• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

স্বাধীন বাংলাদেশে শিক্ষার উন্নয়ন

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ৩ অক্টোবর ২০২০  

সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। জাতি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পায়। বাঙালী জাতি স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ তখনই পায় যখন বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তণ করেন।

বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ১৪ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে সংবাদ সম্মেলনে বলেন - যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন এবং অর্থনীতিতে পুননির্মাণ ও গতিশীল করাই সবচেয়ে জরুরি। এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন “ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু করা হইবে এবং সকল শ্রেণীর মানুষের পক্ষে শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ গড়িয়া তোলা হইবে”। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের সংবিধানে শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে সবার জন্য শিক্ষা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। একটি স্তর পর্যন্ত শিক্ষাকে অবৈতনিক এবং বাধ্যতামূলক করার সংবিধানিক অধিকার সৃস্টি করেছেন বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত বাহাত্তরের সংবিধান।

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের যুগান্তকারী পদক্ষেপ হচ্ছে- ৩৬ হাজার ১৬৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭২৪ জন শিক্ষক নিয়োগ করেন ১৯৭৩ সালে।

বঙ্গবন্ধুর আরেকটা অসাধারণ পদক্ষেপ হচ্ছে জাতীয় সংসদে ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে স্বায়ত্বশাসন প্রদান। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-ই-খুদাকে প্রধান করে বঙ্গবন্ধু একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। পরবর্তীতে কুদরাত-ই খুদা শিক্ষা কমিশন একটি আধুনিক যুগপোযোগী জনকল্যাণমুখী এবং বৈজ্ঞানিক শিক্ষানীতি প্রনয়ণ করেন। যে শিক্ষানীতি রিপোর্টে মূলত বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের প্রতিফলন ঘটে। কিন্তু পচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকের নির্মম বুলেটে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের প্রায় সবাই নিহত হওয়ার ফলে এই শিক্ষানীতি বাঁধাগ্রস্হ হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো '৭৩ -এর অধ্যাদেশ অনুসরণ করেই পরিচালিত হচ্ছে।

১) ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার কঠোর পরিশ্রমের পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আবারও রাষ্ট্র ক্ষমতায় অাসে। তখন বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষার মান্নোনয়ন ঘটে। এই সময় জনকল্যাণমুখী শিক্ষানীতি প্রনীত হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়। সাক্ষরতার হার সে সময় ৪৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৭ শতাংশে দাঁড়ায়।

২) ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয় লাভ করে ২০০৯ সালে অাওয়ামী লীগ, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করেন। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর-ই ধারাবাহিকতায় শিক্ষানীতি -২০১০ প্রণয়ন করার নির্দেশ প্রদান করেন এবং তা সর্বোসম্মতভাবে সংসদে শিক্ষানীতি -২০১০ অনুমোদিত ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ প্রণয়ন করা হয়।

৩) ঝড়ে পরা এবং স্কুলে না অাসা শিশুদের লেখা-পড়ায় উদ্বোদ্ধ করার জন্য ২০১০ সালে স্কুল, মাদ্রাসা, টেকনিক্যাল - সকল ধরণের ছাত্র -ছাত্রীদের জন্য (প্রথম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত) বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়েছে। প্রাথমিক স্কুল থেকে ঝরে পরা শিশুদের অাকৃষ্ট করার জন্য খাদ্য বিতরণ কর্মসূচী দেওয়া হয়ে। সকল পাঠ্যপুস্তক ই-বুকে রূপান্তর করা হয়েছে। প্রতি বছর ২০১০ সাল থেকে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (স্কুল, মাদ্রাসা, টেকনিক্যাল) বিনামূল্যের পাঠ্যবই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ২০১০ থেকে ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৩১ কোটি ৩৮ লাখ ৬১৬টি । পৃথিবীর কোন দেশে এ ইতিহাস নাই। বিশ্ববাসী ভাবে এটা কি করে সম্ভব! এই ক্যারিসমা আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার। প্রি-প্রাইমারি শিশুদের জন্যও বই দেওয়া হয়। ৫টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষায় বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেওয়া হয়। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইলী সিস্টেমের বই দেওয়া হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় স্নাতক পর্যায়ের ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৭২৬ জন ছাত্রীকে মোট ৭৫.১৬ (পচাত্তর কোটি পনের লক্ষ) কোটি উপবৃত্তি প্রদান।

৪) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার মতো ২০১৩ সালে ২৬ হাজার ১৯৩টি রেজিস্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেন এবং ১ লাখ ৫ হাজার শিক্ষকের চাকুরি সরকারিকরণ করা হয়েছে।

৫) শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য শিক্ষকদের নিয়মিত মানসম্মত দেশে- বিদেশে ট্রেনিং-এর ব্যবস্হা করা হয়েছে। এ ছাড়া জ্ঞান ভিত্তিক অাধুনিক শিক্ষার জন্য আইসিটি, কম্পিউটার শিক্ষার ক্ষেত্রে পাঠ্য পুস্তকে নির্ধারণ করা হয়েছে।

৬) শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শিক্ষা দেবার জন্য মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম - ৩৫,৫০০টি শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব - ৪১৬১টি। পর্যায়ক্রমে আরো বাড়নো হবে।

৭) উচ্চ শিক্ষার জন্য ৪২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৯০টির মতো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। ১টি সরকারি বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়। অাধুনিক জ্ঞান ' বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

৮) স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, উপবৃত্তি, অার্থিক সাহায্য ও নানা ধরণের সহযোগিতা দেওয়া হয়। প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থী অার্থিক সহযোগিতা পাচ্ছে। এ ছাড়া নিয়মিতভাবে মেধাবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।

৯) সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের জন্য ক্লাসরুম, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, কম্পিউটার শিক্ষা, অাইসিটি বা তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষা এবং এসবের মানণ্নোয়ন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারি পলিটেকনিকে ডাবল শিফট চালু, উপজেলা পর্যায়ে ১০০টি কারিগরি স্কুল স্থাপন, ২৩টি জেলা ও ৩টি বিভাগীয় শহরে মহিলা পলিটেকনিক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

১০) ২০০৯ সালের পর থেকে প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মানসম্মত মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে মডেল স্কুল ঘোষনা করা হয়।

১১) ২০১৮ সাল থেকে সকল উপজেলায় একটি করে মাধ্যমিক স্কুল (১টি মেয়েদের অপরটি ছেলেদের ) ও একটি করে কলেজ সরকারিকরণ করা হয়।

১২) কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা তৈরি করা হয় । সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের সহকারি শিক্ষকদের ২য় গেজেটেড কর্মকর্তার পদমর্যাদা প্রদান করা হয। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি-২০১১ প্রণয়ন। ১০০০টি মাদ্রাসায় নতুন বিল্ডিং নির্মাণ, ৩১টি মাদ্রাসায় অনার্স কোর্স চালু, ৩৫টি মডেল মাদ্রাসায় স্থাপন। দাখিল মাদ্রসা, হাই স্কুল এবং আলীম, ফাজিল, কামীল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের বেতন সমমর্যাদায় সাধারণ কলেজের সমান করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণি (ইবতেদায়ী থেকে দাখিল) পর্যায়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীকে বিনামূল্যে বই দেয়া হচ্ছে। ৫ম শ্রেণির সমাপনী ও ৮ম শ্রেণির জেডিসি পরীক্ষা নেয়া হয়। জাতীয় সংসদে আইন পাস করে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্হাপন করা হয়েছে।

১৩) মাদ্রাসা শিক্ষাকে এসএসসি ও এইচএসসি সিলেবাসে পড়ানো হচ্ছে এবং পাবলিক পরীক্ষায় এ সব বিষয়ে পরীক্ষা হচ্ছে। অালিয়া মাদ্রাসাকে কামিল পর্যন্ত কোরআন ও হাদিস পড়ানো হচ্ছে। ১টি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও ৭২টি মাদ্রাসায় অর্নাস ক্লাস চালু হয়েছে। কওমি মাদ্রাসার "দাওরায়ে হাদিস" ডিগ্রিকে মাস্টার্স ডিগ্রীর সমমর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

১৪) সামাজে লেখাপড়ায় নারীরাই এগিয়ে অাছে।প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়েও ছেলেদের চেয়ে মেয়েরাই বেশী। তাই মহিলাদের এগিয়ে যাবার লক্ষে ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান করা হয় এবং বিনা বেতনে লেখা পড়াও শিখানো হচ্ছে।

১৫) ২০২০ সালের ৮ মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো কোভিড -১৯ কারণে লকডউনে থাকতে হয়ে। অামাদের প্রিয় নেত্রী, জননেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে মহামারী থেকে রক্ষার জন্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় এমন কি অফিস-অাদালত বন্ধ দেন। কিন্তু কীভাবে ঘরে বসে না থেকে লেখাপড়া করবে, ক্লাস করবে সেই ভাবনাতেই শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস। ২০১০ সালে ভিশন ২০২১ এ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ফলশ্রোতিতেই অাজকে এই মহামারীতে অন লাইন ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। টেলিভিশন এর মাধ্যমেও ক্লাস চলমান রেখেছে। উপবৃত্তির টাকা ছাড়াও প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে অতিরিক্ত ১০০০ টাকা করে অন লাইন মোবাইলে প্রেরণ করা হয়েছে।

শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্যঃ নন এমপিও সকল শিক্ষক কে ৫০০০/ টাকা করে প্রণোদনা এবং কর্মচারীদের ২৫০০/টাকা করে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তাঁর শিক্ষাদর্শনকে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা গুরুত্বের সাথে বাস্তবায়ন করে চলেছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ অাজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, যাবে।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা