• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

বঙ্গবন্ধুর সেই চিঠি নিয়ে ঘুরছেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ৫ মার্চ ২০২০  

সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কোদন্ডা গ্রামের বড় পাগলা ফকিরের ছেলে জিয়াদ আলী ফকির, মেছের সানার ছেলে মফেজউদ্দীন সানা ও আবুল কাসেম মোল্লাসহ কয়েকজন বাবর আলী কমান্ডারের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। দেশ স্বাধীন করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। মুক্তি বাহিনীতে যোগ দেওয়ায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রকাশ্যে কোদন্ডা কালভার্টের ওপর গুলি করে হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাসেম মোল্লাকে।

পরে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন খুলনা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে আবুল কাসেমের পরিবারের সাহায্যার্থে তার স্ত্রী আমেনা বিবিকে দুই হাজার টাকার একটি চেক দেন। যার সঙ্গে তার পরিবারকে সমবেদনা জানানো বঙ্গবন্ধুর লেখা একটি চিঠিও ছিল।

সেই চিঠির স্মারক নম্বর প্র/ঐ/ক/৬-৪-৭২/শিউ/৪৫৩, তাং ২৪/০২ এবং চেক নম্বর সি;এ ০৩৪০৫৩। পরে আশাশুনি সদরের তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আমজেদ আলীর মাধ্যমে স্বামীর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ২৫০ টাকা ভাতাও পেয়েছিলেন আমেনা।

কিন্তু দুঃখের বিষয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অনুদান ও চিঠি পেলেও আজও সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি আবুল কাসেমের। তাই বঙ্গবন্ধুর দেওয়া সেই চিঠি নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তার স্ত্রী আমেনা। শেষ জীবনে তিনি স্বামীর মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি দেখে যেতে চান।

আমেনা জানান, তাদের বিয়ের মাত্র কয়েক বছর পর একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান ও তাকে রেখে তার স্বামী ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধে। কিন্তু আর দেখা হয়নি তার সঙ্গে।

তিনি জানান, ১৯৭১ সালের বাংলা ১১ কার্তিক সকালে বিলের মধ্য থেকে ধরে নিয়ে কোদন্ডা সড়কের কালভার্ট এর পাশে দাঁড় করিয়ে তাকে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পরে রাতের আধারে স্বামীর মরদেহ নিজের একটি সাদা রংয়ের শাড়ি দিয়ে কাফনের কাপড় বানিয়ে নিজের হাতে দাফন করেন তিনি।

স্বামী হারিয়ে শিশু সন্তানকে নিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ানো অসহায় আমেনা দেশ স্বাধীনের পর একই এলাকার রনজিতের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে ঘটনার বিবরণ জানিয়ে একটি খোলা চিঠি লেখেন। তারই জবাবে বঙ্গবন্ধু তাকে ওই চিঠি লেখেন ও অনুদান দেন।

আমেনা জানান, স্বামীর ভিটাবাড়ি বলতে কিছুই ছিল না তাদের। শিশু কন্যাকে নিয়ে পথে পথে বসবাস ছিল তার। কাসেম মোল্লার অন্য ভাইয়েরা সরকারি জায়গায় বসবাস করতেন এবং এখনো করেন।

বর্তমানে আশাশুনির শ্রীউলা গ্রামে সরকারি জায়গায় মেয়েজামাই আব্দুর রহিম সরদারের বাড়িতে নাতি-নাতনিদের নিয়ে কোনো মতে বসবাস করছেন আমেনা।বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে গেলেও সরকারি সহযোগিতা বা স্বামীর মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি পাননি তিনি। এখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত প্রার্থনা করে শেষ জীবনে স্বামীর স্বীকৃতি দেখে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা