• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

বিজয় উদযাপনে কোরআন নির্দেশিত চারটি কাজ

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১  

আলহামদুলিল্লাহ্
বিজয়ের পঞ্চাশ বছর আজ। ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের বিজয় দিবস। এ দিনে অত্যাচারী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ থেকে চূড়ান্ত মুক্তি পায় বাংলার মানুষ। এ বিজয় পরাধীনতার কবল থেকে মুক্তির বিজয়। ইসলামও কোনো জাতিগোষ্ঠীর বিজয়কে অস্বীকার করে না। বরং তা পালনে উদ্বুদ্ধ করে।

বিজয় দিবসে প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিজয়ের স্বাদ আস্বাদন করার সুযোগ তৈরি হয়। তেমনি একটি বিজয়; বাঙালী জাতির মুক্তির বিজয়। বিজয় দিবস উদযাপনে ইসলামে বিরোধিতা নেই। বরং দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও বিজয় উদযাপন উপলক্ষে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করা এবং তারই কাছে ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দেয় ইসলাম।

আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ‘বিজয়’ নামে একটি সুরাও নাজিল করেছেন। আবার অন্য একটি সুরায় বিজয় লাভের পর চারটি করণীয়ও নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং বিজয়ের স্বাদ নিতে ইসলাম মানুষকে দিকনির্দেশনা দেয়।

ফিরে দেখা

দীর্ঘ প্রায় আড়াইশ বছর ইংরেজ শাসনের অবসানের পর স্বাধীনতা লাভ করে ভারতীয় উপমহাদেশ। তারপর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে জন্ম নেয় দুটি ভূখণ্ড। ভারত এবং পাকিস্তান। ভারত ভাগের সময় বাংলাদেশ চলে যায় পাকিস্তানের অধীনে। পাকিস্তান স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী মানুষেরা পায়নি স্বাধীনতার স্বাদ। বরং পশ্চিম পাকিস্তানের হায়েনাদের আক্রমণ ও জুলুম-নির্যাতনে নিষ্পেষিত হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানখ্যাত এ অঞ্চলের বাংলা ভাষাভাষী মানুষ। যে জুলুম অত্যাচারের অবসান হয়েছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর।

বিজয় দিবস ইসলাম ও মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে বেশি মর্যাদার। কারণ মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ের স্পন্দন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য ধর্ম ইসলাম প্রচারের কারণে নিজের মাতৃভূমি থেকে জুলুম নির্যাতন ভোগ করে আল্লাহর নির্দেশে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। দীর্ঘ ১০ বছর নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর সফলতার সঙ্গে নিজ মাতৃভূমি পবিত্র নগরী মক্কা বিজয় করেছিলেন। সেদিন তিনি নিজে যেমন স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে যারা মক্কা ছাড়া হয়েছিলেন, তারাও পেয়েছিল বিজয়ের স্বাদ।

বাংলাদেশকে স্বাধীন করতে যার নেতৃত্ব ও ত্যাগে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে, তিনি হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজকের এই দিনে বঙ্গবন্ধুসহ সব বীর শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধার প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং দোয়া।

এ দিবসে আনন্দ উদযাপন ও সেমিনার-সিম্পোজিয়াম ইসলামে নিষিদ্ধ নয়। বরং ইতিহাস বিকৃত না করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে এ দিবসটিকে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে উদযাপন করা জরুরি। পাশাপাশি দেশের বিজয়ের জন্য রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে আত্মদানকারী সব শহীদকে স্মরণ ও দোয়া মোনাজাত করা দেশের প্রতিটি নাগরিকের ঈমানের একান্ত দাবি।

যদিও বর্তমান সময়ে অনেকেই মনে করেন যে, বিজয় দিবস উদযাপন মানেই ইসলামের অবমাননা। না, বিষয়টি তা নয়; কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও বিজয় দিবস উদযাপন করেছিলেন।

ইতিহাস  থেকে জানা যায় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১০ বছর পর বিজয়ের বেশে সহস্র সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে যখন পবিত্র নগরী মক্কায় প্রবেশ করলেন, তখন তিনি চেহারা নিম্নগামী অবস্থায় একটি উটের ওপর বসা ছিলেন। প্রথমেই তিনি হজরত উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে প্রবেশ করে আট রাকাত নামাজ আদায় করলেন। সেই নামাজকে সালাতুল ফাতহ বা বিজয়ের নামাজ বলা হয়। এ ছিলো নবির মক্কা বিয়ের সূচনা কথা।

তিনি ইসলাম প্রচারের কারণে নিজের মাতৃভূমি ত্যাগ করে হিজরত করেছিলেন মদিনায়। দীর্ঘ ১০ বছর নির্বাসিত জীবন কাটানোর পর সফলতার সঙ্গে নিজ মাতৃভূমি পবিত্র মক্কা নগরী স্বাধীন করেন। অর্জন করেন মহান স্বাধীনতা ও বিজয়।

তাহলে বিজয়ের আনন্দ উপভোগ করতে হবে কীভাবে?

আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের দুইটি সুরাতে বিজয়ের কথা বলেছেন। বিজয় দিবসে করণীয় কি তা ওঠে এসেছে কোরআন ও হাদিসের বর্ণনায়। দশম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনন্দ উদযাপন করেছেন। বিজয়ে প্রথম আনন্দে তিনি আদায় করেছেন ৮ রাকাত নামাজ। প্রিয় জন্মভূমির স্বাধীনতায় তিনি এত বেশি খুশি হয়েছিলেন যা ভাষায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়।

বিজয় দিবসে কোরআনের চারটি করণীয়

দেশপ্রেম, দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রহরা ও বিজয় দিবসে আনন্দ উৎসব ও দেশের প্রতিটি নাগরিকের আবশ্যকীয় ৪টি কাজ রয়েছে। সুরা আন-নসরে মহান আল্লাহ তাআলা তা ঘোষণা করেন। কী সেই কাজ ৪টি?

আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

‘(হে নবি!) যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে; আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর জীবন ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে দেখবেন। তখন আপনি আপনার পালনকর্তার তাসবিহ্ তথা পবিত্রতা ঘোষণা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন| নিশ্চয় তিনি ক্ষমা ও তাওবা কবুলকারী।’ (সুরা নসর)

এ সুরায় বিজয়ের চারটি কর্মসূচি

মানুষের জীবনে যদি কোনো বিজয় আসে তবে তারা এ ৪টি কাজ করবেন। চাই তা ব্যক্তিগত বিজয় হোক, পারিবারিক বিজয় হোক, সামাজিক বিজয় হোক কিংবা রাষ্ট্রীয় বিজয়।

১. বিজয়কে মহান আল্লাহর দিকে সম্বন্ধ করতে হবে। এ বিজয়ের পেছনে যদি কোনো মানুষের অবদান থাকে তবে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে হবে। কারণ হাদিসে পাকে প্রিয় নবি ঘোষণা করেছেন-

‘যে ব্যক্তি মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় না করে তবে সে ব্যক্তি আল্লাহর কৃতজ্ঞাও আদায় করতে পারে না।’

সুতরাং বাংলাদেশের বিজয়ের পেছনে যাদের অবদান আছে; তাদেরকেও  কৃতজ্ঞতাসহ স্মরণ করা ঈমানি দায়িত্ব। তাদের জন্য দোয়া করা; তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।

বিজয় মহান আল্লাহর মহান অনুগ্রহ। আল্লাহ না চাইলে এ বিজয় সম্ভব ছিল না; এ বিষয়টি যেন ভুলে না যাই। সে কারণে প্রথমে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। এ কারণেই সুরা নসরের প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ ঘোষণা করেছেন- ‘যখন আল্লাহর সাহায্য এবং বিজয় আসবে।’ আর বাংলাদেশে বিজয়ের পেছনেও ছিল মহান আল্লাহর সাহায্য; আলহামদুলিল্লাহ সেই কারণেই বাঙালি জাতি পেয়েছে স্বাধীনতা ও বিজয়।

২. ফাসাব্বিহ; সুতরাং আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করা। বিজয়ের আনন্দে মহান আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করা। আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করে বলতে হবে- সুবহানাল্লাহ!

৩. বিহামদি রব্বিক; মহান রবের হাম্দ তথা শুকরিয় আদায় করা। বিজয়ের আনন্দে আল্লাহর প্রশংসা করে বলতে হবে- ‘আলহামদুলিল্লাহ’ সব প্রশংসা আল্লাহর।

৪. ওয়াসতাগফির; মহান আল্লাহর কাছে যুদ্ধের সময় ভুলভ্রান্তি তথা সীমালঙ্ঘন থেকে রবের কাছে ক্ষমা চাওয়া। বিজয় দিবসে সব অহংকার থেকে মুক্ত থাকতে বিজয়ের ভুল-ভ্রান্তি থেকে মুক্ত থাকতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর তাতেই বিজয় স্থায়ী হবে।

সুতরাং, বিজয় দিবসে মহান আল্লাহর প্রশংসা এবং দেশের জন্য আত্মদানকারী সব শহিদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা আমাদের ইমানি দায়িত্ব। মুসলমানদের উচিৎ ইসলামি সংস্কৃতি অনুসরণের মাধ্যমে বিজয় দিবস উদযাপন করা।

বিজয় দিবসে সব শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনার পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় একাত্মতা প্রকাশ করে দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত থাকাই হোক প্রতিটি নাগরিকের দৃপ্ত শপথ।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা