• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

খুলনার কলেজগুলোতে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দাবি

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে আগামী ১১ মার্চ। আর এতেই বিভাগীয় শহর খুলনার কলেজগুলোতেই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছেন ছাত্রনেতারা। দীর্ঘদিন অকার্যকর থাকা ছাত্রসংসদগুলো চালু করে নির্বাচন দিয়ে খুলনার ভবিষ্যত নেতৃত্ব সংকট পূরণের দাবি তাদের। 

অন্যদিকে ছাত্র সংসদ না থাকায় ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক সহাবস্থান নেই বলেও অভিযোগ অনেকের। খুলনার ছাত্র সংগঠনগুলোতেও মেধাবীভিত্তিক নেতৃত্ব সংকট দেখা দিয়েছে বলে অভিমত সাবেক ছাত্রনেতাদের।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে খুলনার কোন কলেজ ক্যাম্পাসেই ছাত্র সংসদ কার্যকর নেই। কোথায়ও দুই, কোথায়ও দেড় যুগ ধরে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হচ্ছে না। ফলে বিভাগীয় সদর খুলনায় শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার, বিনোদন, খেলাধুলা, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানাদি উদ্যাপনসহ কলেজের সার্বিক উন্নয়নে তাদের ভূমিকাই রাখতে পারছে না বর্তমান নেতৃত্ব। 

খুলনার ছাত্র রাজনীতির সুতিকাগার নগরীর দৌলতপুরের সরকারি বিএল কলেজ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অক্সফোর্ড খ্যাত বলে পরিচিত এ কলেজে ছাত্র সংসদ নেই প্রায় তিন দশক। কলেজ ছাত্র সংসদ থেকে জানা গেছে, ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে বিএল কলেজ ছাত্র সংসদের সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পরের বছর ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ছাত্র সংসদের জিএস (সাধারণ সম্পাদক) শিবির নেতা মুন্সী আবদুল হালিমসহ দুই শিবির নেতাকে ক্যাম্পাসের ভেতরেই গলাকেটে হত্যা করা হয়। ওই দিনই বিএল কলেজ ছাত্র সংসদ বন্ধ ও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে ছাত্র রাজনীতি চালু হলেও সংসদের তালা আর খোলা হয়নি। সরেজমিন কলেজ ক্যাম্পাসে দেখা যায়, ছাত্র সংসদের জন্য বরাদ্দ একতলা ভবন তালা দেওয়া। 

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী চন্দন মন্ডল বলেন, ছাত্র সংসদ না থাকায় তাদের অভাব-অভিযোগের বিষয়ে বলার কোনো জায়গা নেই। শিক্ষক ও কয়েকজন নেতার হাতে সবকিছু জিম্মি হয়ে আছে। বিএল কলেজ ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রমৈত্রী সক্রিয়। তবে সবখানেই দেখা গেছে ছাত্রলীগের আধিপত্য। সব ছাত্র সংগঠন ছাত্র সংসদ নির্বাচন দাবি করলেও পরিবেশ নিয়ে রয়েছে ভিন্নমত।
আযম খান সরকারি কমার্স কলেজের ছাত্র সংসদের অস্তিত্বও অনুরূপ। ২০০৩-২০০৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে তৌহিদ, আরিফ, রায়হান পরিষদ ছিল সর্বশেষ। সেই থেকে এক যুগ নেই শিক্ষার্থী প্রতিনিধিত্বকারী ছাত্র সংসদ। কলেজের কয়েকজন ছাত্রের সাথে কথা বলে জানাযায় ছাত্র সংসদ নির্বাচন তো দূরের কথা  কলেজে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নেই। কর্মাস কলেজে বর্তমানে একাদশ শ্রেণী থেকে শুরু করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী পর্যন্ত ৪ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। 

সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ২০০১ সালে। সেসময় বিএনপি সমার্থিত মিতা-লাভলী-তানিয়া প্যানেল নিরঙ্কুষ বিজয় লাভ করেছিল। ২০০২ সালের শেষের দিকে সংসদের মেয়াদ শেষ হলে বিলুপ্ত হয় কমিটি। আর অদ্যবধি, দীর্ঘ ১৬ বছর খুলনা মহিলা কলেজে ছাত্র সংসদ নেই। কলেজের নবনিযুক্ত অধ্যক্ষ টি এম জাকির হোসেন গত ৩১ ডিসেম্বর যোগদান করেই কলেজে আমুল পরিবর্তনের আভাস দিয়েছে। বেশ কয়েকজন ছাত্রী ও শিক্ষকরা বলেছেন খুলনার কোথাও ছাত্র সংসদ নির্বাচন সম্ভব হলে বর্তমানে সরকারি মহিলা কলেজেই সম্ভব হবে।

অধ্যক্ষ টি এম জাকির হোসেন বলেন যা কিছু কলেজের জন্য ভালো সবকিছুই করা হবে। ভবিষ্যত নেতৃত্ব তৈরিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন ডাকসুর নির্বাচনের ব্যাপারে এ বিষয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সরকারি সুন্দরবন আদর্শ কলেজের ছাত্র সংসদ সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ৮ বছর আগে। এর পর এক দশকেও ছাত্র সংসদ নির্বাচন আলোর মুখ দেখেনি। এমনকি ছাত্র সংসদ যে রুমটি ছিল তা এখন জরাজীর্ণ অবস্থা।

সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজে ছাত্র সংসদ নেই অর্ধযুগের বেশি সময়। সর্বশেষ নির্বাচনে ছাত্রলীগ সমর্থিত মহিন, মঞ্জুর, সোহেল প্যানেল নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছিল। পরে নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এছাড়া, দৌলতপুর (দিবা-নৈশ) ডিগ্রী কলেজে সর্বশেষ ছাত্র সংসদ ছিল মহিউদ্দিন-হারুন প্যানেল ১৯৯২ সালে। খুলনার একমাত্র সরকারি পলিটেকনিক কলেজটির ছাত্রসংসদ ছিল ২০০৬ সাল পর্যন্ত। উৎসব মুখর পরিবেশে হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছিল প্রায় দেড় যুগ আগে। এখন পর্যন্ত কলেজটিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ইতিহাস ভুলতে বসেছে বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা। 

তবে আগামী ১১ মার্চ ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণা হওয়ায় নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে খুলনার ছাত্র নেতৃত্ব। তাদের দাবি আগামী দিনের নেতৃত্ব সংকট পূরণের জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নেই। 

সোনাডাঙ্গা থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ রুম্মান আহমেদ বলেন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে যাতে হয় তার জন্য দাবি করছি। সিনিয়র নেতৃবৃন্দ সেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছে। চেষ্টা করছি খুলনার ক্যাম্পাসগুলো সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত করতে। ক্যাম্পাসে ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান আছে বলে তিনি দাবি করেন।

নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ সুমন বলেন, কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ না থাকায় মেধাভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চা হচ্ছে না। ছাত্রলীগের মারমুখী রাজনীতি অতীতে কখনো দেখিনি। ছাত্রলীগের এ ধ্বংসের রাজনীতির বলি হয়ে জাতি একদিন মেধাবী নেতৃত্বের সংকটে পড়বে। অচিরে ক্যাম্পাসগুলোতে সকল ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থানের জোর দাবি জানান তিনি।

 

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা