• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

সুন্দরবনের আয়তন বেড়েছে, বাড়ছে বাঘের সংখ্যাও -সংসদে প্রধানমন্ত্রী

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২১  

সরকারের পদক্ষেপে বিশ^ঐতিহ্য সুন্দরবনের আয়তন বেড়েছে। একইসঙ্গে বাড়ছে বাঘের সংখ্যাও। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে এতথ্য জানান সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরো জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। সারা দেশে এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের ‘মাথা গোঁজার ঠাঁই নাই’ কথাটি চিরতরে বিলুপ্ত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে সংরক্ষিত আসনের বেগম সুলতানা নাদিরার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার সুন্দরবন ও এর জীববৈচিত্র্য রক্ষার বিষয়ে সব সময় আন্তরিক ও বদ্ধপরিকর।

যে কারণে দেশের উন্নয়নে যে পদক্ষেপই নেওয়া হোক না কেন সুন্দরবন এবং এর জীববৈচিত্র্য যেন কোনওভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হয়। সুন্দরবনের আয়তন বাড়ানোর জন্য সরকার কৃত্রিম ম্যানগ্রোভ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে। সমগ্র উপক‚লীয় অঞ্চলে এর বিস্তৃতি ঘটানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। একই সাথে সুন্দরবনের বৃক্ষাদি এবং বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য তথা বন অপরাধ দমনের জন্য স্মার্ট পেট্রোলিংসহ নানাবিধ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি উলে­খ করে শেখ হাসিনা বলেন, ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে ২০১৫ সালের বাঘ শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিলো ১০৬টি। ২০১৮ সালের শুমারিতে এই সংখ্যা ১১৪টি পাওয়া গেছে। সুন্দরবনের কার্বন মজুদের পরিমান ২০০৯ সালের ১০৬ মিলিয়ন টন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯ সালে ১৩৯ মিলিয়ন টন হয়েছে। তিনি জানান, সুন্দরবনে এখন ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড এবং ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী পাওয়া যায়।

বন্যপ্রাণীর মধ্যে ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর, ৩১৫ প্রজাতির পাখি, ২১০ প্রজাতির মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া আছে। সুন্দরবনের গাছপালা ও বন্যপ্রাণীক‚লকে রক্ষার জন্য বনকর্মীদের যুগোপযোগী করে তুলে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির পদক্ষেপের কথাও জানান সরকার প্রধান। তিনি জানান, যথাযথ পদক্ষেপের কারণে সুন্দরবন স¤প্রসারিত হচ্ছে। ২০১৭ সালে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এলাকা স¤প্রসারণ করা হয়েছে। বর্তমানে সুন্দরবনের প্রায় ৫৩ শতাংশ এলাকা অভয়ারণ্যের অন্তর্ভুক্ত।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আ ক ম সরওয়ার জাহানের প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের তালিকা করা হয়েছে। ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১টি। আর জমি আছে কিন্তু ঘর নেই এমন পরিবার রয়েছে ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১টি। ‘দেশের একজন মানুষও ভূমিহীন থাকবে না’ এ ঘোষণা বাস্তবায়নে পর্যায়ক্রমে সকলকে পুনর্বাসন করা হবে। তিনি জানান, জানান, মুজিববর্ষ উপলক্ষে গত ২৩ জানুয়ারি ৬৫ হাজার ৪০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০ জুন আরও ৫৩ হাজার ৩৪০টি ঘর দেওয়া হবে।

একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভিক্ষুক, বেদে এবং হিজরা জনগোষ্ঠীকে আশ্রায়ন প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। খাস জমি না পাওয়া গেলে প্রয়োজনে জমি কিনে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে। তিনি আরো জানান, ১৯৯৭ থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৫৬২ পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ৬৮ হাজার ৪৮ পরিবারকে ব্যারাকে, এক লাখ ৫৩ হাজার পরিবারকে নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও এর মধ্যে ৪৯ হাজার ৩৩৪ পরিবারকে ২ শতাংশ করে জমি বন্দোবস্তসহ এবং আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত ১১শ পরিবার রয়েছে। সরকারদলীয় সদস্য আনোয়ার হোসেনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজধানী ঢাকাসহ দেশের যে সকল স্থানে অবস্থান করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও বিভিন্ন আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সে সকল স্থান বিশেষভাবে সংরক্ষণের জন্য বর্তমান সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের স্মরণে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হবে।

ইতিমধ্যে ১৫০ ফুট উঁচু গ্লাস টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। যশোরের রাজগঞ্জ বাজারে ও ফরিদপুরের আম্বিকা ময়দানে বঙ্গবন্ধু স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হবে। রাজধানী ঢাকার মিন্টু রোড ও আব্দুল গণি রোডস্থ ভবনগুলোতে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ছিলো বিধায় সেগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে আইনানুগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানান, বাংলাদেশের যে সকল স্থানে বঙ্গবন্ধুর বিশেষ স্মৃতি বিজড়িত ঐ সকল স্থান ঘটনার তাৎপর্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় স্মৃতি স্বরূপ সংরক্ষণ করা হলে তরুণ ও ভবিষ্যত প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শ সম্পর্কে অবহিত হতে পারবে।

সরকারী দলের সদস্য শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা জানান, সরকার গণমাধ্যমকর্মীদের ৪৫ শতাংশ মহার্ঘভাতা নিশ্চিত করতে আইন প্রণয়ন করেছে। এটি অনুমোদনের জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তিনি জানান, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া উভয়ক্ষেত্রে সাংবাদিকরা কর্মস্থলে চাকরির অনিশ্চয়তায় ভোগেন। এটা স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য হুমকি। তাদের চাকরির এ অনিশ্চয়তা দূর করতে তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমকর্মী (চাকরির শর্তাবলি) আইন প্রণয়ন করছে, যা বর্তমানে অনুমোদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। সাংবাদিকদের আবাসনের জন্যও বিশেষ প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের গণমাধ্যমকে সব ধরনের সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে সমাজে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখেছে সরকার। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সাংবাদিকদের পরিবারকে সহায়তা দেওয়ার জন্য ১০ কোটি টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। করোনায় প্রেস ক্লাবের আয় কমে যাওয়ায় মে মাসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের জন্য ৫০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে।

সংবাদকর্মীদের কল্যাণে বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকার ২০১৩ সালে অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণার মাধ্যমে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছে। নবম ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণার মাধ্যমে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের বেতন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলে জানান সংসদ নেতা। তিনি আরো জানান, বিভিন্ন সময় গুরুতর আহত ও অসুস্থ সাংবাদিকদের দেশ-বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকার বহন করেছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকেও সাংবাদিকদের জন্য অর্থ প্রদানসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী জানান, বর্তমানে দেশে প্রকাশিত পত্রিকার সংখ্যা তিন হাজার ২২২টি। এছাড়া সরকার বেসরকারি খাতে ৪৫টি টেলিভিশন, ২৭টি এফএম রেডিও এবং ৩১টি কমিউনিটি রেডিও চ্যানেলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনের ফলে গণমাধ্যম অঙ্গন শক্তিশালী হয়েছে। দেশে টিভি চ্যানেলগুলো এখন অনেক কম খরচে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে স¤প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা