• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

আশাশুনিতে অপহৃত কলেজ ছাত্রী উদ্ধার, নারীসহ ৩ অপহরণকারী আটক

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২০  

অপহৃত এক হিন্দু কলেজ ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক নারীসহ আরো দু’ অপহরণকারিকে। বৃহষ্পতিবার ভোরে খুলনা জেলা শহরের শিরমনি এলাকা থেকে এ উদ্ধার ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটে।

এদিকে আসামীদের ছেড়ে দিতে না বলায় অপহৃতার পরিবারের সদস্যদের থানা ফটকের বাইরে ডেকে এনে লাঞ্ছিত করেছে আসামীপক্ষের লোকজন। এ ছাড়া একজন ১৬ বছরের কিশোরীকে সেফ হোমে না পাঠিয়ে আদালত তার বলা মতে কোন ধর্মান্তরের এফিডেফিড বা বিয়ের কাবিননামা না থাকার পরও কথিত শ্বশুরের জিম্মায় দেওয়ায় আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, আশাশুনি উপজেলার কুড়িকাহনিয়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে আবীর হোসেন, তার ভাই চাকলা কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মী আশরাফুল ইসলাম ও খুলনার শিরমনির কামাল মোল্লার স্ত্রী রওশানারা।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, আশাশুনির প্রতাপনগর গ্রামের এক জুয়েলারী ব্যবসায়ির মেয়ে প্রতাপনগর এপিএস কলেজের একাদশ শ্রেণীর বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রীকে রোববার সকাল ১০টার দিকে কলেজে যাওয়ার পথে অপহরণ করে কুড়িকাহনিয়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে তার আবীর হোসেন, সবুজ ও আশরাফুলসহ কয়েকজন। পরদিন অপহৃতার বাবার অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার দুপুর দু’ টোর দিকে উপপরিদর্শক ফকির জুয়েল রানা ঘটনার তদন্তে প্রতাপনগরে যেয়ে আমজাদ হোসেনের বড় ছেলে চাকলা কমিউিনিটি ক্লিনিকের কর্মী আশরাফুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডেকে আনছিলেন। এ সময় তালতলা বাজারে প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেনের কথামত ওই মেয়ে ও অপহরণকারি আবীর হোসেনকে ওই দিন সন্ধ্যার মধ্যে থানায় সোপর্দ করিয়ে দেওয়ার জন্য আমজাদ হোসেন ও তার ছেলে আশরাফ হোসেন লিখিতভাবে মুচলেকা দেন। সে অনুযায়ি আশরাফকে ছেড়ে দিলেও মুচলেকার শর্ত মানেনি চেয়ারম্যান ও অপহরণকারিরা। একপর্যায়ে রাতেই অপহৃতার বাবার মামলা রেকর্ড করা হয়। বুধবার রাত সাড়ে সাতটার দিকে কুড়িকাহনিয়া গ্রামের নিজ বাড়ির সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদব আজমীর হোসেন সবুজকে। তার দেওয়া তথ্য মতে বৃহষ্পতিবার ভোরে খুলনার শিরমনি এলাকার রওশানারা বাসা থেকে আশরাফুল, আবীর হোসেন ও ঘরমালিক রওশানারাকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় কলেজ ছাত্রী ভিকটিমকে। বুধবার গ্রেপ্তারকৃত আজমীরসহ বৃহষ্পতিবার গ্রেপ্তারকৃত মোট চারজন আসামীকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

প্রতাপনগর গ্রামের এক জুয়েলারী ব্যবসায়ি জানান, তার অপহৃত ভাইঝিকে উদ্ধার ও চার অপহরণকারিকে গ্রেপ্তারের পর স্থানীয় প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন, উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ বৈদ্য ও শ্রমিক নেতা সামছুর রহমানসহ কয়েকজন থানায় এসে আবীর ব্যতীত সকল আসামীদের ছেড়ে দিতে পুলিশকে বলার জন্য তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন। একপর্যায়ে তার বড় ভাই মেয়ের জন্মনিবন্ধন নিতে বাড়ি যাওয়ার পথে তাকে খেয়াঘাটে আটকে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুস সালামকে বিষয়টি জানালে তিনি উপপরিদর্শক বেলাল হোসেনকে পাঠান। এরপরও নিজ অফিসে তাকে আটকে রেখে আসামীদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন রণজিৎ বৈদ্য। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করায় থানার ভিতরে সাতক্ষীরার এক সাংবাদিককে মারপিট করার হুমকি দেন রণজিৎ বৈদ্য, সামছুরসহ কয়েকজন। তবে নাবালিকা ভিকটিমকে ধর্মান্তরকরণ, বিবাহ এর কোন কাগজপত্র ছাড়াই কথিত শ্বশুরের হাতে তুলে দেওয়ায় আদালতের প্রতি হতাশা প্রকাশ করেন তিনি বলেন, এটা ন্যয় বিচার পরিপন্থি।

কালিগঞ্জ উপজেলার সাঁইহাটি গ্রামের মৃত আহম্মদ আলী মোল্লার ছেলে অহিদ মোল্লা বলেন, তিনি অপহৃতা মেয়ের ফুফার সঙ্গে থানায় এসেছিলেন। তিনি অপহরণকারিদের গ্রেপ্তারে খুশী হওয়ায় বৃহষ্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে থানা থেকে বের হওয়ার পর রণজিৎ বৈদ্য ও সামছুর রহমান প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেনের উপস্থিতিতে থানা ফটকের সামনে মারপিট করেন। বিষয়টি তিনি মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ফকির জুয়েল রানাকে জানিয়েছেন।

তবে ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, তিনি ভিকটিম উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। এরমধ্যে তিন সহোদরকে গ্রেপ্তার করায় তিনি সঙ্গত কারণেই এজাহারভুক্ত হলেও আশরাফুল ও সবুজকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ভিকটিমের স্বজনদের কাছে অনুরোধ করেন। কাউকে মারপিট ও হুমকির ঘটনা তার জানা নেই।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি এড ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, ভিকটিমের বয়স ১৬ বছর হওয়ায় সে একজন নাবালিকা। আদালতে মেয়েটির ধর্মান্তরকরণ ও বিবাহ সম্পর্কিত কোন কাগজপত্র না দেখানোর পরও শুধুমাত্র মেয়ের কথামত তাকে কথিত শ্বশুরের জিম্মায় দিয়েছেন বিচারক। এটা সম্পূর্ণ আইনের পরিপন্থি। একই কথা বলেন, সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক অমল কুমার রায়। তারা বলেন, এতে নাবালিকা হিন্দু নারীদের এভাবে কথিত শ্বশুরের হাতে তুলে দেওয়ায় বিপন্ন হবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। 

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা