• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

কদরের তালাশে রাত কাটুক মোনাজাতে

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ৫ মে ২০২১  

অসুস্থ ব্যক্তির রোগের মাত্রানুযায়ী যেমন তার চিকিৎসা চালানো হয় তেমনি মানুষের ভেতর জগৎকে সুস্থ ও পরিপাটি রাখতে রমজানের সময়কে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। রমজানের প্রথম ভাগে মুমিন তার গুনাহ ও কৃতকর্মের হিসাব মিলিয়ে এসব ছাড়ার প্রস্তুতি নেবে।

যখনই তার জীবন গুনাহমুক্ত হওয়ার পথে এগোবে, শুরু হয়ে যাবে মাগফিরাতের বসন্তকাল। খোদার মাগফিরাতে নিজেকে সিক্ত করে বান্দা রমজানের শেষের দিকে এসে যখন পড়বে তখন আসবে তার সামনে ক্ষমার ঘোষণা। সিয়াম সাধনার পুরস্কার হিসাবে আল্লাহ বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতের সুসংবাদ দেবেন।

রমজান আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাধারণ ক্ষমা ও অশেষ প্রাপ্তির মাস হয়ে। রমজানের রোজা, তারাবি, সেহরি, ইফতার, ইতেকাফ, সাদকাসহ যাবতীয় সব আমলের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে আঁচল ভরে রহমত দান করেন। রমজান মুমিনের ব্যবসার মৌসুম। কিন্তু কোন ব্যবসা?

যে ব্যবসার মাধ্যমে মানুষ আখিরাতের কঠিন বিপদ থেকে মুক্তি পাবে, যে ব্যবসার মুনাফা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতুন নাঈম। এমন ব্যবসার সন্ধান দিয়েই আল্লাহ বলছেন, ‘হে ইমানদাররা! আমি কি তোমাদের এমন এক ব্যবসার কথা বলব, যা তোমাদের রক্ষা করবে যন্ত্রণাদায়ক আজাব থেকে? (তা এই যে,) তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি ইমান আনবে এবং আল্লাহর পথে জান-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করবে। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা জান।’ (সুরা সাফফ-১১)।

সীমাহীন লাভের এ মৌসুমে আমাদের ব্যবসা কতটুকু হলো? ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, আমরা তত মসজিদ ছেড়ে বাজারমুখী হচ্ছি। রমজানের দিনগুলো যত অতিবাহিত হচ্ছে, ততই কমে যাচ্ছে মুসল্লির সংখ্যা।

এ কি আমাদের ব্যবসায় মুনাফার আলামত? রমজানের এ শেষ সময়ে রাসুল (সা.) আমাদের কদরের তালাশে থাকার আদেশ করেছেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতে কদর তালাশ করবে।’ (বুখারি)। তিনি আরও বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিন এত বেশি পরিশ্রম করতেন, যে প্রচেষ্টা-পরিশ্রম অন্য সময় করতেন না।’

তাই সচেতন বান্দা হিসাবে আমাদেরও উচিত এ সময়টুকু আখিরাতের ব্যবসায় পূর্ণ মনোযোগী হওয়া। লাইলাতুল কদর শুধু ২৭ তারিখে সীমাবদ্ধ নয়, দল বেঁধে ২৭-এর রাতে মসজিদে কিছু সময় কাটানোকেই আমরা শবেকদর মনে করি। অথচ শবেকদর হলো বান্দা ও রবের মাঝে ভালোবাসার বিশেষ একটি মুহূর্ত তৈরি করা। বান্দা যখন রবের তালাশে নিয়োজিত হবে, তখনই তার জীবনে আসবে বিশেষ সে ক্ষণটি, যা হাজার মাসের চেয়েও দামি।

কদরের রাত নির্দিষ্ট করে প্রকাশ না-করার বড় একটি হিকমত রয়েছে। বান্দা যেন কদরের রাত জেগে ইবাদত করে এ ধারণা না-করতে পারে যে, আমার আজকের রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। কাজেই আল্লাহ আমাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দিয়েছেন। আমি আল্লাহর কাছে বেশি সম্মানিত ও মর্যাদাসম্পন্ন হয়েছি। নিশ্চয় আমি বেহেশতের অধিকারী। এ ধারণায় অলস ও আরামপ্রিয় লোকেরা যাতে অন্যান্য দিনের ইবাদত-বন্দেগি ছেড়ে না দেয়, সেজন্যই আল্লাহ কদরের রাতকে অনির্দিষ্ট রেখেছেন।

তাই তো রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা শবেকদরকে রমজানের নয় রাত বাকি থাকতে অথবা সাত রাত বাকি থাকতে অথবা পাঁচ রাত বাকি থাকতে অথবা তিন রাত বাকি থাকতে অথবা রমজানের শেষ রাতে (অর্থাৎ, ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ রমজানের রাতে) তালাশ করবে।’ (তিরমিজি)। রাসুল (সা.)-এর এসব হাদিস থেকে আমরা এটিই বুঝি, রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি মুহূর্তই অত্যন্ত দামি। তাই দুনিয়াবি ব্যস্ততা ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থেকে এ সময়ে বেশি বেশি ইবাদত ও দোয়ায় মগ্ন থাকতে হবে।

লেখক : তরুণ আলেম ও ধর্মীয় গবেষক

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা