• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

২০০ কিলোমিটারের ছয়টি মেট্রোরেলের কাজ শুরু করেছে সরকার

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১ মার্চ ২০২০  

২০৩০ সালের মধ্যে রাজধানী ঢাকাকে যানজটমুক্ত রাখতে পৌনে ২০০ কিলোমিটারের ছয়টি মেট্রোরেলের কাজ শুরু করেছে সরকার। আগামী বছরের ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধন হবে প্রথম পর্বের এমআরটি লাইন-৬ নামের মেট্রোরেল। বাকি ৫টির কাজ পর্যায়ক্রমে ২০২৬, ২০২৮ ও ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পন্ন হবে। সবগুলো মেট্রোরেল বাস্তবায়ন হলে প্রতিদিন প্রায় ৫২ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। এর ফলে পাল্টে যাবে ঢাকা শহরের যানজটের চিত্র। 

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তিনটি পর্বে ৬টি লাইন করা হবে। প্রথম পর্বে রয়েছে ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬। যেটি উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত উড়াল রেল। এর উদ্বোধন ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। পরির্পূণ কাজ সমাপ্তির বছর ধরা হয়েছে ২০২৪ সাল। দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে, এমআরটি লাইন-১। যেটি উড়াল-পাতাল রেল ও এমআরটি লাইন-৫। এ দুটি লাইনের কাজ সমাপ্তি হবে ২০২৬ ও ২০২৮ সালে। আর তৃতীয় পর্বে রয়েছে এমআরটি লাইন-৫ এর সাউদার রুট উড়াল-পাতাল রেল, এমআরটি লাইন-২ উড়াল-পাতাল রেল ও এমআরটি লাইন-৪ উড়াল রেল। এই তিনটি লাইনের কাজ শেষ হবে ২০৩০ সালে।

রাজধানীর প্রতিটি এলাকার যাত্রীরা যাতে মেট্রোরেলের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন সে অনুযায়ী এর নকশা করা হয়েছে। মেট্রোরেল ছয়টির রুট ও স্টেশনগুলো হলো: 

লাইন-৬ (উত্তরা-মতিঝিল): এ রুটে মোট ১৬টি স্টেশন রাখা হয়েছে। এগুলো হল- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, আইএমটি, মিরপুর সেকশন-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম ও মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংক।

লাইন-১ এর বিমানবন্দর রুটের এলাইনমেন্ট: বিমানবন্দর, বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচারপার্ক, নতুন বাজার, উত্তর বাড্ডা, বাড্ডা, হাতিরঝিল পূর্ব, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত। 

পূর্বাচল রুটের এলাইনমেন্ট: নতুন বাজার, যমুনা ফিউচারপার্ক, বসুন্ধরা আবাসিক, পুলিশ অফির্সাস হাউজিং সোসাইটি, মাস্তুল পূর্বাচল পশ্চিম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল পূর্ব, পূর্বাচল টার্মিনাল হয়ে পিতলগঞ্জ ডিপো পর্যন্ত। 

লাইন-২ রুটের এলাইনমেন্ট: গাবতলী, বসিলা, মোহাম্মদপুর বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড, সাত মসজিদ রোড, ঝিগাতলা, ধানমন্ডি-২, সাইন্স ল্যাবরেটরি, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, আজিমপুর, পলাশী, শহীদ মিনার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, পুলিশ হেড কোয়ার্টার, গোলাপ শাহ মাজার, বঙ্গভবনের উত্তর পাশের রাস্তা, মতিঝিল, আরামবাগ, কমলাপুর, মুগদা, মান্ডা, ডেমড়া হয়ে চট্টগ্রাম রোড পর্যন্ত। 

লাইন-৫ এর নর্দান রুটের স্টেশন: হেমায়েতপুর, বালিয়াপুর, বিলামালিয়া, আমিনবাজার, গাবতলী, দারুস সালাম, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৪, কচুক্ষেত, বনানী, গুলশান-২, নতুন বাজার ও ভাটারা। 

লাইন-৫ এর সাউদার রুটের এলাইনমেন্ট: গাবতলী, টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজ গেট, আসাদ গেট, রাসেল স্কয়ার, পান্থপথ, সোনারগাঁও, হাতিরঝিল পশ্চিম, নিকেতন, রামপুরা, আফতাব নগর পশ্চিম, আফতাব নগর সেন্টার, আফতাব নগর পূর্ব হয়ে দাশেরকান্দি।

লাইন-৪ : কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ের পাশ দিয়ে প্রায় ১৬ কিলোমিটার র্দীঘ উড়াল মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন।

দেশের প্রথম মেট্রোরেল উত্তরা থেকে মতিঝিল এমআরটি লাইন-৬ এর সেবাসমূহ ও অগ্রগতি সম্পর্কে জনসংযোগ কর্মকর্তা আফতাব মাহমুদ গালিব জানান, মেট্রোরেলে এই লাইনে উত্তরা থেকে মতিঝিলে যেতে লাগবে মাত্র ৩৮ মিনিট। ঘণ্টায় দুই দিক থেকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত স্টেশন হবে ১৬টি। শুরুতে ২৪ সেট ট্রেন দিয়ে মেট্রোরেল চালু করার হবে। ট্রেনের প্রতিটি সেটে প্রাথমিকভাবে ছয়টি করে বগি থাকবে। পরে তা আটটিতে উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে। 

প্রাথমিক হিসাবে, শুরুতে দিনে ৪ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী পরিবহন করা যাবে। মেট্রোরেলে যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন ঘোষণা হবে বাংলাতেই। তিন মিনিট পর পর ট্রেন ছাড়বে। যাত্রীদের সক্ষমতা বিবেচনা করেই পরিচালনা বোর্ড সহনীয় ভাড়া নির্ধারণ করবেন। 

তিনি আরো জানান, এখন পর্যন্ত লাইন-৬ এর সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। আরো দুটি মেট্রোরেলের কাজও দ্রুত এগোচ্ছে। প্রথম মেট্রোরেল চালুর অভিজ্ঞতা বাকিগুলোর বাস্তবায়নে সহজ হয়ে। 

প্রকল্প সূত্রমতে, এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা দিচ্ছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা। বাকিটা বহন করছে সরকার। প্রকল্পটি ২০১২ সালের ডিসেম্বরে একনেকে অনুমোদিত হয়। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি হয়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত। 

ডিপো এলাকায় ৫২টি অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে মেট্রোরেলের কোচ ধোয়া-মোছার স্থান, কোচ জোড়া লাগানো বা খোলার জায়গাসহ ১১টি অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। কারখানা, ট্রেন রাখার ছাউনি, ট্রেন পরিচালনার নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, কেন্দ্রীয় স্টোর, প্রশাসনিক ভবন, ডরমিটরি, ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, পয়োনালাসহ বেশ কিছু বড় অবকাঠামোর কাজ চলছে।

জানা গেছে, মেট্রোরেলের ইঞ্জিন-কোচ ও ডিপোর মালামাল সংগ্রহের কাজটি করছে জাপানের কাওয়াসাকি ও মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম। ইঞ্জিন-কোচ নির্মাণের পুরো কাজটাই হচ্ছে জাপানে। আগামী জুনে ইঞ্জিন-কোচ বাংলাদেশে আসা শুরু হবে। এরপর সেগুলো পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে। ইঞ্জিন-কোচের নকশা করার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ইঞ্জিন এবং এপ্রিলে বগি নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।

সরকার ২০০৫ সালে ঢাকার জন্য ২০ বছরের কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (এসটিপি) অনুমোদন করে। এতে যানজট নিরসনে ২০২৪ সালের মধ্যে একাধিক মেট্রোরেলসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয়া হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন গঠন করা হয় ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসিএল)। ২০১৫ সালে জাপানের সহায়তায় এসটিপি সংশোধন (আরএসটিপি) করে মেট্রোরেলের রুট সংখ্যা বাড়ানো হয়। 

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আরএসটিপির সমীক্ষা মতে, ছয়টি মেট্রোরেল নির্মিত হলে দৈনিক প্রায় ৫২ লাখ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবে। এর ফলে সমাধান হবে গণপরিবহন সমস্যার। রাজধানীতে থাকবে না যানজট।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা