• মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

  • || ১২ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

ত্রাণের রাজনীতিতে ভেনেজুয়েলায় যুদ্ধের দামামা

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

ভেঙে পড়ার অবস্থায় থাকা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভেনেজুয়েলায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ত্রাণ পৌঁছানো নিয়ে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো ও পশ্চিমা সমর্থিত স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট হুয়ান গুইদোর মধ্যকার চলমান সংকট নতুন মোড় নিয়েছে। সীমান্তে জীবনরক্ষায় প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা আটকে দেওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা বেড়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এ খবর জানিয়েছে।

হুয়ান গুইদোকে সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কলম্বিয়া, কানাডা ও অন্যান্য দেশের পাঠানো প্রায় ৬০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ত্রাণ সহযোগিতা ভেনেজুয়েলায় প্রবেশ করতে না দেওয়ার ব্যাপারে মাদুরো দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এমনকি কলম্বিয়া সীমান্তের কুকুতা সেতু দিয়ে প্রবেশ করার জন্য সাতটি ট্রাক ত্রাণ পৌঁছানোর পরও মাদুরো সমর্থকরা জানিয়েছেন, প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগ করে এসব প্রবেশ রুখে দেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভেনেজুয়েলাবিষয়ক বিশেষ দূত এলিয়ট আব্রামস বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ভেনেজুয়েলার জনগণের জন্য ত্রাণ পাঠানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বিরোধীদের সমর্থকরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হলেও এক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ করবে না। তিনি বলেন, ভেনেজুয়েলা সীমান্তে আমরা ত্রাণ পাঠাবো। আমাদের আশা থাকবে কিছু পরিমাণ ত্রাণ দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবে। আমি মনে করি না যে, আমরা বা ব্রাজিলিয়ান কিংবা কলম্বিয়ানরা জোরপূর্বক ত্রাণ প্রবেশ করানোর চেষ্টা করবে।

২০১৩ সালে বামপন্থী হুগো চ্যাভেজের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন মাদুরো। জানুয়ারিতে বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশটির বিরোধী নেতা হুয়ান গুইদো সমর্থকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। গুইদো মাদুরোকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে নিজেকে স্বঘোষিত অন্তর্বতীকালীন প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন। সঙ্গে তাকে সমর্থন জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত ৪৭টি দেশ তাকে সমর্থন জানিয়েছে। মাদুরোর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া, চীন, তুরস্ক ও কিউবা। এই পরিস্থিতিতে বিরোধীদের পরিকল্পনা হচ্ছে, মাদুরোর ক্ষমতায় টিকের থাকার জন্য প্রয়োজনীয়  সেনাবাহিনীকে পরীক্ষার মুখে ঠেলে দেওয়া ত্রাণ প্রবেশের চেষ্টার মাধ্যমে।

বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় গুইদো বলেছেন, ভেনেজুয়েলার সেনাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারা কি জনবিচ্ছিন্ন একজনকে সমর্থন জানানো অব্যাহত রাখবে কাউকে রক্ষায় পদক্ষেপ নেবে না। নাকি তারা শুধু সংবিধান নয় মানবতার পক্ষে দাঁড়াবে।

বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই অচলাবস্থায় মানবিক ত্রাণ সহযোগিতাকে রাজনৈতিক অস্ত্র বানানো হচ্ছে। এতে করে এই সহযোগিতা মাদুরো ও তার বিরোধিদের দাবার ঘুটিতে পরিণত হয়েছে।

এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টকে গুইদো বলেন, ‘অতিসত্ত্বর যদি ত্রাণ না পৌঁছায় তাহলে ভেনেজুয়েলার আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে। কিছু ত্রাণ খুব দ্রুতই পৌঁছাবে।’ তবে কলম্বিয়া, ব্রাজিল ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চল দিয়ে কীভাবে এই ত্রাণ ভেনেজুয়েলায় পৌঁছাবে তা ব্যাখ্যা করেননি তিনি। গুইদো বলেছেন, এটা একটা কঠিন লড়াই হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মাদুরো যদি নিজের অবস্থান থেকে পিছু না হটেন তাহলে সীমান্তরক্ষীসহ সেনাবাহিনীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা ত্রাণ আটকে দেওয়ার নির্দেশ পালন করবে কি করবে না।

কারাকাসভিত্তিক নির্বাচনি ও রাজনৈতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডাটাঅ্যানালাইসিসের পরিচালক লুইস ভিসেন্ট লিও বলেন, এটা রাজনৈতিক চাপে পরিণত হয়েছে। পরিস্থিতি সরকারকে ত্রাণ গ্রহণে বাধ্য করার সুযোগ ও সামরিক বাহিনী তা আটকানোর ইচ্ছাকে পরীক্ষার মুখে ফেলে দিয়েছে।

ত্রাণ বহরের বিরুদ্ধে সরকার পুরো মাত্রায় প্রোপাগান্ডা যুদ্ধ শুরু করেছে। সামাজিক যোগাযোমাধ্যম ও ভিডিওতে মাদুরো সমর্থকরা বিরোধীদের যুক্তরাষ্ট্রের দখল অভিযানে গুইদোকে পুতুল হিসেবে তুলে ধরছেন। সরকার সমর্থিত একটি ওয়েবসাইটের একটি ভিডিওতে বলা হয়েছে, ভেনেজুয়েলাকে ধ্বংস করতে বিদেশি শান্তিরক্ষীরা রওনা দিয়েছে। ভিডিওর উপসংহারে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক ত্রাণ কোনও সহযোগিতা করবে না।

বৃহ্সপতিবার কারাকাসে সরকার সমর্থকদের এক সমাবেশে মাদুরো ‘ভেনেজুয়েলা থেকে হাত গুটাও’ লেখা একটি প্ল্যাকার্ড তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে আমি বলছি, ওয়াশিংটনে আপনাদের প্রতিনিধি আমাদের সীমান্তে সেই ঘৃণা উসকে দিতে চান যা ভিয়েতনামে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারা ভেনেজুয়েলাকে দখল ও কুক্ষিগত করতে চায়।

কলম্বিয়ার ভেনেজুয়েলা সীমান্তবর্তী শহর কুকুতায়  প্রথম ধাপের মার্কিন ত্রাণ পৌঁছানোর খবর নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।  তবে এখনও ভেনেজুয়েলায় প্রবেশমুখী তিয়েনদিতাস সেতু সেনাবাহিনী বন্ধ করে রাখায় সেখানেই আটকে আছে ত্রাণবাহী লরিগুলো। বৃহস্পতিবার পৌঁছানো ওই লরিগুলোতে খাবার ও ওষুধ রয়েছে। কলম্বিয়ান পুলিশ মোটরসাইকেলে করে সেগুলোকে নিরাপত্তা দিয়ে ভেনেজুয়েলা পর্যন্ত নিয়ে যায়। তবে সীমান্ত থেকে ত্রাণগুলো কিভাবে ভেনেজুয়েলানদের কাছে পৌঁছাবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু জানা যায়নি।

এর আগেই ওই সেতুর সামনে কার্গো কন্টেইনার দিয়ে পথ আটকে রেখেছে সেনাবাহিনী। এটাই কলম্বয়ার কুকুতা ও ভেনেজুয়েলার উরেনা শহরের সংযোগপথ।

সীমান্তে ভেনেজুয়েলা অংশের এক অ্যাক্টিভিস্ট নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ না করে জানান, কাছের শহর দুটি হচ্ছে সান আন্তোনিও ও উরেনা মাদুরো সমর্থক মেয়রদের নিয়ন্ত্রণে। ওই দুটি শহরের কর্মকর্তারা নির্দেশ দিয়েছেন সরকার সমর্থকদের সশস্ত্র বেসামরিক মিলিশিয়া বাহিনী গড়ে তোলার জন্য। এদের লক্ষ্য হবে সীমান্ত দিয়ে মানবিক ত্রাণ প্রবেশ ঠেকানো।

এক সাক্ষাৎকারে কলম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্লোস হোমস ত্রুজিলো জানিয়েছেন, ত্রাণ বহরের সঙ্গে সেনা পাঠানোর বিষয়টি তারা বিবেচনা করছেন না। কিন্তু যদি ভেনেজুয়েলা ত্রাণ প্রবেশ করতে না দেয় তাহলে তারা অপরাধ করছে, ভয়াবহ অপরাধ।

বৃহস্পতিবার মাদুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বে ‘কন্টাক্ট গ্রুপের’ সংলাপের আহ্বানকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু গুইদো ও উরুগুয়ে, মেক্সিকো বাদে বেশ কয়েকটি লাতিন আমেরিকার দেশ আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা