• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে সাতক্ষীরার পিছিয়ে পড়া ১৩টি গ্রামে

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর ২০২১  

আলোকিত হচ্ছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৩টি গ্রামের দলিত জনগোষ্ঠীর ৭৩১টি পরিবার। পিছিয়ে পড়া এসব জনগোষ্ঠীর জীবনে লেগেছে আধুনিকতার ছোয়া। নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন, ন্যাপকিন ব্যবহার ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতায় এতদিন তারা ছিল বঞ্চিত।

এলাকা ঘুরে জানা গেছে, দলিত এনজিও ওয়াশ এসডিজির প্রকল্প ২০১৮ সাল থেকে সদর উপজেলার আগরদাঁড়ী, বল্লী ও ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নে ওয়াশ কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানার ব্যবহার, নারীদের পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে নিরাপদ ন্যাপকিন ব্যবহার, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও সাবান দিয়ে হাত ধৌত করার কেন দরকার সে সম্পর্কে এলাকার দলিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে। এতে করে ওই এলাকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে সদর উপজেলার এই ১৩টি গ্রামের দলিত জনগাষ্ঠীর ৭৩১টি পরিবারের মধ্যে ৮০ শতাংশ পরিবারে এখনো গভীর নলকুপের অভাব রয়েছে। তারা বেশিভাগ মানুষ নিরাপদ পানি সংগ্রহ করে ও কিনে পান করে।

আগরদাড়ি ইউনিয়নের বাবুলিয়া ঋষিপাড়া, ইন্দ্রিরা কায়পুত্রপাড়া, চুপড়িয়া ঋষিপাড়া, রামেরডাঙ্গা ভগবেনেপাড়া ও কাশেমপুর হাজামপাড়ার প্রায় ২৫২টি পরিবারের নারী-শিশু মিলে প্রায় ১১৬০ জন মানুষের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন, মহিলারা পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে নিরাপদ ন্যাপকিন ব্যবহার, সাবান ব্যবহার ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

বল্লী ইউনিয়নের কাঁঠালতলা ঋষিপাড়া, মুকুন্দপুর কারিকরপাড়া ও রায়পুর ভগবেনেপাড়ার ১৭৫টি পরিবারের প্রায় ৮৭৫ জন মানুষ নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া ঋষিপাড়া, বলাডাঙ্গা কারিকরপাড়া, মাধবকাঠি কলোনীপাড়া, আখড়াখোলা মোড়লপাড়া ও ওয়ারিয়া কায়পুত্র পাড়ার ৩০৪টি পরিবারের ১৫২০ জনের মধ্যে ৮০শতাংশ মানুষ অগভীর নলকূপের পানি ব্যবহার না করলেও নিরাপদ পানি সংগ্রহ করে ও কিনে ব্যবহার করে। ৩টি ইউনিয়নের ১৩টি পাড়ার যেসব অগভীর নলকূপ আছে সে গুলোর অধিকাংশই আর্সেনিকযুক্ত। এসব পাড়ার অনেকের আর্সেনিক ও আয়রনযুক্ত নলকূপ এখনো পাকা করা হয়নি। নলকূপের গোড়া ময়লা আবর্জনায় ভরা।
আগরদাড়ী ইউনিয়নের কাশেমপুর হাজামপাড়ার সেলিনা বেগম ও রফিকুল জানান, নিরাপদ পানির সমস্যা প্রকট এবং স্যানিটেশনের অবস্থা মোটামুটি ভালো। তাদের কাছ থেকে জানা গেছে যে, দলিত কর্মীদের মাধ্যমে সচেতন হওয়ার ফলে এরা ফিল্টারের পানি ক্রয় করে পান করে।

চুপড়িয়া রিশিপাড়ায়, কোন গভীর নলকুপ নেই। তারা দুর থেকে নিরাপদ পানি সংগ্রহ করে এবং কিছু সংখ্যক মানুষ পানি কিনে পান করে। কিন্তু স্যানিটেশনের অবস্থা মোটামুটি ভালো। ৯৫ভাগ মানুষ সাবান দিয়ে হাত ধৌত করে খাবার খায়।

বাবুলিয়া রিনা দাস, রামপ্রসাদ দাস, আশালতা দাস, দিপালী দাস, মঞ্জুরী দাস, কল্যানী দাস, সম্পা দাস জানান, এখানে দলিত ভিলেজ কমিটির সদস্য ৩০ জন। এই এলাকায় কোন গভীর নলকুপ নেই। কিন্তু এখানে শতভাগ মানুষ নিরাপদ পানি পান করে। স্যানিটেশনের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো।

ইন্দ্রিরা কায়পুত্রপাড়ার সাধনা বিশ^াস ও চন্দনা বিশ^াস জানান, এখানে বেশিভাগ মানুষ দুর থেকে পানি সংগ্রহ করে অথবা অনিরাপদ পানি পান করতো কিন্তু স্যানিটেশনের অবস্থাও ভালো ছিল না। কেউ সাবান দিয়ে হাত ধৌত করত না। কিন্তু দলিত সংস্থার কর্মীরা তাদেরকে সচেতনতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসুচী বাস্তবায়নের ফলে দলিত ওয়াশ কমিটির সদস্যরা উদ্বুদ্ধ হয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ২টি গভীর নলকুপ স্থাপন করে। ফলে আগরদাড়ী ইউনিয়নের ইন্দিরা কায়পুত্রপাড়ার সকল দলিত ও প্রান্তিক ও জনগোষ্ঠীর মানুষরা এখন শতভাগ মানুষ নিরাপদ পানি পান করে। স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ব্যবহার করে। মানুষ সচেতন হয়েছে। রামেরডাঙ্গা ভবেনেপাড়ার এলাকা একই অবস্থা। তারা এসব কথা তুলে ধরেন। কিন্তু এদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে । বল্লী ইউনিয়নের মকন্দপুর জেসমিন ও রোকছানা জানান, এখানে দুর থেকে পানি সংগ্রহ করে এবং নিরাপদ পানি কিনে পান করতে হয়।

কাঠালতলার সন্ধা রাণী দাস ও মনিমালা জানান, এখানকার পানি বেশিভাগ নলকূপ আর্সোনিকযুক্ত। তবে বেশিভাগ দুর থেকে পানি সংগ্রহ করে এবং নিরাপদ পানি কিনে পান করতে হয়।

ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া ঋষিপাড়ার সুমন দাস, সাধন দাস, রাধারানী ও আরতী রানী জানান, এখানে কোন গভীর নলকুপ নেই। এখানকার মানুষ সবাই ফিল্টারের পানি পান করে। স্যানিটেশনের অবস্থার আরো ভালো অবস্থানে আনতে হবে।

মাধবকাঠি কলোনীপাড়ার তহমিনা খাতুন, শাহানারা খাতুন ও সাবিনা বেগম জানান, এখানকার মানুষ দুর থেকে নিরাপদ পানি নিয়ে এসে তা পান করে এবং অনেকেরই নিরাপদ পানি কিনে পান করতে হয়।

একই কথা বলেন, বলাডাঙ্গার কারিকরপাড়ার মাশকুরা, পারুল, রন্তা, জামিলা, মোসলেমা, ওয়ারীয়ার কায়পুত্রপাড়ার কাজল, মিনতী, সুচিত্রা, পাননা ও রুপা। তারা জানান, তাদের এলাকায় কোন গভীর নলকুপ নেই। এখানকার মানুষ দুর থেকে নিরাপদ পানি নিয়ে পান করে এবং অনেকে নিরাপদ পানি কিনে পান করতে হয়।

তিন ইউনিয়ন ছাড়াও অন্যন্যা ইউনিয়নগুলোতে নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা খুবই নাজুক অবস্থা। তাই এই তিন ইউনিয়ন ছাড়াও অন্যান্য ইউনিয়নে নিরাপদ পানি, স্বাস্থ্য সম্মত স্যানিটেশন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার উপরে দলিত ওয়াশ এসডিজি কর্তৃপক্ষ কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান স্থানীয়রা।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলীর সহকারী কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, ২০২১-২২ অর্থ বছরের জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী তত্ত্বাবধানে ৩টি ইউনিয়নে ২০৭ টি নিরাপদ পানি গভীর নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে। আগরদাড়ী ৭০টি, বল্লী ৬৯টি ও ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নে ৬৯টি নিরাপদ পানির নলকুপ স্থাপন করা হয়। তবে আমরা প্রত্যেক ইউনিয়নে ৯০ ভাগ নিরাপদ পানি ব্যবস্থা করেছি। যেস্থানে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা নেই, সেখানে পাইপ লাইনের মাধ্যমে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে নিশিত করেন।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা