• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

সুন্দরবনের নতুন দস্যু বাহিনী ‘রাজা-বাদশা’

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০২০  

সুন্দরবনে নতুন একটি দস্যু বাহিনীর আর্বিভাব ঘটেছে। বাহিনীর নাম রাজা-বাদশা। বাহিনীর সবাই বরগুনার পাথরঘাটার পদ্মাশুলি ও বাগেরহাটের শরণখোলার সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা বলে জানা গেছে। মার্চ থেকে দাপিয়ে বেড়ানো এ বাহিনী শরণখোলা রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় জেলে ও মৌয়ালদের জিম্মি করে হাজার হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় ও বনের পেশাজীবীদের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে।

মুক্তিপণ দিয়ে রাজা-বাদশা বাহিনীর কবল থেকে ফিরে আসা কয়েকজন জেলে জানান, দস্যুরা নামবিহীন একটি ট্রলারে শরণখোলা রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়ায়। সুযোগ বুঝে জেলে, বাওয়ালী ও মৌয়ালদের ওপর হানা দেয়।

সুন্দরবন সংলগ্ন উত্তর রাজাপুরের বাসিন্দা ফজলুল হক হাওলাদার বলেন, ১২ এপ্রিল কটকা এলাকার ডোরা খাল থেকে আমাকে ও আমার বড় ভাই আব্দুল জব্বার হাওলাদারকে অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে যায় দস্যুরা। ওই সময় নৌকায় থাকা ১০ হাজার টাকা ও মূল্যবান মালামাল লুটে নেয় তারা। পরে তারা আমার ভাইকে আটক রেখে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চায়। এরপর আমি বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে ভাইকে ছাড়িয়ে আনি।

একই গ্রামের ইদ্রিস হাওলাদার বলেন, ১৪ এপ্রিল সুন্দরবনের টিয়ার চরের পুকুরে খাবার পানি আনতে গিয়ে পুকুরপাড়ে পাঁচজন লোককে বসে থাকতে দেখি। আমি পানি নিয়ে নৌকার দিকে রওনা হলে লোকগুলো আমার পিছু নেয়। এক পর্যায়ে আমাকে ও আমার সঙ্গী কুদ্দুসকে জিম্মি করে। এরপর কুদ্দুসকে আটকে রেখে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। আমি কুদ্দুসের পরিবারকে জানালে তারা টাকা দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেয়।

একই এলাকার মৎস্য আড়তদার ছগির আকন বলেন, ২৪ মার্চ রাজা-বাদশা বাহিনী আমার পাঁচটি নৌকা পাঁচজন জেলেকে জিম্মি করে ৪৫ হাজার টাকা ও পাঁচটি মোবাইলসহ নৌকায় থাকা মূল্যবান মালামাল লুটে নেয়। এরপর তাদের আরো ৩০ হাজার টাকা দিয়ে আমার জেলে ও নৌকাগুলো ছাড়িয়ে আনি। পরবর্তীতে সোনাতলা ওর্য়াড মেম্বার মো. শরিফুল ইসলাম ডালিম ও স্থানীয় রুস্তম বয়াতির মাধ্যমে দস্যুদের কাছ থেকে কিছু টাকা ফেরত পেয়েছি।

উত্তর রাজাপুর ওয়ার্ড মেম্বার মো. জাকির হোসেন বলেন, সুন্দরবন অনেকদিন দস্যুমুক্ত ছিল। এ কারণে বনে যেতে জেলেদের মধ্যে কোন ভয় কাজ করতো না। গত মাসে হঠাৎ রাজা-বাদশা বাহিনীর আর্বিভাব হওয়ায় জেলে, বাওয়ালী ও মৌয়ালদের মাঝে নুতন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। শুরুতেই এ দস্যুদলকে দমন করতে হবে। নইলে সুন্দরবন আবার অশান্ত হয়ে উঠবে।

শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন জানান, রাজা-বাদশা বাহিনীর সঙ্গে এরইমধ্যে দুবলা ও শেলা ক্যাম্পের বনরক্ষীদের সঙ্গে গুলি বিনিময় হয়েছে। ওই সময় দস্যুরা পালিয়ে গেলেও তাদের কবল থেকে উত্তর রাজাপুরের কুদ্দুস, গিয়াস উদ্দিন, মহসিন নামে তিন জেলে ও দস্যুদের একটি ট্রলার উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া রাজা-বাদশা বাহিনীকে ধরতে বনের সব ফাঁড়ি ও ক্যাম্পে টহল-অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

জানতে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয় রাজা-বাদশা বাহিনীর সরদারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি এসব ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নই। একসময় জঙ্গলে খারাপ কাজ করতাম। বর্তমানে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছি।

তিনি আরো বলেন, দস্যু দলের সদস্য হিসেবে যাদের নাম বলা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই নিরীহ জেলে। জেলে-মহাজনদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকায় আমাদের নামে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।

ধান সাগর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই মো. আজিম উদ্দিন জানান, সুন্দরবনে নতুন দস্যু বাহিনীর আবির্ভাবের খবর তিনি জানেন না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা