• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

শেখ হাসিনা : আলোর পথযাত্রী

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০১৯  

বঙ্গবন্ধুর স্নেহ-ভালোবাসায় সিক্ত শেখ হাসিনা ষাটের দশকের উত্তাল দিনগুলোতে ছাত্র আন্দোলনের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। ছাত্রনেত্রী থাকাবস্থায় শেখ হাসিনা পাকিস্তানি সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বন্দী পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন। সাহস ও বুদ্ধিমত্তার সাথে শেখ হাসিনা যেমনই পিতার নির্দেশনা ও পরামর্শ আন্দোলনকারী নেতাদের কাছে পৌঁছে দিতেন, অন্যদিকে আন্দোলন-সংগ্রামে দেশের পরিস্থিতিও সঠিকভাবে বঙ্গবন্ধুর কাছে তুলে ধরতেন। জন্ম থেকে শুরু করে পাকিস্তান শাসন-শোষণের পুরো সময়টাতে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করে যে কোনো পরিস্থিতিতে সাহসে ভর করে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনার সময় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশে না থাকার কারণে নিশ্চিত মৃত্যুর হার থেকে রক্ষা পান। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার শোককে শক্তিতে পরিণত করে জাতির পিতার হত্যার বিচারসহ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নবতর সংগ্রামে শেখ হাসিনা নিজেকে নিয়োজিত করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের মাধ্যমে এদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়। রক্তাক্ত পথে ক্ষমতা দখল করে জেনারেল জিয়া। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। আওয়ামী লীগসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পরিচালনা করে হিংস্র দমননীতি। দেশে ফিরলে রক্তপিপাসু খুনিরা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকেও প্রাণে বাঁচতে দেবে না- এই শঙ্কা থেকে তাঁরা বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। নির্বাসনে থাকা অবস্থায় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার চেষ্টার ফলেই ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা হত্যার বিচারের দাবি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্থাপিত হয়।

বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার নিয়ে শেখ হাসিনার এই উদ্যোগ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী জনগণকে নতুন করে সাহসে উজ্জীবিত করে। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাঁর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের শূন্যতা বিরাজ করছিল। এমনই এক কঠিন সময়ে ১৯৮১ সালের ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে দেশবাসীর আকাক্সক্ষা অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। একই বছরের ১৭ মে দীর্ঘ ছয় বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা ফিরে আসেন প্রিয় মাতৃভূমিতে। বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের দায়িত্বভার গ্রহণ ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি যেন বাতিঘরের সন্ধান পায়। সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে দেশবাসী নতুন করে শপথ নেয়। ১৯৮১ সালের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় চার দশক সামরিক-বেসামরিক স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে শেখ হাসিনাকে কারাবরণসহ বেশ কয়েকবার জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়েছে। অকুতোভয় নেত্রী শেখ হাসিনা সকল মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও ‘ভোট ও ভাতের অধিকার’ প্রতিষ্ঠার লড়াই চালিয়েছেন। শেখ হাসিনার সাহস ও ধৈর্যশীল নেতৃত্বের ফলেই ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালির ওপর চেপে বসা স্বৈরশাসনের অবসান হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ সেবার সুযোগ পেয়ে জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় অমিত সম্ভাবনার দেশ হিসেবে পরিচিত হয়। শেখ হাসিনার সাহসী ভূমিকায় বিশ্বসভায় গড়ে ওঠে বাঙালি জাতির এক নতুন ইমেজ। অবসান হয় হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির। শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা, দৃঢ়তা, আত্মত্যাগ ও ধৈর্যশীল চেষ্টার ফলেই কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করা হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যার দিনে শোক দিবসে জন্মদিন পালনের বিকৃত মানসিকতা, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় খুনিদের দিয়ে ফ্যাসিস্ট দল গঠন এবং তাদের নির্বাচিত করে সংসদে আনাসহ খুনিদের উৎসাহিত করার অপরাজনীতি এদেশের মানুষ দীর্ঘদিন প্রত্যক্ষ করেছে। সকল ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারসহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার কৃতিত্ব একমাত্র শেখ হাসিনার। জীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে এগিয়ে গেছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার ওপর চরম আঘাত আসে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব-শূন্য করার জন্য খালেদা-নিজামী জোট সরকারের মদদে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে নিহত হন নারীনেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন। তাছাড়া বারবার শেখ হাসিনার জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। এসব হত্যা প্রচেষ্টা, গুলিবর্ষণ ও বোমাবাজি সত্ত্বেও শেখ হাসিনা অসীম সাহসে লক্ষ্য অর্জনে অবিচল থেকেছেন। শুধু রাজনৈতিক দুর্যোগই নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগকে শেখ হাসিনা সাহসের সাথে মোকাবেলা করেছেন। ১৯৯৮ সালের প্রলঙ্করী বন্যায় ২ কোটি লোক মারা যাবে বলে যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, শেখ হাসিনার দক্ষতায় মানুষ সাহসের সাথে তা মোকাবেলা করেছে। একজন মানুষকেও খাদ্যাভাবে মৃত্যুবরণ করতে হয়নি। শেখ হাসিনার সাহসী ভূমিকায় সেদিন দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রচারণা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামাত জোটের দুর্বৃত্তায়ন, হত্যা-সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দলীয়করণের প্রতিবাদেও এদেশের মানুষ শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল থেকেই সাহসী প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিল। বঙ্গবন্ধু-কন্যার নেতৃত্বে সেদিনের সেই গণপ্রতিরোধে বিএনপি-জামাত জোটের নীল নকশা ভ-ুল হয়ে যায়। ২০০৭ সালে অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস তথা অরাজনীতিকরণের অংশ হিসেবে গ্রেফতার ও নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। গ্রেফতারের পূর্বে শেখ হাসিনা জনগণের উদ্দেশ্যে লেখা চিঠিতে বলেছিলেন, “যে যেভাবে আছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথা নত করবেন না। সত্যের জয় হবেই। আমি আছি আপনাদের সাথে, আমৃত্যু থাকব।” বঙ্গবন্ধু-কন্যার সাহসী উচ্চারণে মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং জনগণের সম্মিলিত শক্তির কাছে ষড়যন্ত্রকারীরা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসে ভর করে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনা দিনবদলের নতুন সংগ্রাম শুরু করেন। দেশ গড়ার এই সংগ্রামে তিনি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রেখে যাওয়া স্বপ্নাদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে বহুমাত্রিক উদ্ভাবনী কর্মকৌশলের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে সাফল্যের স্বপ্ন-শিখরে পৌঁছে দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। একসময় দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষে জর্জরিত বাংলাদেশ আজ বিশ্বজয়ের নবতর অভিযাত্রায় এগিয়ে চলছে। বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্যের হার বিস্ময়করভাবে হ্রাস পেয়েছে। অতি দারিদ্র্যের হার কমেছে। নব্বইয়ের দশকে যেখানে বাংলাদেশে মাত্র ২৩ লাখ লোক দারিদ্র্যসীমা অতিক্রম করতে পেরেছিল, সেখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের জনমুখী পদক্ষেপের ফলে গত ৯ বছরে ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছে। বিএনপি-জামাত আমলে দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর হার ছিল ৩৮.৪ শতাংশ। বর্তমানে ২১.৮ শতাংশে নেমে এসেছে এবং হতদরিদ্রের হার ২৪.২  থেকে ১১.৩ শতাংশে নেমে এসেছে। বিএনপি আমলে মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৫৪৩ ডলার, আর আজ তা ১ হাজার ৭৫২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। বিএনপি আমলে বাজেটের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬৩ হাজার কোটি টাকা, আর এবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের পরিমাণ ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধির হার ৭.৮৬ শতাংশ।

বিনামূল্যে শিক্ষা ও চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ৯ বছরে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে সর্বমোট প্রায় ২৬০ কোটি ৮৫ লাখ ৯১ হাজার ২৮০টি বই বিতরণ করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। বিনামূল্যে ৩০ পদের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতেও বইতে শুরু করেছে পরিবর্তনের হাওয়া। প্রতিনিয়ত পাল্টে যাচ্ছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চেহারা। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে। খাদ্য ঘাটতি থেকে খাদ্য-উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে দেশ। আজ বাংলাদেশ আম উৎপাদনে বিশ্বে নবম এবং আলু উৎপাদনে অষ্টম স্থানে এবং মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ হিসেবে স্বীকৃত। বিশ্বকে চমকে দেওয়ার মতো সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ নানা অর্থনৈতিক সূচকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। পদ্মাসেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়িত হচ্ছে। সবই সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনার দূরদর্শী এবং সাহসী নেতৃত্বের জন্য। ৭২তম জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা