• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনছে সরকারের ‘১৬১২১ অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা’

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২২  

ঞ্জু আহমেদ পেশায় একজন পুলিশ সদস্য। কর্মরত আছেন রাজশাহী পুলিশ লাইনে।

গেল কিছু দিন আগে বাজার থেকে ৬৫০ টাকায় ১ কেজি ৩৫০ গ্রাম ওজনের দুটি দেশি মুরগি কিনেছিলেন। মূল্য তালিকায় প্রতিকেজি দেশি মুরগির দাম ৪৮০ টাকা লিখে রাখা হয়েছিল। কিন্তু এরপরও বিক্রেতা তার কাছ থেকে ৫০০ টাকা দরে আদায় করেন। প্রথমে বিষয়টি না বুঝতে পারলেও পরে মূল্য তালিকা দেখে প্রতিবাদ জানান ভোক্তা। শেষে তার কাছে মুরগি বিক্রিতে আপত্তি জানান বিক্রেতা।

বাধ্য হয়ে ওই সময় মুরগি নিয়ে বাড়ির পথ ধরেন রঞ্জু। তবে আসার সময় কিন্তু মুরগির মূল্য তালিকার ছবি তুলে আনতে একটুও ভুল করেননি। পরে তিনি সেই ছবি দিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ে ওই বিক্রেতার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ ঠুকে দেন। এরপর শুনানি হলো। এতে মুরগির দাম মোটের ওপর ২৬ টাকা বেশি রাখায় ওই বিক্রেতাকে শেষ পর্যন্ত ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ঘটনাটি ছিল গত ১৯ এপ্রিলের।

ঘটনা-২: রাজশাহী মিষ্টান্ন ভাণ্ডার থেকে ১৯০ টাকায় ১ কেজি ৪০০ গ্রাম দই কিনে ছিলেন- ক্রেতা সৈয়দ মাহমুদ আহমেদ। কিন্তু ওজনে কম পেয়েছিলেন ৩০০ গ্রাম। এই ঘটনায় স্বনামধন্য রাজশাহী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ক্রেতার লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ এপ্রিল এই অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
ঘটনা-৩: সাতক্ষীরার শ্যামনগর এলাকার বাসিন্দা জুলকার নাঈম। যাত্রীবাহী বাসে করে রাজশাহী থেকে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তার। এজন্য আগাম টিকিটও কেটেছিলেন আরএম পরিবহনে। নির্দিষ্ট সময়ে মহানগরীর ভদ্রা বাস স্টপেজে দাঁড়িয়েও ছিলেন বাসের জন্য। কিন্তু তাকে রেখে ‘রিজার্ভ ভাড়া’ নিয়ে চলে যায় বাস।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। গত ২২ মে দুপুরে দুই পক্ষকে জেলা কার্যালয়ে শুনানিতে ডাকা হয়। শুনানিতে দোষ স্বীকার করে নেন আরএম পরিবহন কর্তৃপক্ষ। পরে বাস কোম্পানিকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ঠিক এভাবেই কোথাও প্রতারিত হলে বা ঠকলেই ভোক্তারা এখন সোজা গিয়ে অভিযোগ করে দিচ্ছেন- সংশ্লিষ্ট এই সরকারি দপ্তরে। হাতে হাতে পাচ্ছেন প্রতিকারও। সেই সঙ্গে বাড়তি পুরস্কার হিসেবে নিজের হাতে আসছে জরিমানার ২৫ শতাংশ নগদ টাকা।

আর এমন অভিযোগ বা ঘটনা কেবল তিনটি নয়; ভুড়িভুড়ি। কেবল গেল তিনমাসেই ভোক্তাদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ এসেছে মোট ২৮টি। এর মধ্যে ২৫টি অভিযোগই অভিযোগকারীর পক্ষে নিষ্পত্তি করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়।

তথ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রের এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মানুষের এখন তাদের অধিকার সম্পর্কে আগের চেয়েও অনেক বেশি সচেতন। তারা সরকারি বিভিন্ন সেবা সম্পর্কে নিয়মিতই খোঁজ-খবর রাখেন। অনেকে নিজে সেবা গ্রহণ করে সুফল পান। পরে সেই সুফলের কথা পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশী এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের জানান।

এভাবে প্রত্যাহিক জীবনে কেনাকাটা থেকে শুরু করে সরকারি বা বেসরকারি যে কোনো সেবা থেকে বঞ্চিত হলে বা প্রতারণার স্বীকার হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দ্বারস্থ হন। আর এই ক্ষেত্রে অনেকটা নীরবেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে সরকারের ‘অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা’। এটি জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের চার নম্বর টুলস।

এটি ২০১৭ সাল থেকে বাধ্যাতামূলকভাবে সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইটে সংযুক্ত করা হয়েছে। তাই যে কেউ একটু সচেতন হলে ঘরে বসেই অনলাইনেই প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করতে পারছেন। অনেকগুলোর মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সরকারের এমনই একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান। হালে পণ্য বিপণন, দ্রবমূল্যের অসামঞ্জস্য, অস্থির বাজার ব্যবস্থা, অবৈধভাবে পণ্য মজুতের এই মৌসুমে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটির অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা’।

সঙ্গত কারণে কিছু ঘটলে তাই অনেকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের শরণাপন্ন হচ্ছেন। আর প্রতিকার পাওয়ায় আস্থার প্রতীকে পরিণত হতে চলেছে সরকারি বিধিবদ্ধ এই প্রতিষ্ঠানটিও।

বর্তমানে সব পণ্য এবং ওষুধসহ ১০ রকমের সেবা নিয়ে সরকারি অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার মাধ্যমে সুফল ভোগ করতে পারছেন ভোক্তারা। সরকারের www.dncrp.gov.bd এই ওয়েবসাইটে গিয়ে পাঁচটি অ্যাকাউন্টাবিলিটি টুলসের মাধ্যমে অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা ছাড়াও জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, তথ্য অধিকার, সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি ও বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি সম্পর্কে জানতে পারছেন সাধারণ মানুষ।

অনলাইন ছাড়াও ডাকযোগে বা সরাসরি অফিসে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করা যায়। তবে অবশ্যই অভিযোগের সঙ্গে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রশিদ সংযুক্ত থাকতে হবে। এছাড়া এতে অভিযোগকারীর নাম, সম্পূর্ণ ঠিকানা, মোবাইল নম্বর উল্লেখ করতে হবে। আর অভিযোগ করতে হবে অপরাধ সংঘটিতের ৩০ দিনের মধ্যেই।

অভিযোগকারী হতে হলে: ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ২ (৩) অনুযায়ী- যেকোনো ভোক্তা, একই স্বার্থসংশ্লিষ্ট এক বা একাধিক ভোক্তা, কোনো আইনের অধীন নিবন্ধিত কোনো ভোক্তা সংস্থা, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বা তার পক্ষে অভিযোগ দায়েরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা, সরকার বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো সরকারি কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীই অভিযোগকারী বলে বিবেচিত হবেন।

অভিযোগ দাখিলের পদ্ধতি: ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬ (১) অনুযায়ী- যেকোনো ব্যক্তি; যিনি, সাধারণভাবে একজন ভোক্তা বা ভোক্তা হতে পারেন, এই অধ্যাদেশের অধীন ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য সম্পর্কে মহাপরিচালক বা মহাপরিচালকের কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির কাছে লিখিত অভিযোগ করতে পারবেন। এছাড়া সংশ্লিষ্ট জেলা বা বিভাগীয় কার্যালয়েও অভিযোগ করা যাবে।

জরিমানার অর্থের ২৫ শতাংশ প্রাপ্তি: দায়ের করা আমলযোগ্য অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত ও জরিমানা আরোপ করা হলে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬ (৪) অনুযায়ী আদায় করা জরিমানার ২৫ শতাংশ অভিযোগকারীকে দেওয়া হয়।

হটলাইন: জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের হটলাইন সেবা নম্বর- ১৬১২১ এই নম্বরটি চালু রয়েছে। হটলাইনের মাধ্যমে ভোক্তা-ব্যবসায়ীরা এই সংক্রান্ত তাৎক্ষণিক তথ্য, দাখিল করা অভিযোগের অগ্রগতি ও অভিযোগ জানাতে পারেন।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান-আল-মারুফ বাংলানিউজকে বলেন, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল হলো দুর্নীতি ঠেকাতে নাগরিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সততা নিশ্চিতকরণে সরকার প্রণীত একটি সুশাসন কৌশল। সংবেদনশীলতার সঙ্গে সোশ্যাল অ্যাকাউন্টাবিলিটি টুলস অর্থাৎ জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, তথ্য অধিকার, সেবা প্রদান প্রতিশ্রুতি, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থা ও বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি এই পাঁচটি বিষয় এখন প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মধ্যে জিআরএস বা অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থার মাধ্যমে সহজে সরকারি সেবা সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ করতে পারা যায়। ডাকযোগে, ইমেইলে বা সরাসরি অফিসে এসেও অভিযোগ দায়ের করা যায়।

তিনি আরও বলেন, ভোক্তা অধিকার সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা ভোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষণে যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা রোধে বদ্ধপরিকর।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা