• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

কোরবানির ঘটনা থেকে আমাদের শিক্ষা

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৬ জুলাই ২০২০  

আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা ছিলেন হজরত ইব্রাহিম (আ.)। আল্লাহ তায়ালার ভালবাসার পাত্র হতে তাকে বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা স্বীকার করতে হয়েছিলো। কখনো আল্লাহর তরফ থেকে বলা হয়েছে, স্ত্রী-সন্তানকে জনমানবহীন নির্জন প্রান্তরে রেখে আসতে। প্রিয় সন্তানকে কোরবানি করা, শয়তানের প্ররোচনা ইত্যাদির মাধ্যমেও তাকে পরীক্ষা করা হয়েছে।

তবে তিনি সব পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তার উত্তীর্ণের ঘোষণা আল্লাহ তায়ালা এভাবে দিয়েছেন, ‘(স্মরণ করো হে নবী! ওই সময়ের কথা) যখন হজরত ইব্রাহিমকে তার রব কয়েকটি বিষয় দ্বারা পরীক্ষা করলেন, আর তিনি সেসব বিষয় পূরণ করলেন।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১২৪)।

আল্লাহ তায়ালা হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর এসব কোরবানিকে খুবই পছন্দ করেছিলেন। তাই তিনি কেয়ামত পর্যন্ত এসব কর্মকে জিন্দা রাখার ব্যবস্থা করেছেন। হজরত ইবাহিম (আ.) আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছেন হাজার হাজার বছর হয়ে গেছে। কিন্তু তাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় বিভিন্ন বিধিবিধান পালনের মধ্য দিয়ে এখনো মানুষ তাকে স্মরণ করে। হজে মানুষ শয়তানকে পাথর মারছে তার আমলকে অনুসরণ করে। তার অনুকরণে জিলহজের দশ তারিখ হাজিরা এবং সাধারণ মুসলমান কোরবানি করছে। মা হাজেরা (আ.) এর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য হাজিরা সাফা-মারওয়া দৌঁড়াচ্ছে। এ সবই হচ্ছে হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর স্মৃতিকে রক্ষার খোদায়ি ব্যবস্থা।

হাদিসে এসেছে, সাহাবায়ে কেরাম নবী করিম (সা.)-কে জিজ্ঞেস করেছেন, কোরবানি কি বিষয়? হুজুর (সা.) বলেন, তোমাদের পিতা হজরত ইব্রাহিমের (আ.) সুন্নত ও তার স্মৃতিকে রক্ষার নাম কোরবানি। রাসূল (সা.)-কে আবার জিজ্ঞেস করা হলো, এতে আমাদের কি সওয়াব? তিনি বলেন, কোরবানির পশুর প্রত্যেক পশমের বিনিময়ে তোমাদের জন্য একটি সওয়াব লেখা হবে।’ (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৩৫১৮)। পশমের বিনিময়েই যদি এত সওয়াব পাওয়া যায় তাহলে গোশত, চামড়া ও পশুর অন্যান্য অংশের মোকাবেলায় আরো কত সওয়াব পাওয়া যাবে! আলোচনার মর্ম হলো, আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় বান্দাদেরকে স্মরণে জন্য তাদের আমলকে ইবাদত হিসেবে নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এবং সাধারণ মানুষের ওপর তা পালন করা আবশ্যক করেছেন।

মানুষ ও মানুষের কর্মকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য তাদের স্মৃতিচিহ্নকে রক্ষা করার আদত বহু পুরনো। ভাষকর্য বা অন্য কোনো স্থাপত্য নির্মাণ করে স্মৃতিকে ধরে রাখার চেষ্টা করা হয়। উদ্দেশ্য থাকে ওই ব্যক্তির সম্মান ফুটিয়ে তোলা। ভাষকর্য বা স্মৃতিচিহ্ন রক্ষার কারণে বহুকাল পর্যন্ত সে মানুষের হৃদয়ে বাস করে। মানুষের মাঝে তাকে নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মানুষের নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার ওপর এর কোনো প্রভাব পড়ে না। এজন্য ভাষকর্য বা স্থাপত্য নির্মাণের পুরনো পদ্ধতিকে ইসলাম বাদ দিয়েছে।

নবী-রাসূলদের মহৎ কর্মকে পরবর্তীদের মাঝে ইবাদত হিসেবে জারি করে, তাদের স্মৃতিকে রক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তখন পরবর্তীরা এসবকে শুধু একজন ব্যক্তির কর্ম হিসেবেই দেখে না। বরং এগুলোকে নিজেদের জীবন পরিবর্তনের জন্য ইবাদত মনে করে পালন করে। ভাষকর্য বা অন্য যেকোনো স্থাপত্য এক সময় নিঃশেষ হয়ে যাবে। কিন্তু  ইবাদত হিসেবে জারি হওয়া এসব কর্ম কেয়ামতের আগ পর্যন্ত থাকবে।

নবীরা ছাড়াও অন্যদের ভালো কর্মগুলোকেও চর্চা ও আমলের মাধ্যমে ধরে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। হজরত জারির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামে ভালো কোনো বিষয় জারি করবে তাহলে সে এর সওয়াব পাবে এবং তার পরে যারা ওই ভালো কাজের ওপর আমল করবে, তাদের সমপরিমান সওয়াবও সে পাবে। এবং এর জন্য আমলকারীর সওয়াব থেকে কোনো অংশ কমানো হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো মন্দ বিষয় জারি করবে, সে এর গুনাহ পাবে এবং পরবর্তীতে যারা এর ওপর আমল করবে তাদের থেকেও একটা অংশ সে পাবে। এর জন্য আমলকারীর গুনাহের অংশ থেকে কমানো হবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১০১৭)। 

হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘কখনো কোনো মানুষকে নির্যাতন করে মারা হলে, এ হত্যার গুনাহের একটা অংশ আদম (আ.) এর ছেলে কাবিলের আমলনামায় যুক্ত হয়। কারণ সেই প্রথম এই অপকর্ম করেছিলো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৩৩৬)। এই দুই হাদিস দ্বারা প্রতীয়মাণ হয়, মানুষের ভালো কর্মগুলো রক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে আমলের মাধ্যমে। আর খারাপগুলোকে মিটিয়ে দিতে হবে।

পশু কোরবানি দেয়ার মাধ্যমে মূলত হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর সুন্নতের অনুসরণ করা হয়। তিনি আল্লাহর নির্দেশে সন্তানকে কোরবানি করতে চেয়েছিলেন। আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় সন্তানের স্থলে একটি পশু কোরবানি হয়। তখন থেকে পশু কোরবানি করা হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর সুন্নত। অতএব, কোনো ব্যক্তি যদি পশু কোরবানি না করে, অর্থ সদকা করে দেয় তাহলে কোরবানির দায়িত্ব আদায় হবে না। বর্তমানে অনেকে এই আওয়াজ ওঠাচ্ছেন যে, কোরবানি না করে মূল্য গরিব, মিসকিনের মাঝে সদকা করে দিতে। কোনো লোক যদি নামাজ না পড়ে রোগীর সেবা করে তাহলে কি তার নামাজ আদায় হবে? নামাজ মাপ হয়ে যাবে? কখনো না। তদ্রুপ কোরবানি না করে টাকা গরিব, মিসকিনদের মাঝে দান করে দেয়ার দ্বারাও কখনো কোরবানির হুকুম মাফ হবে না। যারা এসব করছে, হয়তো ইসলাম সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই বা ইসলামের প্রতি বিদ্বেষবশত এসব করছে। 

মনে রাখতে হবে, কোনো আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য দু’টি শর্ত। প্রথম, নিয়ত ঠিক রাখা। দ্বিতীয়, রাসূল (সা.) এর সুন্নাত মোতাবেক হওয়া। পশু কোরবানি না করে টাকা সদকা করা সুন্নতের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই এতে কোনো সওয়াব পাওয়া যাবে না। 

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা