• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

ময়মনসিংহ মহাসড়কে স্বস্তি হলেও, টাঙ্গাইল-জামালপুরে ভোগান্তি

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৪ মে ২০১৯  

বছর পাঁচেক আগেও ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে আসতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা সময় ব্যয় হতো। ওই সময় খানাখন্দে ভরা ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে ঈদযাত্রা হলে তো কথাই ছিলো না। বেহাল সড়কে যানজটে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা আটকে থেকে হাহুতাশ করতে হতো ঘরফেরত নিরুপায় যাত্রীদের।

ঢাকার সঙ্গে বৃহত্তর ময়মনসিংহের চলাচলের মহাসড়ক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে। জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত আসতে এখন সাকুল্যে ব্যয় হয় দেড় কি দুই ঘণ্টা। আরামদায়ক এ মহাসড়কে গত তিন বছরের মতো এবারো স্বস্তির ঈদযাত্রার অপেক্ষায় আছেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলার বাসিন্দারা।

ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইফুল আলম জানান, গত কয়েক বছর এ মহাসড়কে ঈদের সময় দীর্ঘ যানজট নেই। ফলে ঈদ উৎসবে স্বজনদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়িমুখী যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যেই ফিরতে পারবেন।

একই সূত্র আরো জানায়, স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) ময়মনসিংহ জোনের অধীনে প্রায় ২৮৪ কিলোমিটার মহাসড়ক রয়েছে। ময়মনসিংহ-ঢাকার মতো ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ-শেরপুর, ময়মনসিংহ-নেত্রকোণাসহ অন্য মহাসড়কগুলোর অবস্থাও আগের চেয়ে ভালো।

ফলে এসব মহাসড়কে ঈদযাত্রার যাত্রীদের দুর্ভোগের আতঙ্ক নেই বলে দাবি করছেন সওজের কর্মকর্তারা।

তবে চারলেনে উন্নীত করণের কাজ চলমান থাকায় টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা-জামালপুর মহাসড়কে প্রতিদিনই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঈদের আগের দিনগুলোতে যানবাহনের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে পারে। মূলত উন্নয়ন কাজ মন্থরগতিতে চলায় ঘরমুখো যাত্রীদের বাড়তি দুর্ভোগ পোহানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহত্তর ময়মনসিংহের ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, জামালপুর ও শেরপুরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও বিভিন্ন স্থানের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর ও আরামদায়ক করার লক্ষ্যে ২০১১ সালে  ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কের ৪ লেন প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করে সড়ক মন্ত্রণালয়।

গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া মোড় পর্যন্ত চারটি প্যাকেজে ৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়ক নির্মাণ কাজে ব্যয় হয় ১ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। এরপর ২০১৬ সালের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মহাসড়ক উদ্বোধন করেন।

জানা যায়, প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজারেরও বেশি যাত্রী, এক থেকে দেড় হাজার পণ্যবাহী গাড়ি দাপিয়ে বেড়ায় ঝকঝকে এ মহাসড়কে। এ মহাসড়কের কোথাও সমস্যা নেই। তবে জয়দেবপুরের পর গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকেই যত বিপত্তি।

মূলত গাজীপুরের ওই পথটুকু পাড়ি দিতেই মহাসড়কে মহাযন্ত্রণায় পড়তে হয় যাত্রীদের। এবারের ঈদেও মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে ওই অংশটুকু।

এ মহাসড়কে নিয়মিত নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গাজীপুরের জয়দেবপুর পর্যন্ত ‘বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)’ প্রকল্পের কাজ চলায় প্রতিনিয়তই অসহনীয় দুর্ভোগের মুখে পড়তে হচ্ছে।

এখনো সেখানে ড্রেন ও ওভারব্রিজের পাইলিং কাজের কারণে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে সড়কে। ফলে টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর, গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত অংশে সময়ে অসময়েই যানজট হচ্ছে। কোন কোন সময় তিন থেকে চার ঘণ্টার যানজটের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।

ময়মনসিংহ থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাওয়া পণ্যবাহী একটি ট্রাকের চালক জসিম উদ্দিন (৪৫) জানান, গাজীপুরে আধা ঘণ্টার সময় পাড়ি দিতেই সময় লাগছে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা।

কখনো আবার ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময়ও লাগছে। সময়ের অপচয়ই এ মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জাহাঙ্গীর আহমেদ নামে এক চালক অভিযোগ করে বলেন, মহাসড়কের ময়মনসিংহ অংশে কোনো ভোগান্তি নেই। অথচ দুর্ভোগের আরেক নাম যেন মহাসড়কের গাজীপুর অংশ।

এখানে সামান্য বৃষ্টিতেই টঙ্গীর তুরাগ থেকে চান্দনা চৌরাস্তা অবধি ১০ কিলোমিটারে পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। আগেভাগে এ অবস্থার উন্নতি না হলে ঈদে ভয়াবহ বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হবে যাত্রীদের। সেক্ষেত্রে মহাসড়কে যানজট রেকর্ড করতে পারে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক হচ্ছে ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। বছর খানেক আগেও এ মহাসড়ক যান চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছিলো।  সড়কটির রহমতপুর বাইপাস থেকে মুক্তাগাছা উপজেলার কালিবাড়ি পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার সড়কে ছিলো ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। সংস্কার কাজ হওয়ায় সীমাহীন দুর্ভোগের সেই চিত্র নেই।

তবে এখানকার রহমতপুর বাইপাস অংশে এবং নগরীর কেওয়াটখালী বাইপাস অংশে গ্রেডিং (কার্পেটিং) কাজ চলছে। সপ্তাহখানেক যাবত এ কাজ চলছে। আগামী দুই থেকে তিনদিনের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে।

মোট ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সংস্কার কাজ চলছে। ঈদের পর ওই অংশটুকু ঢালাই করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান।

তবে ঈদ মৌসুমে যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় স্বাভাবিকভাবেই সরু এ সড়ক পাড়ি দিতে সময় লাগবে বেশি এমনটি জানান স্থানীয়রা।

আবার বেহাল অবস্থা টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা-জামালপুর মহাসড়কের। ২০২০ সালে এ মহাসড়ক প্রশস্ত করে চারলেনে রূপ দিতে প্রায় ৪৯০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। কিন্তু কাজের আর মাত্র বছরখানেক বাকী থাকলেও নির্মাণ কাজ চলছে ঢিমেতালে।

ফলে গ্রীষ্মে ধুলা আর বৃষ্টি হলেই কাঁদায় একাকার হয়ে পড়ে মহাসড়কটি। জামালপুর, ময়মনসিংহ, মধুপুর, ঘাটাইলসহ বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।

বিশেষ করে মহাসড়কের ঘাটাইল সদরের হাসপাতাল মোড় থেকে বীর ঘাটাইল পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কে নির্মাণ কাজের জন্য দেড় থেকে দুই ঘণ্টা যানজট হচ্ছে নিত্যদিন। এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে দুর্ভোগ থেকে রক্ষা মিলবে না ঈদযাত্রীদের।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিমুল এহসান জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ধীরগতিতে জাতীয় এ মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদেরকে দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার শম্ভুগঞ্জ থেকে নেত্রকোণা বাজার পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কটি প্রশস্তকরণসহ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। তিন বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের সবেমাত্র এক বছর শেষ হয়েছে।

প্রায় ১৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি প্যাকেজে মজবুতের পাশাপাশি সড়কটি ১৮ ফুট থেকে ৩২ ফুট প্রশস্ত করা হবে। তবে বর্তমানে এ সড়ক চলাচলের উপযোগী বলে জানান ময়মনসিংহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইফুল আলম।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা