• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

ফিরে দেখা সরকারের সফলতা : মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে নানা উদ্যোগ

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১১ জানুয়ারি ২০২০  

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির জীবনে এক অনন্য গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা এবং সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহবানে সাড়া দিয়ে দেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। বহু ত্যাগের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণ এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্মৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন সরকারের লক্ষ্য।

২০০৯ সাল হতে পর্যায়ক্রমে মুক্তিযোদ্ধার সম্মানী ভাতার হার মাসিক ৯০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে মাসিক ১০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে এবং ১০ হাজার টাকা করে বছরে দু’টি উৎসব ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। ২০০৯ সাল হতে ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা পর্যায়ক্রমে ১ লক্ষ থেকে বৃদ্ধি করে ২ লক্ষে উন্নীত করা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণির সর্বমোট ৭ হাজার ৮শ ৩৮ জন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, শহিদ পরিবার ও বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ পরিবারের মাসিক রাষ্ট্রীয় ভাতার পরিমাণ প্রায় ৫২% বৃদ্ধি করে পঙ্গুত্বের হার অনুযায়ী মাসিক সম্মানী ভাতা নিম্নরূপ হারে প্রদান করা হচ্ছে।

ঢাকার মোহাম্মদপুরস্থ গজনবী সড়কে নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১ এ ৮৪টি ফ্ল্যাট ও ৭৪ টি দোকান আছে। এরমধ্যে ৩৩টি ফ্ল্যাট ও ৩৩টি দোকান যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ভাতাভাগি সকল শ্রেণির যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে  স্বল্প মূল্যে রেশন প্রদান করা হচ্ছে। শিক্ষা ভাতা:  প্রতি সন্তান (অনধিক ২ সন্তান) কে বার্ষিক ১,৬০০/- টাকা হারে শিক্ষা ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। বিবাহ ভাতা: প্রতি কন্যাকে (অনধিক ২ কন্যা) বিবাহ ভাতা হিসেবে ১৯,২০০/- টাকা এককালীন প্রদান করা হচ্ছে। উৎসব ভাতা: উৎসব ভাতা হিসেবে বছরে ২টি মাসিক ভাতার সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। প্রীতিভোজ:  জনপ্রতি (২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর) ২৪০/- টাকা হারে সর্বমোট ৪৮০/- টাকা প্রদান করা হচ্ছে।

চিকিৎসা খরচ (দেশে) :  ২০% ও তদুর্ধ্ব পঙ্গুত্বের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করা হচ্ছে। চিকিৎসা খরচ (বিদেশে): ২০% ও তদুর্ধ্ব পঙ্গুত্ব যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী প্রয়োজনে বিদেশে (ভারত, থাইল্যান্ড ও সিংগাপুর) উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সর্ব্বোচ ৮ লক্ষ টাকা চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হচ্ছে। কৃত্রিম অঙ্গ প্রত্যঙ্গ: যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চলাফেরার জন্য হুইল চেয়ার, ক্র্যাচ, লাঠি, কৃত্রিম অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, জুতা, মোজা, শ্রবণ যন্ত্র, চশমা ইত্যাদি সরবরাহ করা হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তন: সম্পূর্ণ পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বৎসরে একবার কক্সবাজারে আবহাওয়া পরিবর্তন/ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মৃত দেহ দাফন/সৎকার: রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতাপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মৃত্যুবরণ করলে তাঁর ইচ্ছাকৃত স্থানে গার্ড অব অনারসহ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মৃত দেহ দাফন/সৎকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পানির ও পয়ঃ নিস্কাশন বিল মওকুফ: সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাসরত যুদ্ধাহত মু্ক্িতযোদ্ধা ও শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের গৃহস্থলি কাজে পানির বিল মওকুফ সুবিধা পেয়ে থাকেন। গ্যাস বিল মওকুফ: যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে জানুয়ারি ২০০০ সাল হতে দুই বার্নারের একটি চুলার বিল মওকুফ সুবিধা দেয়া হয়েছে। হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ: সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাসরত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ১৫০০ বর্গফুট পর্যন্ত নিজস্ব বাড়ি হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। মোবাইল ফোন: চিকিৎসা ও অন্যান্য কাজে ট্রাস্টের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের জন্য ২০১৭ সালে হুইল চেয়ারে চলাচলকারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের মোবাইল ফোন দেওয়া হয়েছে। এ খাতে প্রতিজনকে মাসিক ১,১০০/- টাকা হতে ১৯০০/- পর্যন্ত মোবাইল বিল প্রদান হয়ে থাকে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদেরকে পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়। পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে নিম্নবর্ণিত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন: যুদ্ধাহত মু্মুক্তিযোদ্ধাগণ পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রথম শ্রেণিতে বিনা ভাড়ায় যাতায়াত সুবিধা পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশ বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটে এবং আন্তর্জাতিক যে কোন রুটে (ইকোনমি) বছরে একবার যাতায়াত সুবিধা পেয়ে থাকেন। পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে বিআরটিসির বাসে বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিআইডব্লিউটিএ’র জলযানে প্রথম শ্রেণিতে বিনা ভাড়ায় যাতায়াতের সুবিধা পেয়ে থাকেন।

সেতু পারাপারের ক্ষেত্রে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাগণ পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে তাঁদের বহনকারী গাড়ি টোল মওকুফ সুবিধা পেয়ে থাকেন। যুদ্ধাহত মুকিযোদ্ধাগণ বিআইডব্লিউটিএ’র ফেরি পারাপারের ক্ষেত্রে পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে তাঁদের বহনকারি প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও এ্যাম্বুলেন্স বিনা ভাড়ায় পারাপারের সুবিধা পেয়ে থাকেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাগণ পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল ও মোটেলে স্ব-পরিবারে সর্বোচ্চ ২ রাত বিনা ভাড়ায় বছরে একবার থাকার সুবিধা পেয়ে থাকেন। যুদ্ধাহত মুকিযোদ্ধাগণ পরিচয়পত্র প্রদর্শন করে জেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে বিনা ভাড়া ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অবস্থানের সুবিধা পেয়ে থাকেন। অনলাইনে ভাতা প্রদান: যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, মৃত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ৭১৯৪ জনকে সম্মানীভাতা অন-লাইনের মাধ্যমে তাঁদের নিজস্ব হিসাব নম্বরে প্রেরণ করা হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে ভাতা বিতরণের নিমিত্ত ‘বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বিতরণ নীতিমালা-২০১৩’ হালনাগাদ করা হয়েছে এবং খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বিতরণ নীতিমালা-২০১৬ প্রণয়ন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ছাত্র বৃত্তি প্রবর্তন: বঙ্গবন্ধু ছাত্র বৃত্তি প্রবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে ২৩৫০ জনকে বঙ্গবন্ধু ছাত্রবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। সারাদেশের হাট-বাজারের ইজারালব্ধ অর্থ হতে প্রাপ্ত ৪% টাকা অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করা হয়।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা