• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

যে ঈমানে আলোকিত হয় মুসলিম

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২০  

ঈমান মুমিনের নুর। ঈমান মুমিনের শক্তি। এ নুর বা শক্তিই মানুষকে দুনিয়ার সব অনুকুল কিংবা প্রতিকুল পরিস্থিতিতে সঠিক পথে চলতে সহয়তা করে। ঈমানের নুরেই আলোকিত হয় মুমিন। যে ঈমানের নুরে আলোকিত হয় মুমিন; কী সেই ঈমান?

ঈমান হচ্ছে আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে বিলিয়ে দেয়। কুরআন-সুন্নায় ঈমান ও মুমিন সম্পর্কে রয়েছে অনেক চমৎকার ও উৎসাহ-উদ্দীপনামূলক আলোচনা। যে আলোচনায় মুমিন খুঁজে পায় জীবনের সঠিক ও কাঙ্ক্ষিত ঠিকানা।

যে আল্লাহ আসমান এবং জমিনের একচ্ছত্র অধিপতি; মহান আরশের মালিক; পরম দয়ালু অসীম করুনাময়। সেই আল্লাহকে প্রভু বলে স্বীকার করাই ঈমান। রব হিসেবে শুধুমাত্র তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করা প্রতিটি মানুষের জন্য ফরজ তথা আবশ্যক। তাই যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর প্রতি ঈমানের নুরে আলোকিত হয়ে পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করবে ওই ব্যক্তিই মুমিন হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে। হাদিসে পাকে এসেছে-

- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘তুমি (যদি মুমিন হতে চাও, তবে) আল্লাহ তাআলা, তাঁর ফিরিশতাগণ, আসমানি কিতাবসমূহ, রাসুলগণ, শেষ দিবসের প্রতি (আখিরাত) এবং ভাগ্যের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। (মুসলিম)

এ হাদিসের আলোকে ঈমানের সংজ্ঞা দাড়ায়- উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের কথা- মুখে ঘোষণা দেয়া, অন্তরে বিশ্বাস করা এবং বাস্তবে অঙ্গ-প্রতঙ্গের মাধ্যমে সম্পাদন করা। আর এ কথা মনে রাখা যে, আল্লাহর নির্দেশের আনুগত্যের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং আল্লাহর বিধানের অবাধ্যতায় ঈমান হ্রাস পায়। সুতরাং যারাই ঈমান আনে তারা হয় মুমিন।

সুতরাং ঈমানের নুরে আলোকিত সেই ব্যক্তি; যার কথা ওঠে এসেছে কুরআনুল কারিমে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন (তাদের সামনে) আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কুরআন; তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় প্রভুর প্রতি ভরসা পোষণ করে। (তারা) সে সব লোক; যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে এবং আমি তাদের যে রুজি দেয়া হয়েছে তা থেকে ব্যয় করে।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ২-৩)

মুমিনের ঈমানের পাওয়ার এতবেশি যে, কোনো মুমিন যখন পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী হয় তখন কোনো গোনহের কাজে সে লিপ্ত হয় না। হাদিসের ঘোষণায় এটি প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-

- ‘ব্যাভিচারী : পরিপূর্ণ ঈমানদার অবস্থায় ব্যাভিচারে লিপ্ত হতে পারে না।

- চোর : পরিপূর্ণ ঈমানদার অবস্থায় চুরি করতে পারে না। এবং

- মদ পানকারী : পরিপূর্ণ ঈমানদার অবস্থায় মদপান করতে পারে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মনে রাখতে ঈমানের নুরে যে ব্যক্তির হৃদয় আলোকিত, তখন সে ব্যক্তি কোনো গোনাহের কাজেই জড়িত হতে পারে না। যখন মানুষের ঈমানের দুর্বলতা প্রকাশ পায় বা ঈমান দুর্বল হয়ে যায় তখনই মানুষ এ গোনাহের কাজগুলোতে লিপ্ত হতে পারে।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, পরিপূর্ণ ঈমানের আলোয় নিজেকে আলোকিত করতে কুরআন-সুন্নায় ঘোষিত বিষয়- আল্লাহ, ফেরেশতা, কিতাব, রাসুল, শেষ দিবস, ভাগ্যে ভালো-মন্দের ওপর যথাযথ ঈমান বা বিশ্বাস স্থাপন করা। আল্লাহকে ভয় করা। কুরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়নের মাধ্যমে ঈমানকে বাড়িয়ে তোলা। যেভাবে ঘোষণা করেছেন আল্লাহ-

‘হে লোকেরা! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ইবাদাত কর, যিনি তোমাদের এবং তোমাদের আগের লোকদের সৃষ্টি করেছেন। যাতে তোমরা পরহেজগার বা আল্লাহভীরু হতে পার। সেই পবিত্র সত্ত্বা তিনি, যিনি তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানা, আকাশকে ছাদস্বরূপ স্থাপন করেছেন। আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণের মাধ্যমে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসেবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২১-২২)

ঈমান তাজা করতে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল, আল্লাহর জিকির এবং তারই কাছে দোয়া করা। তাহলো-

- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (প্রত্যেকেই) নিজ নিজ ঈমানকে তাজা করতে থাক। সাহাবাদের কেউ কেউ আরজ করলেন- হে আল্লাহর রাসুল! আমরা কিভাবে নিজ নিজ ঈমান তাজা করবো? তিনি বললেন, (لَا اِلَهَ اِلَّا الله) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর জিকির বেশি বেশি করতে থাক।’ (মুসনাদে আহমদ)

ঈমান তাজা রাখতে এবং সর্বোপরি ঈমানি মৃত্যু লাভে মহান আল্লাহর কাছে এভাবে বেশি প্রার্থনা করা-

رَّبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُنَادِي لِلْإِيمَانِ أَنْ آمِنُوا بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا ۚ رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা ইন্নানা সামিনা মুনাদিআই ইউনাদি লিল ঈমানি আন আমিনু বিরাব্বিকুম ফাআমান্না; রাব্বানা ফাগ্ফিরলানা জুনুবানা ওয়া কাফ্‌ফির আন্না সাইয়্যিআতিনা ওয়া তাওয়াফ্‌ফানা মাআল আবরার।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯৩)

অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমরা ঈমান আনার জন্য একজন আহ্বানকারীকে আহ্বান করতে শুনে ঈমান গ্রহণ করেছি। হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদের সব গোনাহ মাফ করে দাও। আমাদের সব দোষ-ত্রুটি দূর করে দাও। আর নেককার লোকদের সাথে আমাদের মৃত্যু দাও।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈমানের পরিপূর্ণ আলোয় নিজেদের আলোকিত করতে উল্লেখিত বিষয়গুলোর উপর যথাযথ আস্থা এবং বিশ্বাস স্থাপন করার তাওফিক দান করুন। নিজেদের ঈমানের আলোয় আলোকিত করুন। আমিন।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা