• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ, আসতে পারে মহাবিপর্যয়

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২০  

করোনাভাইরাস মহামারিতে অবরুদ্ধ পৃথিবী। গোটা পৃথিবী যখন এই দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তখন বিশেষজ্ঞরা বলছেন— এর থেকে বড় ধরনের বিপর্যয় অপেক্ষা করছে মানবজাতির জন্য। প্রকৃতির প্রতি বিরুদ্ধাচরণ বন্ধ না হলে পৃথিবীতে আরও বড় ধরনের মহামারি কিংবা বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় জীববৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো একটা একক প্রজাতি কোভিড-১৯ মহামারির জন্য দায়ী। এই মহামারি মানুষের জীবনধারা ব্যাহত করেছে, বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিকে থামিয়ে দিয়েছে রাতারাতি। এ পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য খোলা আছে ছোট একটা পথ। যেটি বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে এবং ভবিষ্যতে এমন ভুলের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সেই পথ বাতলে দিচ্ছে।

 

কার্বন নিঃসরণ


অধ্যাপক জোসেফ সেটেলেল, সান্দ্রা দাজ ও এদুয়ার্দো ব্রোন্ডিজিওর নেতৃতে ‘মানব সমাজ হুমকির মধ্যে রয়েছে’ শীর্ষক একটি গবেষণা হয়। ২০১৯ সালে আন্তসরকারি বিজ্ঞান-পলিসি প্লাটফর্ম অন বায়োডাইভারসিটি ও ইকোসিস্টেম সার্ভিসেসে (আইপিবিইএস) গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছিল। এই গবেষণাটি এখন পর্যন্ত বহুল আলোচিত গ্রহের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নেতৃত্ব দিয়েছেন। গবেষণাটি শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে— পৃথিবীর প্রাকৃতিক জীবন ধ্বংসের মুখে। মানব সমাজ এখন বিপদগ্রস্ত।

বিশেষজ্ঞদের মতামত, মানুষের এহেন আচরণ প্রাণীকুলের আবাসস্থল বাধাগ্রস্ত করছে। একইসঙ্গে বন্যপ্রাণীর ব্যবসার মাধ্যমে মানুষের সংস্পর্শে এসে ডেকে আনছে মহামারি। ৭০ শতাংশ রোগ সৃষ্টির পেছনে দায়ী মানুষ নিজেই।

প্লাস্টিক বজ্য


ডক্টর পিটার দাশজাক। যিনি আইপিবিইএস’র পরবর্তী গবেষণার কাজে নিয়োজিত আছেন। সোমবার (২৭ এপ্রিল) তার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, ব্যাপকভাবে বন উজাড়, কৃষির অনিয়ন্ত্রিত সম্প্রসারণ, শিল্প কারখানার সম্প্রসারণ, খনন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি বন্য প্রজাতির শোষণ— এগুলো রোগ ছড়িয়ে পড়ার জন্য একটি ‘সুপরিকল্পিত পরিবেশ’ তৈরি করছে।

নগরায়ণ ও বৈশ্বিক উড়োজাহাজ ভ্রমণের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ বেড়ে যাওয়ায় এ ধরনের ভাইরাসের জন্ম নিচ্ছে পৃথিবীতে, যার জন্য মানুষকে দুর্ভোগ ও দুর্দশার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আর অচল করে দিচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতিকে। মানুষের ভোগান্তির পেছনে দায়ী মূলত মানুষই।

ভবিষ্যতে মহামারি হলে সেটা আরাও দ্রুত গতিতে বিস্তার লাভ করবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেবে। এর থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হলো— মানুষের সতর্ক হওয়া। শিল্পায়ন, নগরায়ণ, কৃষিকাজ থেকে শুরু করে উড়োজাহাজ সংস্থা ও জীবাশ্ম শিল্পের উন্নতি করা গেলেই তবে ভবিষ্যৎ মহামারি রুখতে আমরা সক্ষম হবো।

হুমকিতে বন্যপ্রাণী


বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা। সেজন্য প্রয়োজন প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর নিবিড় পরিচর্যা।

মহামারি ঝুঁকি থেকে রক্ষায় প্রথমত নজরদারি বাড়ানো ও দেশের স্বাস্থ্যখাতে যথাযথভাবে অর্থায়ন করা দরকার। এটিকে ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগ বলা যেতে পারে বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এর জন্য হয়তোবা কয়েক বিলিয়ন অর্থায়নের প্রয়োজন। যদিও এটি অনেক বেশি, তবে আপনি ভাবুন— যদি একবার মহামারি আসে, তাহলে এর পেছনে আমাদের ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হচ্ছে। সেক্ষেত্রে এই বিনিয়োগটাই শ্রেয়।

চলতি বছরের মার্চে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক প্রধান ইনগার অ্যান্ডারসন বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি ও চলমান জলবায়ু সংকটের মাধ্যমে প্রকৃতি আমাদের একটি বার্তা প্রেরণ করছে। সেটি হলো— পৃথিবীর যত্ন নিতে ব্যর্থ হওয়া মানে নিজের যত্ন নিতেই ব্যর্থ হওয়া।

ধ্বংসের মুখে প্রকৃতি


গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, সরকারপ্রধানদের আরও টেকসই ও স্থিতিশীল সমাজ তৈরি এবং মহামারির পরে ‘আরও উন্নততর পরিবেশ বিনির্মাণের’ সুযোগটি কাজে লাগাতে হবে।

১৯৮০ সালে ‘বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি’ তত্ত্বের উদ্ভাবনকারী অধ্যাপক টমাস লাভজয় বলেন, মহামারি প্রকৃতির প্রতিশোধ নয়, এটা আমাদের নিজেদের সৃষ্ট।

প্রকৃতিতে আমাদের অবিচ্ছিন্ন ও অতিরিক্ত অনুপ্রবেশ, অবৈধভাবে অবাধে বন্যপ্রাণীর বাণিজ্য, ভেজা-স্যাঁতস্যাঁতে বন্যপ্রাণীর বাজার, দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার মাংসের বাজারের— এসবের পরিণতিই মহামারি করোনাভাইরাস। এপ্রিলের শুরুতে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বন্যজীবনের ওপর মানুষের প্রভাব ভাইরাসগুলোর প্রসারের জন্য দায়ী।

শেষমেশ জীববৈচিত্র্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের বর্তমান সংকট থেকে আরও ভয়াবহ মহাবিপর্যয় ভবিষ্যতে আসতে পারে। সময় থাকতে আমরা প্রকৃতিকে সুরক্ষিত করি। বিনিময়ে প্রকৃতিও আমাদের সুরক্ষিত করবে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা