আল্লাহর ভালোবাসা ও শ্রেষ্ঠত্ব পেতে করণীয়

সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে মানুষেরও অনেক দায়িত্ব রয়েছে। কথা, কাজ সব কিছুর মধ্যেই এ শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ পাবে; এটাই আল্লাহ তাআলার ইচ্ছা। আর কর্ম যদি খারাপ হয় তাহলে এই শ্রেষ্ঠত্বের কোনো মূল্য নেই। শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে আল্লাহ যাদের ভালোবাসবেন, তাদের কর্ম কেমন হবে?

মহান রাব্বুল আলামিন এটাই ইচ্ছা করেন যে-

‘তার বান্দারা যেন সব ধরনের অন্যায় আচরণ থেকে মুক্ত থাকে, কারো সাথে জুলুম না করে এবং তার দ্বারা যেন কোনো ধরনের মন্দ কর্ম সংঘটিত না হয়। নিজেকে এমন ভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে কথা ও কাজ দ্বারা সৃষ্টির কেউ কোনো ধরনের কষ্ট না পায়।’

আর এভাবে নিজেকে একজন আল্লাহ প্রেমিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে অবশ্যই আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করতে হবে। নিজেদের শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হাদিসের এই দিকনির্দেশনাগুলো মেনে চলা খুবই জরুরি; তাহলো-

১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুমিনকে গালিগালাজ করা বিদ্রোহাত্মক কর্ম আর তার সঙ্গে লড়াই করা কুফর।’ (মুসনাদ আহমাদ)

২. হজরত আব্দুর রহমান বিন শিবল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ব্যবসায়ীরা দুষ্ট প্রকৃতির হয়। বর্ণনাকারী বলেন, নিবেদন করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আল্লাহ তাআলা ব্যবসা বাণিজ্য কি বৈধ করেননি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘কেন নয়? কিন্তু তারা যখন বেচাকেনা করে তখন মিথ্যা বলে আর কসম খেয়ে খেয়ে মূল্য বাড়ায়’।

বর্ণনাকারী বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘পাপাচারীরা নরকবাসী’। নিবেদন করা হলো ‘হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! পাপাচারী কারা?’ এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘নারীরাও পাপাচারী হয়ে যায়।’ একজন ব্যক্তি নিবেদন করলো ‘হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ওরা কি আমাদের মাতা, ভগ্নি আর সহধমীর্নি নয়?’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন ‘কেন নয়! তবে তাদের কিছু দেওয়া হলে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না আর তাদের ওপর যখন কোনো পরীক্ষা আপতিত হয় তখন তারা ধৈর্যও ধারন করে না।’ (মুসনাদ আহমাদ)

এখানে সেইসব ব্যবসায়ীদের ভেবে দেখা দরকার; যারা মানুষদেরকে ঠকায়, মাপে কম দেয়, খারাপ জিনিষ দেয়। তাদের এসব কাজ সঠিক কিনা? তাই শ্রেষ্ঠ ব্যবসায়ী হতে ব্যবসা-বাণিজ্য খুবই পরিস্কার-পরিচ্ছন হওয়া উচিত এবং সৎ থাকা জরুরি।

আবার কিছু লোকের অভ্যাস এমনও আছে যারা বিভিন্নভাবে লোকদের প্রতি জুলুম করে থাকে আর কোনো ধরনের ক্ষমতা পেলে তো কথাই নেই। অথচ যারা বিভিন্নভাবে লোকদের প্রতি জুলুম করে তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন-

১. ‘কিন্তু তাদের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দল মতভেদ করে। অতএব ঐ লোকদের জন্য, যারা জুলুম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে এক কষ্টদায়ক দিনের আজাবের দূর্ভোগ।’ (সুরা আয যুখরুফ : আয়াত ৬৫)

২. হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘জুলুম নির্যাতন করা থেকে বিরত থাকো, কেননা কেয়ামতের দিন তোমার করা জুলুম অন্ধকার রূপ ধারণ করে তোমার সামনে ধেয়ে আসবে। লোভ-লালসা, কৃপণতা ও বিদ্বেষপরায়ণতা থেকে দূরে থাকো, কেননা লোভ-লালসা, কৃপণতা ও বিদ্বেষপরায়ণতা আত্মমর্যাদাকে আক্রান্ত করে হত্যা করায় উস্কিয়ে দেয় আর সম্মানজনক বস্তুর মানহানী ঘটায়।’ (মুসনাদ আহমাদ)

তাই আমরা যদি কারো অধিকার হরণ করি তবে তা কিন্তু জুলুমের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এ বিষয়টি ওঠে এসেছে হাদিসের বর্ণনায়-

হজরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিবেদন করি, ‘হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! কোন জুলুমটি সবচেয়ে বড়?’ উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘সব থেকে বড় অন্যায় এটা যে, কোনো ব্যক্তি নিজের ভাইয়ের প্রাপ্য অংশ থেকে একহাত পরিমান জমি জবর দখল করা। এমনকি ঐ জমির এক টুকরা পাথরও যদি সে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিয়ে থাকে, তবে কেয়ামদের দিন ঐ পাথরের তলার জমিটুকু পরিপূর্ণ আকারের এক কাঁটায় পরিণত করে তার গলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হবে। আর জমির তলদেশে কি লুকানো আছে তা ঐ পবিত্র সত্তা ব্যতিত আর কেউই জানেনা, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন।’ (মুসনাদ আহমাদ)

তাই আসুন, নিজেদের কর্মে পরিবর্তন সাধন করি। কোরআন-সুন্নায় বর্ণিত করণীয়গুলো মেনে চলি। নিজেদের শ্রেষ্ঠ মানুষে পরিণত করি। আগে মন্দ কিছু করে থাকলেও আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। আমরা যদি আল্লাহর নির্দেশের ওপর আমলকারী হই তাহলে তিনি আমাদেরকে তার সন্তুষ্টির চাদরে জড়িয়ে নেবেন।

আমাদেরকে সব ধরনের অন্যায়, জুলুম ও মন্দ কর্ম থেকে বেঁচে চলার তাওফিক দান করুন। আমাদের সবাইকে শ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে কবুল করুন। আমিন।