা রাষ্ট্রের নয়। নির্ভয়ে সমালোচনার গ্যারান্টি রাষ্ট্রকে দিতে হবে। সংবাদকর্মীরা রাষ্ট্র বা সরকারের প্রতিপক্ষ নয়, তাঁরা গণতন্ত্রের বন্ধু।

রাজনৈতিক কর্মীর ভুল সহ্য করতে পারলে সংবাদকর্মীর ভুল সহ্য করতে হবে। ডিজিটাল আইন আরও ছয় মাস, এক বছর চলার পরে ত্রুটিবিচ্যুতি ভেসে উঠবে। আইনে গলদ থাকলে তা সংশোধন করা উচিত। আপনারা সংশোধনীগুলো কমিটিতে দিন, আমরা পরীক্ষা–নিরীক্ষা শুরু করি।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা