• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

করোনাযুদ্ধে তারা হলেন মুক্তিযোদ্ধা আর চালচোররা নব্য রাজাকার

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২০  

পুরো পৃথিবী জুড়েই আতংকের নাম করোনা ভাইরাস। বাংলাদেশও আজ করোনা ভাইরাসের কড়াল থাবায় আক্রান্ত। সারাদেশই এখন লকডাউনের আওতায়। সরকার, প্রতিষ্ঠান ও ব্যাক্তি পর্যায়ে নিম্ন আয়ের অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াচ্ছেন কেউ কেউ। ঠিক এমনি সময়ে মন খারাপ করার মতোও খবর আসছে গণমাধ্যমে। সরকারের দেয়া ত্রাণের চাল চুরি করছেন জনপ্রতিনিধি নামের কিছু অমানুষ। যাদের বিবেকবোধ বলে কিছুই নেই।

পৃথিবীর এখন অসুখ। আর অসুখের সময় মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াবে দলমত নির্বিশেষে এটাই সবার কাম্য ছিল। কিন্তু সারাদেশে কতিপয় চালচোরের খোঁজ পাওয়া গেছে। হাতে নাতে ধরাও পরেছেন কয়েকজন।

তবে একই সঙ্গে দেশের দুঃসময়ে বীরের ভূমিকায় আবির্ভূত হয়েছেন কিছু পেশার মানুষ। তাদেরকে আমি এই করোনা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো সম্মান দিতে চাই। সারাদেশে যখন মানুষ যখন লকডাউন মানছিল না, তখনই দেশের স্বার্থে দেশপ্রেমকি সেনাবাহিনী মাঠে নামেন। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছেন। এমনকি জনগণের মধ্যে সচেতনা তৈরি করতে নিয়মিত টহল দেয়ার পাশাপাশি মাইকিংও করছেন। দেশপ্রেমিক নৌবাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন করোনা মোকাবিলায়। বাংলাদেশ পুলিশ এবং র্যাবের সদস্যরাও এগিয়ে এসেছেন দেশের এই সংকটকালে। পুলিশ সদস্যরা নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন দিন রাত।

মানুষের কল্যাণে সবচে বেশি কাজ করছেন যারা তারা হচ্ছেন আমাদের চিকিৎসক ভাই-বোনেরা। তারা নিজের পরিবার পরিজনকে আলাদা রেখে নিরলসভাবে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এই ত্যাগ আমাদের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কিছু মানুষের মহানুভবতার পরিচয়ই বহন করে। চিকিৎসকরা রাত দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাদের সেবা পেয়ে অনেক করোনা রোগীই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। চিকিৎসকদের জন্য হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে একটা স্যালুট। এই বীরদের কথা দেশের মানুষ চিরদিন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে বলেই আমি বিশ্বাস করি।

এছাড়া জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীরা অর্থাৎ সংবাদমাধ্যম করোনা পরিস্থিতির খবর প্রকাশ করছে। এমনকি গুজব প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশংসনীয়। এ কথা অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই যে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাংবাদিকরা ছুঁটে বেড়াচ্ছেন খবরের পিছনে। তাদের জন্যও অন্তরের অন্তস্থল থেকে অভিনন্দন।

প্রকান্তরে আমরা এটাও দেখতে পাই করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি না করার প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থাকলেও থেমে নেই ত্রাণের চাল চুরি। চাল চুরির ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই বেশি জড়িত বলে অভিযোগ আছে। তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই মামলা হয়েছে, অনেকেই আছেন পলাতক।

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সারাদেশে ৯ দিনে অন্তত ২২৬৪ বস্তা সরকারি ত্রাণের চাল চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৩০ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৯ দিনের ব্যবধানে এই চাল চুরির ঘটনাগুলো ঘটে।

স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও স্থানীয় সংবাদকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে এখন পর্যন্ত, পাথরঘাটা উপজেলায় ৫৫০ বস্তা, বগুড়ায় ১০০ বস্তা, নাটোরে ১৩ বস্তা, জয়পুরহাটে ৭ বস্তা, যশোর ৮০ বস্তা, যশোরের মণিরামপুরে ৫৫৫ বস্তা, ঝিকরগাছায় ১ বস্তা, নওগাঁয় ৩৩৮ বস্তা, বাগেরহাটে ১৮ বস্তা, পটুয়াখালিতে ১০ বস্তা, ঝালকাঠিতে ৫০ বস্তা, সিলেটে ১২৫ বস্তা, ময়মনসিংহের ত্রিশালে ১৬ বস্তা, সারিয়াকান্দি উপজেলায় ২৮৮ বস্তা , গাবতলী উপজেলায় ১০০ বস্তা , বগুড়ার শিবগঞ্জ ১৩ বস্তা চাল চুরির তথ্য পাওয়া গেছে।

তাই পরিশেষে একথা বলতেই পারি সেনাবাহিনী, পুলিশ, ডাক্তার এবং সাংবাদিকসহ যারা দেশের জন্য কাজ করছেন তারা হলেন এই সময়ের মুক্তিযোদ্ধা। সকল ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীকে আমার স্যালুট। তাদের সমালোচনা নয় উৎসাহ দিন সবাই। তাহলেই এই করোনা যুদ্ধে আমরা সম্মিলিতভাবে জয়ী হতে পারবো ইনশাল্লাহ। আর চাল চোররা হচ্ছেন দেশদ্রোহী নব্য রাজাকার। তাদের প্রতি কোনো অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই। এই নব্য রাজাকার চাল চোরদের বিরুদ্ধে কোনো মামলার প্রয়োজন নেই, তাদের সরাসরি ক্রশফায়ার দেয়া উচিত বলেই মনে করি। একটা কথা না বললেই নয়, শুধু ইউনিয়ন কিংবা থানা পর্যায়ের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই চাল চোর তা কিন্তু নয়; তাদের পৃষ্ঠপোষক অনেক এমপি মন্ত্রীও রয়েছেন।

এই সংকটকালীন সময়ে অনেক এমপি-মন্ত্রীকে দেখেছি নিজ এলাকায় যাননি। আমাদের মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এত ধন সম্পদ নিয়ে তো আর কবরে যাবে না কেউ, তাই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আমি মনে করি, এমপি-মন্ত্রীরা ভোটের সময় যেভাবে তালিকা ধরে ধরে ভোটারদের বাড়িতে যান, তেমনি এই মহাদুঃসময়ে সবার বাড়িতে ত্রাণ অথবা নিত্য প্রয়োজনীয় উপহার সামগ্রী নিয়ে হাজির হন। তাহলে আপনাদের সম্মান বাড়বে। আল্লাহ পাক আপনাদের মানবিক হওয়ার তওফিক দান করুন।

অযথা সামাজিক যোগাযাগ মাধ‌্যম ফেসবুকে ত্রাণের ছবি দিয়ে গরম না করে প্রকৃতপক্ষে শেখ হাসিনার কর্মী হিসাবে আরো বেশি মানবিক হয়ে অসহায়দের পাশে দাঁড়ালেই আপনাদের মানুষ মনে রাখবে। মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে যে দেশ স্বাধীন হতে পারে, সে দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মেনে চললেই এই করোনা যুদ্ধে আমরা জয়ী হতে পারবো বলে দৃঢভাবে বিশ্বাস করি।

লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা ও ডেইলি পিপুলস টাইম। পরিচালক, এফবিসিসিআই

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা