• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

লাইলাতুল কদরের বৈশিষ্ট্য ও চেনার উপায়

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২৩  

লাইলাতুল কদর বা শবে কদর‎‎ এর অর্থ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুল’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হচ্ছে; ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। ইসলাম ধর্ম অনুসারে, এ রাতে মহানবী (সা.) এর সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়। পবিত্র কোরআন অনুযায়ী, এই একটি রাত এক হাজার মাস বা প্রায় ৮৩ বছরের চেয়েও উত্তম!

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয় আমি এটি নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। তোমাকে কিসে জানাবে লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করে। শান্তিময় সে রাত ফজরের সূচনা পর্যন্ত’। (সূরা: কদর, আয়াত: ১-৫)

আল-কোরআনে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি লাইলাতুল কদর কোন রাত। তবে কোরআনের ভাষ্য হলো লাইলাতুল কদর রমজান মাসে। কেয়ামত পর্যন্ত রমজান মাসে লাইলাতুল কদর অব্যাহত থাকবে। এবং এ রজনী রমজানের শেষ দশ দিনের মধ্যে হবে বলে সহিহ হাদিসে এসেছে। এবং তা রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে হাদিসে এসেছে।

হাদিসে আছে, ‘রমজানের শেষ দশ দিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ করো। ’ (বুখারি: ২০২০, মুসলিম: ১১৬৯)

এবং রমজানের শেষ পাঁচ দিনে লাইলাতুল কদর থাকার সম্ভাবনা অধিকতর। যেমন হাদিসে আছে, তোমরা রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ করো। (বুখারি: ২০১৭)

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতকে গোপন রেখেছেন আমাদের উপর রহম করে। তিনি দেখতে চান এর বরকত ও ফজিলত লাভের জন্য কে কতো প্রচেষ্টা চালাতে পারে। লাইলাতুল কদরে আমাদের কর্তব্য হলো বেশি বেশি নিজের জন্য এবং আত্মীয়-স্বজনদের জন্য দোয়া করা।

লাইলাতুল কদর রাতের বৈশিষ্ট্য ও চেনার উপায়

(১) এ রাত গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না।

(২) নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না।

(৩) মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে।

(৪) সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে।

(৫) কোনো ইমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা স্বপ্নে হয়তো জানিয়েও দিতে পারেন।

(৬) ওই রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে।

(৭) সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। দেখতে পূর্ণিমার চাঁদের মতো। (ইবনু খুজাইমা, হাদিস: ২১৯০; বুখারি হাদিস: ২০২১; মুসলিম, হাদিস: ৭৬২)

সর্বশেষ আরেকটি মত হলো- মহিমান্বিত এ রজনীটি স্থানান্তরশীল। অর্থাৎ প্রতি বৎসর একই তারিখে বা একই রজনীতে তা হয় না এবং শুধু ২৭ তারিখেই এ রাতটি আসবে তা নির্ধারিত নয়। আল্লাহর হিকমত ও তার ইচ্ছায় কোনো বছর তা ২৫ তারিখে, কোনো বছর ২৩ তারিখে, কোনো বছর ২১ তারিখে, আবার কোনো বছর ২৯ তারিখেও হয়ে থাকে।

তবে হ্যাঁ, অনেক জ্ঞানী গুনীগন মনে করেন ২৬ রোজা দিবাগত রাত্রিতে মানে ২৭ তম তারাবির নামাজের রাতেই লায়লাতুল বা শবেকদর রাত হওয়ার সম্ভাবনা ৯০% থাকে, তবে অন্যান্য হাদিসগুলোতে কিন্তু বলেছে আমাদেরকে রমজানের শেষের ১০ রাত্রির বেজোড় সংখ্যার মানে ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ এইগুলোতে তালাশ করতে যেকোনদিন ঠিক লায়লাতুল কদর হবে।

একারণে কিন্তু ইতেকাফে বসে থাকে, সঠিকভাবে শবেকদর লাভ করার জন্য। হাদিস থেকে আমরা জানতে পাই ২৭ তম রাতই লায়লাতুল কদরের রাত হবে এটা ভাবা ভুল হবে, প্রতি বছরই এটি ঘুর্নায়মান থাকে, মানে এই বছরে যদি ২৭তম রাতে পড়ে তাহলে এর পরের বছর ২১তম রাতে হতে পারে আবার এর পরের বছর ২৯তম রাতেও হতে পারে।

অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোনো তারিখ ভেবে সেই রাতেই ইবাদত করলে তাহলে আমাদের হাত থেকে এই বিশেষ রাতটি চলে যেতে পারে। এই রাতে আপনি যা চাইবেন তা-ই পাবেন এবং যা যা ইচ্ছে তা চেয়ে নিতে পারবেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেনো আমাকে আপনাকে ও পৃথিবীর সব মুসলমানকে এই রাতটি নসিব করেন এবং কাজে লাগানোর তৌফিক দান করেন। আমিন।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা