• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ৫ লাখ টাকার নোট ৯০ হাজারে বিক্রি

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২৩  

ঈদের বাজার টার্গেট করে জাল নোট বিক্রির জন্য ফেসবুকে এ গ্রেড জাল নোট, টাকা চাই, জাল নোট, জাল টাকা বিক্রি করি, জাল টাকার ডিলার, জাল টাকা বিক্রয়কেন্দ্র, রিয়েল সেলস্, টাকা বিজনেসসহ বিভিন্ন নামে পেজ ও গ্রুপ খুলে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এরপর জাল টাকা কিনতে আগ্রহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে জাল টাকা ডেলিভারি দিচ্ছিল শাহজাদা আলম।

চক্রটি ইতোমধ্যে জাল টাকার বড় ধরনের ৪টি ডেলিভারি দিয়েছে। সর্বশেষ গত ১৫ জুন 'এ গ্রেড জালনোট' গ্রুপে বিজ্ঞাপন দিয়ে পাঁচ লাখ টাকার ৫০০, ২০০ ও ১০০ টাকার জাল নোটের একটি চালান ডেলিভারি দেয় শাহজাদা। পাঁচ লাখ টাকার জাল নোট বিক্রির বিনিময়ে নেন ৯০ হাজার টাকা।

সর্বশেষ গতকাল সোমবার (১৯ জুন) দুই লাখ টাকার জালনোট ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতিকালীন সময় টাকা এবং মেশিন ও সরঞ্জামাদিসহ র‌্যাবের কাছে দুই সহযোগীসহ হাতেনাতে ধরা পড়েন তিনি।

রাজধানীর উত্তরখান থানাধীন উজাপাড়া (মাস্টারপাড়া) এলাকায় অভিযান চালিয়ে জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রের অন্যতম হোতা শাহজাদা আলমকে (৩৩) গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৩ এর একটি দল। গ্রেপ্তার দুই সহযোগী হলেন- মাহেদী হাসান (১৯) ও আবু হুরায়রা ওরফে তুষার (২২)।

মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুরে র‌্যাব-৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক(সিও) লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, সম্প্রতি ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে জালনোটের অবাধ কারবারের তথ্য পাওয়ার পর র‌্যাব-৩ বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গতরাতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল তাদের গ্রেপ্তার করে। এসময় তাদের হেফাজত থেকে ৯০০টি ২০০ টাকার জালনোট এবং ২০০টি ১০০ টাকার জালনোট মিলিয়ে দুই লাখ জাল টাকা উদ্ধার করা হয়।

এছাড়া জালনোট প্রস্তুতের কাজে ব্যবহৃত ১টি ল্যাপটপ, ১টি ল্যাপটপ ব্যাগ, ১টি কিবোর্ড, ২টি মাউস, ২টি ল্যাপটপ চার্জার, ১টি পেনড্রাইভ, ১০টি বিশেষ মার্কার পেন, টাকা ছাপানোর কাজে ব্যবহৃত প্রিন্টার, টাকার ডিজাইন প্রিন্ট করার জন্য ৪টি টোনার কার্টিজ, ২ রিম সাদা কাগজ, ১টি ফয়েল পেপার রোল, ৩টি স্টিলের স্কেল, ৩টি এন্টি কাটার, ১টি কাঁচি, ৪টি মোবাইল, ৮টি সিমকার্ড, ১টি এনআইডি কার্ড ও ৩টি মানিব্যাগ জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, গ্রেপ্তার শাহজাদা, মাহেদী এবং তুষার মিলে গত ৬ মাস যাবৎ জাল টাকার ব্যবসা শুরু করে।

তিনি আরও জানান, মাহেদী পূর্ব থেকেই ফটোশপ এবং গ্রাফিক্সের ছোটখাটো কাজ জানতো। সেটি কাজে লাগিয়ে ইউটিউব থেকে জাল টাকা বানানোর প্রক্রিয়া দেখে এবং ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিত হওয়া দুই বন্ধু শাহজাদা ও তুষারের সহযোগিতায় জাল টাকা তৈরির কাজ শুরু করে। শাহজাদা এবং তুষার দীর্ঘদিন ধরেই জাল টাকা কেনাবেচার কাজ করে আসছিল। মাহেদীকে সঙ্গে নিয়ে তারা কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে জাল টাকা বানানোর কাজ শুরু করে।

জাল টাকা তৈরি সম্পর্কে র‍্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, প্রথমত অনলাইন থেকে বাংলাদেশি বিভিন্ন নোটের ছবি ডাউনলোড করে তাদের ল্যাপটপে সংরক্ষণ ও প্রিন্টারের সাহায্যে প্রিন্ট করে। পরবর্তীতে সেসব ছবিগুলো এ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করে এপিঠ-ওপিঠ সমন্বয় করে লিপি গোল্ডের মোটা ও পিচ্ছিল অফসেট কাগজের উপর এক পাতায় চারটি নোট প্রিন্ট করে। এরপর সেই কাগজে তারা গোল্ডেন কালার মার্কার দিয়ে নিরাপত্তা সুতার আদলে মার্কিং করে। সবশেষে তারা স্টিলের স্কেল এবং এন্টিকাটার এর সাহায্যে জাল নোটগুলো কেটে বান্ডেল করে বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করে।

তিনি আরও বলেন, প্রক্রিয়াটি সূক্ষ্মভাবে সম্পন্ন করতে তারা বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের কাগজ ব্যবহার করে সবশেষ লিপি গোল্ডকে বেছে নেয়। এভাবে ৫০টি নোটের একটি বান্ডেল তৈরিতে তাদের খরচ হয় মাত্র ২০০ টাকা। লাখ টাকা সমমূল্যের জাল তৈরিতে খরচ হয় দুই হাজার টাকা।

ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে জালনোট বিক্রি

জালনোট বিক্রয়ের জন্য শাহজাদা এবং তুষার মিলে ফেসবুকে জাল টাকা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য এ গ্রেড জালনোট, টাকা চাই, জালনোট, জাল টাকা বিক্রি করি, জাল টাকার ডিলার, জাল টাকা বিক্রয়কেন্দ্র, রিয়েল সেলস্, টাকা বিজনেস নামক ফেসবুক গ্রুপে বিজ্ঞাপন দিয়ে আগ্রহীদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে সরাসরি বিক্রি করে। চক্রটি বিগত সময়ে জাল টাকার বড় ধরনের ৪টি ডেলিভারি করেছে বলে জানান তিনি।

সাবেক বিজিবি সদস্য শাহজাদা চক্রের মূলহোতা

শাহজাদা পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া থানাধীন এলাকার বোচাগছ গ্রামের মইনুল হকের ছেলে। তিনি ২০০৮ সালে বিজিবিতে যোগদান করেন এবং ২০২০ সালে নৈতিক স্থলন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে চাকুরিচ্যুত হন। এরপর থেকে তিনি বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম ও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

২০২২ সাল থেকে তিনি জাল টাকা প্রস্তুতকারী চক্রের সঙ্গে কাজ করে আসছিলেন বলে জানা যায়। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ফেসবুকে জাল টাকা বিক্রির পেজ থেকে পরিচিত হয়ে মাহেদী এবং তুষারকে নিয়ে সে নিজেই জাল টাকা প্রস্তুতের চক্র গড়ে তোলে।

জালনোট তৈরির লক্ষ্যে উত্তরায় বাসা ভাড়া

মাহেদী এবং তুষারকে নিয়ে উত্তরখানের ভাড়া বাসায় উঠেন। এখান থেকেই তারা তাদের চক্রের জাল টাকার কারবার চালাতে থাকেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ভয়ে সম্প্রতি ওই বাসা ছেড়ে গাজীপুরে আরেকটি ভাড়া বাসায় চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন।

গার্মেন্টস ছেড়ে জাল টাকার কারবারে তুষার

গ্রেপ্তার তুষার আগে গাজীপুরের কাশিমপুরে গার্মেন্টসে চাকুরি করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে পুরোদমে জাল টাকার কারবারে জড়ান। তুষার মূলত ডেলিভারির কাজ করতেন। শাহজাদার বাসায় থাকার পাশাপাশি পূর্বতন কর্মস্থল গাজীপুর কাশিমপুরে সপ্তাহে ২/৩ দিন গিয়ে জাল টাকার বিক্রয়ের জন্য কাস্টমার রেডি করতেন। এভাবেই তাদের জাল টাকার ব্যবসা ও ডেলিভারি চলতে থাকে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র‍্যাব কর্মকর্তা।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা