• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

রমজানের শেষ দশকে সারারাত ইবাদতের সাওয়াব লাভের আমল

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২০  

পবিত্র মাহে রমজানের শেষ দশক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার। এ দশকের প্রতিটি রাত একটুও না ঘুমিয়ে রাত জেগে থেকে ইবাদত বন্দেগি করা হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম সুন্নাত। এবারের রমজানে মহামারি করোনার কারণে ঘরবন্দি অনেক মানুষই সারারাত জেগে ইবাদতের সুযোগ পাবেন। কিন্তু যারা কর্মব্যস্ত তাদের জন্য রমজানের শেষ দশকে সারারাত দাঁড়িয়ে ইবাদতের সাওয়াব লাভে রয়েছে বিশেষ করণীয়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ছোট ছোট অনেক আমল রয়েছে। কর্মব্যস্ত মানুষ সারারাত না জেগেও যেসব আমলের মাধ্যমে সারারাত জেগে ইবাদতের সাওয়াব পাবেন, সেরকম কিছু আমলের বর্ণনা তুলে ধরা হলো। যাতে রমজানের শেষ দশকে প্রত্যেকেই সারারাত জেগে ইবাদতের সাওয়াব লাভ করেন।

প্রথম আমল : ইশা এবং ফজর নামাজ জামাআতে পড়া
রমজানের শেষ দশকে মুমিন বান্দা অবশ্যই রাত জেগে ইবাদত বন্দেগি করবে ঠিকই কিন্তু সারারাত নিয়মিত ইবাদত করা অত্যন্ত কষ্টকর। কিন্তু এমন একটি সহজ আমল রয়েছে, যার মাধ্যমে মুমিন বান্দা সারারাত ঘুমিয়েও পূর্ণরাত ইবাদত বন্দেগি করার সাওয়াব লাভ করবে। আর তাহলো ইশা এবং ফজর নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করা। হাদিসে এসেছে-
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ইশার নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করলো, সে ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা দাঁড়িয়ে ইবাদত-বন্দেগি করার সাওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি ইশা এবং ফজর উভয় নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে সারারাত দাঁড়িয়ে ইবাদত করার সাওয়াব দান করবেন।' (মুসলিম)

দ্বিতীয় আমল : ইশা এবং তারাবিহ নামাজ পড়া
ইমামের সঙ্গে জামাআতে ইশা এবং তারাবিহ নামাজ শেষ পর্যন্ত থেকে আদায় করা। এ বিষয়ে হাদিসে পাকে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে রাতে ইশা ও তারাবিহ নামাজ পড়ে এবং ইমাম নামাজ শেষ করে চলে যাওয়া পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করেন। আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তিকেও সারারাত দাঁড়িয়ে ইবাদত করার সমান সাওয়াব দান করেন।' (তিরমিজি, আবু দাউদ)

তৃতীয় আমল : ১০০ আয়াত তেলাওয়াত করা
রাতের যে কোনো সময় কুরআনুল কারিমের ১০০ আয়াত তেলাওয়াত করা। এ সম্পর্কে হাদিসে পাকে প্রিয় নবি ঘোষণা করেন-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি রাতে ১০০টি আয়াত তেলাওয়াত করে, আল্লাহ তাআলা তাকে সারারাত ইবাদতের সমান সাওয়াব দান করুন।' (সহিহুল জামে) কুরআনুল কারিমের যে কোনো সুরা বা স্থান থেকে ১০০টি আয়াত তেলাওয়াত করলেই পাবেন এ সাওয়াব।

চতুর্থ আমল : রাতে উঠে ইবাদতের নিয়তে ঘুমাতে যাওয়া
যে ব্যক্তি এ নিয়তে বিছানায় ঘুমাতে যায় যে, সে রাতে জেগে উঠে ইবাদত-বন্দেগি করবেন। কিন্তু বিছানায় ঘুমানোর পর, তার ঘুম এত ভারি ও প্রবল ছিল যে সে আর জেগে ইবাদত করতে পারেনি। ঘুমেই তার রাত অতিবাহিত হয়ে গেছে। সে ব্যক্তিও রাতে জেগে ওঠে ইবাদত-বন্দেগির নিয়তের কারণে সারারাত জেগে ইবাদত করার সাওয়াব পাবেন। আর এ ব্যক্তির জন্য রাতের ঘুমটি হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাদাকাহ বা উপহার।

দিনের রোজা ও রাতের ইবাদতের সাওয়াব লাভের আরও কিছু আমল-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুমিন বান্দাকে রাতে কিয়াম তথা নামাজ-ইবাদত আর দিনে সিয়াম পালনের কথা বলেছেন। রাতে কিয়াম এবং দিনের রোজা পালনের সাওয়াব এনে দেয়ার মতো ছোট ছোট কিছু আমলও রয়েছে। আর সেগুলো হলো-
> মানুষের উত্তম আচরণ, মার্জিত ব্যবহার, সুন্দর আখলাক;
> ইয়াতিম ও বিধবাদের কল্যাণে যারা কষ্ট করে, তাদের সহায়তায় কাজ করে।
> যারা জুমআর দিনের যে আচরণ ও নিয়মগুলো রয়েছে সেগুলোর যথাযথ অনুসরণ ও অনুকরণ করে।
> জনকল্যাণে রাত জেগে যারা পাহারাদার হিসেবে কাজ করেন।

সুতরাং রাত জেগে যাদের আমল ইবাদত করার সুযোগ রয়েছে, তারা সারারাত আমল ইবাদতে অতিবাহিত করবেন। আর যারা তাতে সক্ষম নয়, তাদের জন্য অন্ততঃ বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে ঘোষণা অনুযায়ী উল্লেখিত আমলের মাধ্যমে সারারাত দাঁড়িয়ে ইবাদত-বন্দেগির সাওয়াব লাভে প্রচেষ্ট চালানো জরুরি।

মনে রাখা জরুরি...
শুধু আমলের বিনিময়ে সারারাত জেগে থেকে ইবাদত-বন্দেগির সাওয়াব লাভ করা আর বাস্তবে সারারাত আমল-ইবাদতে অতিবাহিত করা এক কথা নয়। বরং সারারাত জেগে ইবাদত-বন্দেগির মর্যাদা অনেক বেশি। তাই রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফরত অবস্থায় লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানে সারারাত জেগে ইবাদত করাই উত্তম। একান্তই যারা অপরাগ হবেন তাদের জন্য এ আমল করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের শেষ দশকে উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। রমজানের রহমত বরকত মগফেরাত নাজাতসহ পবিত্র লাইলাতুল কদর লাভে রাত জেগেই ইবাদত-বন্দেগি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা