• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

যে আমলে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন হজরত সাদ

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২০ জুলাই ২০২০  

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে নববির মধ্যে সাহাবাদের মজলিসে বলেছিলেন- ‘এখন তোমাদের মাঝে একজন জান্নাতী মানুষ আসবে।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে পর পর তিন দিন একজন সাহাবির ব্যাপারে এ কথাটি বলেছিলেন।

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ ঘোষণার পর সবাই আগ্রহসহ তাকিয়ে থাকতেন, কে সেই সৌভাগ্যবান সাহাবি। যিনি বিশ্বনবির দরবারে আসছেন। আর বিশ্বনবি তাকে জান্নাতি বলছেন। দুনিয়াতেই পেয়েছেন জান্নাতের সুসংবাদ।

প্রতিদিনই মজলিসে হাজির হওয়া সেই সৌভাগ্যভান সাহাবি আর কেউ নন। তিনি হলেন হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। যিনি প্রতিদিনই মসজিদে নববিতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে উপস্থিত হওয়ার জন্য ওজু করে প্রবেশ করতেন, আর তাঁর দাঁড়ি বেয়ে বেয়ে ওজুর পানির গড়িয়ে পড়তো।

কী আমল করতেন তিনি?
জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়ার পর তার আমল সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করেছেন তাঁরই ভাতিজা সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি তিন দিন তার বাড়িতে অবস্থান করেন। কিন্তু তাঁকে তেমন কোনো আমল করতে দেখেননি। জানার চেষ্টা করেও সফল হননি। সাহাবি হজরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতাশ হলেন।

আশাহত মন নিয়ে হজরত আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় পেছন থেকে ডাকলেন, আব্দুল্লাহ! আব্দুল্লাহ!। তিনি পেছনে ফিরে তাকালেন।

এবার হজরত সাদ রাদিয়াল্লাহু বললেন- ‘আমাকে যেমন দেখেছ আমার আমল তো ঐটুকুই। তবে একটি বিষয় আছে। আর তাহলো-

হজরত সাদ রাদিয়াল্লাহু বর্ণনা করলেন, ‘কোনো মুসলিম ভাইয়ের প্রতি আমি অন্তরে কোনো কূট চিন্তা পোষণ করি না আর আল্লাহ কাউকে যে নেয়ামত দান করেছেন সে কারণে তার প্রতি আমি হিংসাও করি না। এ কথা শুনে হজরত আবদুল্লাহ বলে উঠলেন- হ্যাঁ, এ গুণটিই আপনাকে ওই সৌভাগ্যের অধিকারী করেছে। আর এটিই আমরা পারি না।’ (মুসনাদে আহমদ)

মুমিন মুসলমানের উচিত, কারো প্রতি হিংসা না করা। কোনো মুসলিমের ব্যাপারে খারাপ চিন্তা না করা এবং কারো প্রাচুর্যে হিংসা না করা। আর তাতেই আল্লাহ তাআলা দান করতে পারেন চিরস্থায়ী জান্নাত। যেভাবে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু।

কেমন ছিলেন তিনি
জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া সাহাবি হজরত আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু গুণ বৈশিষ্ট্যে ছিলেন অনন্য। এক কথায় তিনি ছিলেন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অত্যন্ত প্রিয় ও বিশ্বস্ত সাহাবি। অনন্য গুণের কারণে তিনি তাঁকে খুবই ভালোবাসতেন।

মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তার ইসলাম গ্রহণের ঘটনাও ছিল চমৎকার। জীবনে তিনি দ্বীন ও ঈমানের জন্য তুলনাহীন ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন।

তাঁর যুদ্ধ নৈপূণ্যের প্রশংসা করেছেন স্বর্য় বিশ্বনবি। তিনি বদর, ওহুদসহ বড় বড় যুদ্ধে বিশ্বনবির সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন। কোনো কোনো যুদ্ধে তিনি সেনাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।

হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ইলমে হাদিসের ব্যাপক খেদমত করেছেন। অনেক হাদিসও তিনি বর্ণনা করেছেন।

ইসলামি খেলাফতের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর আমলে তিনি কুফার খণ্ডকালীন গভর্নরও ছিলেন।

সরলমনা ও সাদামাটা স্বভাবের সাহাবি হজরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ৫৫ হিজরিতে ৮২ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হজরত সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এ গুণে নিজেদের রাঙানোর তাওফিক দান করুন। দুনিয়াতে নিজেকে জান্নাতি ব্যক্তিতে পরিণত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা