• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

‘মনোনয়ন ঘোষণার আগে কিছুই চূড়ান্ত নয়’

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০১৮  

বাংলাদেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম। ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের মাধ্যমে তার রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ১৯৮১সালে মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হন। পরবর্তীতে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। এছাড়া দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পালন করেছন মাদারীপুর–৩ আসনের এই সংসদ সদস্য।

সম্প্রতি সমসাময়িক রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে কথা হয় ।

 সম্প্রতি গণভবনে জাতীয় নির্বচান পরিচালনা কমিটির একটা সভা হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে খবর এসেছে আওয়ামী লীগের ৮টি বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটি করা হবে। এই কমিটির গঠনের অগ্রগতি কতদূর?

বাহাউদ্দিন নাছিম: বিভাগীয় সংগঠনিক কোনো কমিটি করা করা হবে না। এটা আমাদের সংগঠনের গঠনতন্ত্রের কোথাও নেই। সেই আলোকে এইভাবে কোনো কমিটি করা হবে না, এটা আলোচনা করে বাদ দেয়া হয়েছে।

 টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সুফল ভোগ করছে জনগণ। আবারো নির্বাচন খুব কাছে চলে এসেছে। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের বহু প্রার্থীকে মাঠে কাজ করতে দেখা যাচ্ছেফলে একই আসনের নিজ দলের মনোনয়ন প্রার্থীদের মধ্যে এক ধরণের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। এটা অনেক জায়গায় দলীয় কোন্দলে পরিণত হয়ে জটিল অবস্থার সৃষ্টি করছে। বিষয়টি আওয়ামী লীগ কিভাবে দেখছে?

বাহাউদ্দিন নাছিম: বিষয়টিকে আমরা দলীয় কোন্দল হিসেবে দেখি না। নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য দলীয় মনোনয়ন নিতে প্রতিযোগিতা থাকে। উপমহাদেশের বড় রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে তরুণ, নবীন-প্রবীণ সব বয়সের মানুষেরাই এই দলের সাথে সম্পৃক্ত। বর্তমান বাংলাদেশে ৩০ বছরের তরুণদের আধিক্য সব চাইতে বেশি। বিশ্বে এটা বলা হয়ে থাকে যে দেশে তরুণ সমাজের সংখ্যাধিক্য থাকে সেই দেশ উন্নয়ন অগ্রগতিতে সবচেয়ে বেশি অগ্রগামী হয়। সেই জায়গা থেকে তরুণরা যাতে আমাদের প্রতি আগ্রহী এটা আমরা চাই, সেই লক্ষ্য নিয়ে আমারা কাজ করছি। ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়াও পেয়েছি।

তরুণদের আওয়ামী লীগের পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে কাজ করা এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে কাজ করার আগ্রহ বেশি। সেই অংশকে আমার সম্পৃক্ত করেই আমরা আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছি। সেই জায়গা থেকে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব যারা করবেন তারা আলাদা গুরুত্ব পাবেন।

 মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে আপনারা কোন সূচকের উপর ভিত্তি করে প্রার্থীদের মধ্যে থেকে সঠিক নৌকার মাঝি বেছে নেবেন?

বাহাউদ্দিন নাছিম: যাদের তৃণমূল আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আছে, যারা জনসম্পৃক্ত, দলের সাথে যাদের সম্পৃক্ততা আছে, মানুষের জনপ্রিয়তার বিচার যাচাইয়ে তারাই অগ্রগামী থাকবে। সততা, নিষ্ঠা, কমিটমেন্ট, আস্থা; সব মিলিয়েই কিন্তু মনোনয়ন। এগুলোকে কোনো চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমি মনে করি না। কারণ অতীতেও একটি আসন থেকে ৫ জন, ১০জন, ১২ জন প্রার্থী হয়েছেন। সে ক্ষেত্রে যাচাই বাছাই করে একজনকে দেয়া হয়। সেইভাবে তো ইলেকশন করে আসছি। এতে তো অতীতে কখনো সঙ্কট হয়নি আওয়ামী লীগে। এটাকে প্রতিযোগিতা হিসেবেই আমরা দেখি এবং সেভাবেই আমরা মানিয়ে নেই। প্রতিযোগিতামূলক কর্মকাণ্ড না থাকলে সংগঠন ভালোভাবে বিকশিত হয় না।

মুসলিম লীগও একটি পুরাতন রাজনৈতিক দল। তাদের আদর্শের সাথে ও বাস্তবতার সাথে কোনো মিল না থাকার কারণে, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারার কারণে তারা হারিয়ে গেছে।

প্রগতির ঝাণ্ডা যখন সারা ‍পৃথিবীতে উড়েছে তখন সমাজতান্ত্রিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এগিয়ে এসেছে। আবার এখন মুক্ত বাজার অর্থনীতির পুথিবীতে আওয়ামী লীগ সেই নীতিকে নিয়েই এগোচ্ছে। আমাদের প্রগতিশীল চিন্তা আছে, সে ক্ষেত্রে ধনী-গরিব ব্যবধান কমানো, শোষণমুক্ত সমাজ গড়া।

 আগামী নির্বাচনে দেশের তরুণ বা প্রথমবারের মতো ভোটাদের সমর্থন নিতে আওয়ামী লীগ বেশ তৎপর। এই ভোটারদের কাছে টানতে ক থাকছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে?

বাহাউদ্দিন নাছিম: ইতোমধ্যে আমরা রাজনৈতিক ভাবে পদক্ষেপ হাতে নিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, তরুণ প্রজম্মের কর্মসংস্থানের বাংলাদেশ, তরুণদের মেধাকে দেশের উন্নয়নের মূল ধারার সাথে সম্পৃক্ত করা এগুলো আওয়ামী লীগ আরো দশ বছর আগে থেকে শুরু করেছে। নির্বাচনী ইশতেহারে এগুলো নতুন করে আসার পাশাপাশি আরো সংযুক্ত করা হবে।

আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে তরুণরাই হলো দেশের মূল শক্তি। যে দেশে তরুণ ভোটারের সংখ্যাধিক্য থাকে, সে দেশে উন্নয়ন অগ্রগতি সব সময় বেশি হয়। এটা জরিপের ফলাফল। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের এখন সবচেয়ে ভালো সময় চলছে। সুতরাং, এই সময়ে তরুণদের পাশে না থাকলে তারাও আমাদের সঙ্গে থাকবে না। তরুণরা আওয়ামী লীগের সাথে না থাকলে নির্বাচনের ট্রেন মিস করবো। আমরা ট্রেন মিস করা দল না।

 চলতি বছরের শেষের দিকে হতে পারে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইতেহারের কাজ কত দূর?

আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম: নির্বাচনী ইশতেহারের কাজ শুরু হয়েছে। দলের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির গত সভায় আমরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। আরো আগে থেকেই একটু একটু করে কাজ শুরু হয়েছে। এগুলো আলোচনা-পর্যালোচনা, সংশোধন, গবেষক-বিশ্লেষকদের কাছ থেকে মতামত নেয়া সব মিলিয়ে সময় লাগবে। তবে নির্বাচনের আগে যথাসময়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করা হবে। তফসিল, নির্বাচনের সাথে সমন্বয় থাকবে।

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে কেমন টার্গেট নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ?

আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম: নির্বাচনের মূল টার্গেট আমাদের জনগণ। সেক্ষেত্রে, প্রাধান্য তরুণ সমাজের ওপর থাকবে। নতুন ভোটার, নতুন সদস্য।

 দেশের বিভিন্ন নির্বাচনী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বলছেন তারা দলের হাইকমান্ড থেকে গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন। দেখা গেছে, একই আসন থেকে একাধিক ব্যক্তি দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন বলে প্রচার করছেন। বিষয়টি যদি খোলাসা করেন...

আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিননাছিম: এসব প্রচারণার কোনো ভিত্তি নেই। এটা স্রেফ প্রচার। তবে এটাও নির্বাচনী প্রচারণার একটা অংশ। প্রার্থী বিশ্লেষণ, যাচাই-বাছাই, জনমত জরিপ এগুলো চলছে। এগুলো তিন মাস পর পর। এখন শেষ বারের মতো চলছে। এগুলো পার্লামেন্টারি বোর্ড চূড়ান্ত করবে। মনোনয়নের ঘোষণার আগে কিছুই চূড়ান্ত বলা যাবে না।

জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছোট দলগুলোর প্রভাব বেশ বেড়েছে। দেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কাছে টানার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীকদল নিয়ে আপনারা কি ভাবছেন এবং মহাজোটের পরিধি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা?

আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম: শরীকদলগুলোক মূল্যায়ন করা হবে। আমাদের সাথে যারা নির্বাচনী জোটে রয়েছে সবাইকে যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। আমাদের নির্বাচনী জোট হচ্ছে মহাজোট। এই মহাজোটের পরিধি আরো বাড়তে পারে।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে তৃতীয় একটি ধারা তৈরিতে কাজ করছে সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর,গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) নেতা আসম রবও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তাদের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট গঠন এবং আপনাদের অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির সমর্থনকে কিভাবে দেখছে আওয়ামী লীগ?

 বিএনপি যুক্তফ্রন্টকে সমর্থন করে। তাদের সমর্থন করার ভিত্তিটা কি? জনমত? সেটা তো ভোটের ভিত্তিতে হবে। নির্বাচন ছাড়া তো আর কোনো পথ নেই। আমাদের নেত্রী বলেছেন উত্তর পাড়ার দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। তারা ওখান থেকে এসে তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না।

মনোনয়ন নিয়ে আপনি কতখানি আশাবাদী?

আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম: আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামীণ জনপদ, সামাজিক, অর্থনৈতিক ভাবে উন্নতি সাধিত হয়েছে। আমার এলাকায় সব কাজ হয়েছে এমন দাবি করব না, তবে বাদ পড়ার সংখ্যা খুবই কম। এগুলো সম্পন্ন হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী।

আমার এলাকায় ১২৫ টিরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর ৬০-৭০ শতাংশ স্কুলের নতুন ভবন করতে সক্ষম হয়েছি। বাকিগুলোও আগামী ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে। আমার এলাকায় বিদ্যুতে বিপ্লব ঘটেছে। গত চল্লিশ বছরে যে কাজ হয়েছে ২০১৪ সালের জানুয়ারির পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত তার চেয়ে বেশি কাজ হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে আমার এলাকায় শতভাগ বিদ্যুতায়িত হবে বলে আশাবাদী। আমার নির্বাচনী এলাকা নিজেদের চাহিদা মোটানোর পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করা হয়। মাদারীপুর-৩ আসনে সাড়ে তিন হাজার মেট্রিকটন খাদ্য সারপ্লাস হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগের কারণে এটা বাড়ছে। আর কৃষিবিদ হিসেবে আমার এলাকার মানুষ কৃষিতে একটু বেশি সুযোগ পান। এছাড়া খেলার মাঠ, মসজিদ, মন্দির ও অনান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে সর্বোচ্চ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

মনোনয়ন নিয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী। দৃঢ় মনোবল ও আস্থা নিয়েই এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। অনেকে মিটিং মিছিল করছে আর আমি আমার এলাকায় এখন কেন্দ্র কমিটি করছি।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা