• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

চিন্তা ও ভাষা

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ৭ নভেম্বর ২০১৮  

লেখক: পবিত্র সরকার
পাখি আগে না ডিম আগেএই তর্কটার কথা সবাই জানেন। ডিম পাখি পাড়ে, কিন্তু পাখিও তো ডিম ফুটেই বেরোয়। তাহলে কে আগে কে পরে? এই তর্কের এখনো মীমাংসা হয়নি বললে কথাটা একটু অতিরঞ্জন হবে। মীমাংসা হয়েছে, তবে সাধারণ পাঠক সেটা সবাই জানেন না বলে মনে হয়। অবশ্য তর্কটাই যে আছে তাও অনেকে জানেন না। কিন্তু লেখাপড়া করা মানুষের মধ্যে এ নিয়ে হয়তো কখনো প্রশ্ন ওঠে, যাদের মনোবিজ্ঞানের জ্ঞান নেই তারা সহজে এর উত্তর পান না। মনোবিজ্ঞান বা মনোভাষাবিজ্ঞানে অনভিজ্ঞ পাঠকের জন্য এই লেখা।চিন্তা আর ভাষার ব্যাপারে এই একটা সমস্যা ছিল। হয়তো এখন মনে হতে পারে, আরে! এটা একটা সমস্যা নাকি? ওটা তো ছিল একটা আপাত-সমস্যা, তবু প্রশ্নটা অনেকদিন ধরে আমাদের ঝামেলায় ফেলেছে। বিশেষ করে উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে – মানুষ আগে চিন্তা করে তারপর কথায় তা প্রকাশ করে, নাকি ভাষা ছাড়া মানুষ চিন্তা করতেই পারে না, ভাষাই চিন্তার একমাত্র বাহন? অর্থাৎ প্রথম একদল অনেক ক্ষেত্রেই দুয়ের সম্ভাব্য বিচ্ছেদ কল্পনা করে, বলে যে ভাষা ছাড়াও চিন্তা করা যায়। তারা অবশ্য এমন চরম কথা বলেন না যে, ভাষায় চিন্তা করা যায় না। ভাষার মধ্যস্থতায় চিন্তা অবশ্যই করা যায়, ভাষায় চিন্তা প্রকাশিত হয়। মানুষের যদি ভাষা না অর্জিত হতো তাহলে মানুষ এত বিচিত্র চিন্তা করতেই পারত না, প্রকাশ করতে তো পারতই না; কিন্তু ভাষা ছাড়াও চিন্তা করা সম্ভব। আরেক দল বলে বা বলত যে, দূর! ভাষা ছাড়া চিন্তা সম্ভবই নয়। প্রথম দলে আছেন চমস্কির এককালের এমআইটির ছাত্র জেরি ফোডোর আর দ্বিতীয় দলে আছেন ভিগোৎস্কি নামক রুশ মনোবিজ্ঞানী, আমেরিকান ভাষাবিজ্ঞানী ব্লুমফিল্ড – এবং আরো কেউ কেউ।ফোডোরের যুক্তি, আচ্ছা, পশুপাখির তো ভাষা নেই, কিন্তু তারা কি চিন্তা করে না? কিংবা যে-শিশু ভাষা শেখেনি, তার কি কোনো চিন্তাপ্রক্রিয়া নেই? ‘সামনে গাছপালাগুলো নড়ছে, কে জানে ওখানে আমাদের বিপদ লুকিয়ে আছে কি না -’ হরিণ বা জেব্রার দল কি এরকম ভাবে না? এখনো নানা জায়গায় যে বর্ষার পরে হনুমানের দল চলে আসে খাবার-ফল ইত্যাদি লুটপাটের বাসনা নিয়ে – তাদের কি কোনো চিন্তা থাকে না যে, ‘এই সময়ে ফলটল পাকবে, চলো দলবেঁধে উদ্যোগ নিই?’ শিশু কি কখনো তার মা সম্বন্ধে ভাবে না যে, ‘এই মহিলার ওপর আমি খাদ্য বা অন্যান্য ব্যবস্থার জন্যে বেশ নির্ভর করতে পারি, তাই এই মহিলা কাছে থাকলে আমার ভালো লাগবে।’ নিশ্চয়ই পশুপাখিরা এবং শিশুরা এমন ভাবে। এমনকি ফোডোর আরো একটা অতি অকাট্য যুক্তি দিতেই পারতেন; জীবজগতের বিবর্তনের যুক্তি, সেটা হলো, ‘আরে মানুষ তো বহুদিন কথা বলতেই শেখেনি, তা যখন তাদের ভাষা ছিল না তখন কি তারা চিন্তা করত না? নিশ্চয়ই করত।’ ঠিক কথা! মানুষ এসেছে পৃথিবীতে তা প্রায় আশি-নব্বই হাজার বছর হবে; আর তার ভাষা তৈরি হয়েছে বড়জোর চল্লিশ হাজার বছর আগে। তাহলে চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর কি সে আদৌ চিন্তা করেনি? এসব যুক্তি কেউ অস্বীকার করার কথা ভাবে না।বস্তুতপক্ষে চমস্কির একটি কথাতেও এই ইঙ্গিত আছে বলে মনে হয়। দুই হাজার সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বক্তৃতায় তিনি মানুষের বিবর্তনে ভাষাবোধ বা ভাষাক্ষমতা কীভাবে জন্মাল তার কথা বলেছিলেন ((Chomsky, 2000 : 17))। বলেছিলেন যে, হয়তো পঞ্চাশ বা ষাট হাজার বছর আগে, মানুষের বা মানব-অভিমুখী উন্নত ‘প্রাইমেট’দের মধ্যে কোনো একটা ‘জিন’ বা কিছু ঢুকে পড়ে, যার বলে মানুষ ভাষার দিকে এগিয়ে যায়। পরে কেউ কেউ বলেছেন যে, এই জিনটার নাম Fox P2। অন্য কোনো প্রাণীর ক্ষেত্রে এই জিনগত সংযুক্তি ঘটেনি, তাই অন্য কোনো প্রাণীর ভাষাও নেই। চমস্কির

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা