• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

মাঝিবিহীন নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থ

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৩ মার্চ ২০২০  

এপারে পূর্ব বোয়ালিয়া ওপারে পানপট্টির রত্মেশ্বর গ্রাম। পৃথক দুই ইউনিয়নের দুটি গ্রামের বুক চিরে বয়ে চলেছে বোয়ালিয়া খাল। আর এ খালটিই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার চিন্তার চেয়ে পারাপারের চিন্তাই অস্থির করে তুলেছে। এ খালটি পারাপারের একমাত্র মাধ্যম মাঝিবিহীন ডিঙি নৌকা। খালের দুই পারে গাছের সাথে শক্ত করে বেঁধে রাখা আছে প্লাস্টিকের দড়ি। নৌকায় উঠে সেই দড়ি টেনে টেনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেই খাল পার কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ যাত্রীরা। 

পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা সদর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রাম থেকে পানপট্টি বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পানপট্টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুলারাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৫টি স্কুল মাদ্রাসার দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী বোয়ালিয়া গ্রাম থেকে নিয়মিত এভাবেই ক্লাশ করছে। বিদ্যালয়ে নির্বিঘ্নে পৌঁছানো তাদের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। 

সম্প্রতি সরেজমিনে বোয়ালিয়া গ্রামের খাল পারে গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ইভা। ঘুম থেকে ওঠেই রোদে পুড়ে দড়ি টেনে স্কুলে যাচ্ছে। ওই ডিঙি নৌকায় শুধু ইভাই নয়। ছেলে মেয়ে ভাগাভাগি করে দড়ি টানে। প্রশান্ত শীল তার আরেক সহপাঠী দ্বীন ইসলাম দড়ি টেনে কূলে আসছিল। একই ডিঙিতে রয়েছে প্রায় ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী। 

 

বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রশান্ত শীল বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের এভাবে দড়ি টেনে টেনে খালটি পার হতে হয়। ছেলে মেয়ে আমরা সবাই দড়ি টানি। অনেক সময় দড়ি টানতে গিয়ে আমরা খালে পড়ে যাই। তখন ওইদিন আর ক্লাশ করা হয় না।’

একই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুক্তা ও সপ্তম শ্রেণির নন্দিতা রাণী বলেন, খেয়া নৌকা ছোট হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে খেয়া পার হতে হয়। আবার মাঝে মধ্যে নৌকা উল্টে বই-খাতা ভিজেয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছে অনেক দিন। দড়ি টানতে কষ্ট হয় কিন্তু তার পরেও ভাগাভাগি করে আমরা দড়ি টানি।’

শিক্ষার্থী রোমানা বেগম বলেন, যেদিন আমাগো পোষাক খালের পানিতে ভিজে যায় ওই দিন ক্লাশ করতে হয় ভিজা জামা কাপড়ে। এতে আমাদের জ্বর, সর্দি ও কাশি হয়ে থাকে। কিন্তু কি আর করমু; স্কুলে না গেলে স্যারেরা আবার কড়া কথা কয়।’

বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও জেলা পরিষদের সদস্য ইসরাত জাহান আসমা বলেন, ‘গলাচিপা সদর ইউনিয়নের পূর্ব বোয়ালিয়া গ্রাম থেকে পানপট্টি ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পানপট্টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তুলারাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পানপট্টি মাদ্রাসাসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ব বোয়ালিয়া থেকে প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থী আসে। আমিও ছোট্ট ওই ডিঙি নৌকা দিয়ে পার হই। এ বিষয় বেশ কয়েকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছি কিন্তু উল্লেখযোগ্য কোনো সাড়া মেলেনি। উল্টো পূর্ব বোয়ালিয়া ও রত্মেশ্বর খেয়া ঘাটের প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তরে একটি ব্রিজ করে রাখা হয়েছে যা শিক্ষার্থীদের কোনো কাজে আসছে না।’

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধীর চন্দ্র কর্মকার বলেন, ‘খেয়া পারাপারের সময় মাঝি না থাকলেও ডিঙি নৌকার মালিক ধীরেনকে আমরা প্রতিষ্ঠান থেকে আগে ২০ হাজার টাকা দিতাম। এ বছর সে ৩০ হাজার টাকা দাবি করছে। কিন্তু খেয়ার মাঝি দড়ি টানিয়ে রেখে চলে যায় এতে শিক্ষার্থীসহ যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কিন্তু মাঝি ইচ্ছেমত টাকা চেয়ে বসে আছেন। আমরা তার সাথে সমন্বয় করার চেষ্টা করছি। 

তিনি আরও বলেন, দড়ি টেনে শিশুরা পারাপারের সময় প্রায়ই দড়ি প্যাচিয়ে পানিতে পড়ে যায়। এতে অনেক দুর্ঘটনার খবর পাই। কিন্তু অসহায়ের মতো শুনতে আর দেখতে হচ্ছে। 

এ প্রসঙ্গে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, 'আমি শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা শুনেছি। সরেজমিন ঘুরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। আপাতত পারাপারেরে জন্য অস্থায়ী কিছু একটা করার চিন্তুা করছি যাতে শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘব হয়।’ 

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা