• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

নাজাতের দশকে দোয়ায় রত হই

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৫ মে ২০২০  

বিশ্বময় মহামারি করোনার দিনগুলোতেও মহান আল্লাহ তাআলার বিশেষ কৃপায় আমরা পবিত্র রমজানের রোজা রাখার সৌভাগ্য পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ। দেখতে দেখতে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে রহমত ও মাগফিরাতের দিনগুলো।

এখন নাজাতের দশকে আমাদের ইবাদত-বন্দেগিতে আনতে হবে বিশেষ পরিবর্তন। নদীর জলের মাছগুলো যেমন জেলের ছড়ানো জালের শেষ প্রান্তে এসে জমা হয় তেমনিভাবে রমজানের যত কল্যাণ তার সবটুকুই এই শেষ দশকে এসে সঞ্চিত হয়। আর সেই অংশের কোনো বেজোড় রাতেই আত্মগোপন করে থাকে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ ঐ রাত, যার নাম 'লাইলাতুল কদর'।

অতএব সাওয়াব ও কল্যাণে পরিপূর্ণ এ রাতের সন্ধান লাভ করা কোনো সাধারণ বিষয় নয়, সাধারণ কাজও নয়। এ যে এক মহা সাধনার কাজ। যে মহাজন বছরের প্রতিটি দিন-রাত সাধনায় অতবাহিত করে, ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত থেকে পুণ্যতায় পরিপূর্ণ হয়, কেবল তিনিই সন্ধান পাবেন মর্যাদার সে রাতের সওগাত সম্ভার।

তাই নাজাতের এ দশকে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এবং সমগ্র বিশ্বের শান্তির জন্য আমাদের অনেক বেশি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করা উচিত।

নাজাতের এ রাতগুলো ইবাদতের মাধ্যমে জেগে থাকা চাই। দুনিয়ার যে দিকে তাকাই সর্বত্রই যেন ফেতনা-ফাসাদ-নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা আর অশান্তি বিরাজ করছে। অপর দিকে বিশ্বময় করোনাভাইরাসের কারণে সবাই আতঙ্কিত।

এই মুহূর্তে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের সবাইকে অনেক বেশি প্রার্থনা করতে হবে। একমাত্র তিনিই যদি দয়া করেন তবেই এ বিশৃঙ্খল অবস্থা এবং করোনাভাইরাসের আক্রমণ থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি।

পবিত্র রমজান হলো দোয়া কবুলের সর্বোত্তম মাস। তাই নাজাতের এ দিনগুলোতে আমাদের দোয়ার প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দেয়া জরুরি। কেননা, যে ব্যক্তি প্রকৃত প্রেরণা নিয়ে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে আল্লাহ তাআলা তাকে কখনও ব্যর্থ হতে দেন না। যেভাবে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। কিন্তু যারা আমার ইবাদত সম্বন্ধে অহংকার করে, তারা নিশ্চয় লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সুরা মুমিন : আয়াত ৬০)

মহান আল্লাহ তাআলা বান্দার দোয়া গ্রহণ করার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করেন, কখন তার বান্দা তাকে ডাকবে আর তিনি তা গ্রহণ করবেন এবং তার দু:খ কষ্ট দূর করবেন।

এছাড়া রমজানের এই নাজাত বা মুক্তির দশকে দোয়া কবুলিয়তের একটি বিশেষ মুহূর্ত সৃষ্টি হয়। শেষ দশকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য অনেকেই ইতেকাফ করেন। একাগ্রতার সাথে আল্লাহকে ডাকেন। তারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার উদ্দেশ্যে এবং তারই ভালবাসায় আত্মমগ্ন হয়ে ইতিকাফে বসেন আর গভীর ভাবে দোয়ায় রত থাকেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সৎকর্মশীলতার দিক দিয়ে আল্লাহর দৃষ্টিতে রমজানের শেষ দশকের চেয়ে মহৎ ও প্রিয় আর কোনো দিন নেই।’ (মুসনাদ আহমদ)

এ দশকে আল্লাহ তাআলা অন্যান্য দিনের চেয়ে অনেক বেশি মাহাত্ম্য দান করেন। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির চাদরে আবৃত হন। এ দশক তাদের মহান মানুষে পরিণত করে দেন। মহান আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক যতো নিবিড় হবে, বান্দাও ততো মহান হবেন।

নাজাতের দশকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইবাদত সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, ‘যখন রমজান শেষ দশকে প্রবেশ করতো বা শেষ দশক শুরু হতো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমর বেঁধে তাতে আত্মনিয়োগ করতেন। তার রাতগুলো জীবিত করতেন এবং তার পরিবার-পরিজনকেও ইবাদতের জন্য জাগাতেন। পরিবার-পরিজনকে জাগানো তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সব সময়ের সাধারণ রীতি ছিল এবং তার রাত্রিগুলোও ইবাদতে জীবিত-ই থাকতো।’ (বুখারি)

তাই আসুন, আমরা সবাই নিজেদের ক্ষমা এবং মহামারি করোনার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য পবিত্র মাহে রমজানের এই নাজাতের দশকে অনেক বেশি দোয়া করি। আল্লাহ তাআলা তার বিশেষ দয়ায় মহামারি করোনাভাইরাস থেকে বিশ্বকে রক্ষা করুন। আমিন।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা