• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আজকের সাতক্ষীরা

কুয়াশা, ভারী বৃষ্টি : বদলে যাওয়া চৈত্র নিয়ে নতুন শঙ্কা

আজকের সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৭ মার্চ ২০২৩  

চৈত্র মানেই তেতে থাকা রোদ্দুর। লু হাওয়া বলতে যা বোঝায়, তেমন এক গরম বাতাস। সেই দিন আর নেই। চৈত্র পেয়েছে নতুন রূপ। খরার বদলে চৈত্র এখন মেঘলা আকাশ, সকালে কুয়াশা, দিনে গরম, রাতে ঠান্ডা, যখন-তখন বারিধারা। বৃষ্টি ভাঙছে অতীতের রেকর্ড।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ু বদলের কারণেই আবহাওয়া করছে বিরূপ আচরণ। এটা বেশ আতঙ্কের। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে গাছগাছালির। বাড়বে ফসলের রোগবালাই। তবে সেচনির্ভর ফসলের জন্য এ বৃষ্টি আশীর্বাদের।

ভোরে শীতের কুয়াশা:

এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতের আবহ বিরাজ করছে। পড়ছে হালকা শীত। গত ২২ মার্চ ভোরে রাজশাহী ঢেকেছিল ঘন কুয়াশায়। সূর্যোদয়ের পর পরই হঠাৎ ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় সবুজ প্রকৃতি। সকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখতে পায়নি রাজশাহীবাসী। প্রকৃতির এমন আকস্মিক পরিবর্তনে সবাই অবাক!

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, এমন কুয়াশা রাজশাহীর আমের মুকুল ও গুটির জন্য ক্ষতিকর। আমের মুকুলে ‘পাউডারি মিলডিউ’ নামে এক ধরনের রোগ দেখা দেয়। এতে আমের মুকুল ঝরে পড়ে। চৈত্র মাসের দ্বিতীয় দিনে মাদারীপুরের শিবচর ঢেকে যায় কুয়াশায়। ভোর থেকে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘন কুয়াশা থাকায় সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলেছে হেডলাইট জ্বালিয়ে।

এ ছাড়া নরসিংদী, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, নোয়াখালী থেকেও কুয়াশার তথ্য পাওয়া গেছে। কয়েকদিন ধরে রাজধানীর পাশের উপজেলা কেরানীগঞ্জেও হালকা কুয়াশা দেখা গেছে।

তবে আবহাওয়াবিদরা একে কুয়াশা বলতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, ‘কুয়াশাসদৃশ’। আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, এখন যেটা হচ্ছে সমুদ্র থেকে দখিনা বাতাস আসছে, সে বাতাসে আর্দ্রতা আছে। আবার কয়েকদিন ধরে অল্প অল্প বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টি মাটিতে কিছুটা আর্দ্রতা রেখে যাচ্ছে যেটা তাড়াতাড়ি বাষ্প হচ্ছে। এমনটা সবসময় ঘটে না, মাঝে মাঝে হয়।

রেকর্ড বৃষ্টি:

আবহাওয়াবিদদের হিসাবে, সাধারণত মার্চে সারাদেশে গড়পড়তা ৫২ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এই মাসের জন্য দেওয়া পূর্বাভাসে সংস্থাটি স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলেছিল। তবে এবার তা উল্টো হতে যাচ্ছে। কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, ১৫ মার্চ থেকে গতকাল রোববার পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে।

এর মধ্যে তিন দিনেই ফেনী জেলায় গড়ে ১৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে মার্চে এক সপ্তাহের মধ্যে কোনো জেলায় এত বেশি বৃষ্টির রেকর্ড নেই। গতকাল পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ১৫৩ মিলিমিটার, কুমিল্লায় প্রায় ১০০ মিলিমিটার ও নেত্রকোনায় ১০৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, এ বছর মার্চে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আগাম বৃষ্টি হওয়ায় এ বছর বোরোর বাম্পার ফলন হবে। দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টির কারণে দেশের তাপমাত্রাও স্বাভাবিক আছে। আগের বছরগুলোতে চৈত্র মাসে তাপমাত্রা যেখানে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে, এ বছর সেখানে ৩০-এর ঘরেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, এ বছর চৈত্র মাসে অনেক বৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো এবার পুরো শীতে (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) বৃষ্টি হয়নি বললেই চলে। ফলে মাটি প্রচণ্ড শুষ্ক ছিল। এই শুষ্ক মাটিতে যে বৃষ্টির পানি পড়ছে, তা দ্রুত বাষ্পায়িত হয়ে বাতাসে চলে যাচ্ছে। ফলে রাতের বেলা যখন ভূপৃষ্ঠ দ্রুত শীতল হয়ে যায়, তখন ভূপৃষ্ঠের ওপরের বায়ু থাকে অপেক্ষাকৃত গরম ও জলীয় বাষ্পপূর্ণ। এই গরম ও জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস অপেক্ষাকৃত শীতল ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে কুয়াশার সৃষ্টি করছে।

এ আবহাওয়া আতঙ্কের কিনা– এমন প্রশ্নে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ পলাশ বলেন, বাংলাদেশের শস্য জন্মানো ও পরিপুষ্ট হওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় অভিযোজিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাপমাত্রার ব্যাপক উঠানামার কারণে শীতে জন্মানো শস্য উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। শীতকালে উৎপাদিত শাকসবজির স্বাদও আগের মতো নাও থাকতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ২০২২ সালের চৈত্র মাসে বৃষ্টি হয়েছে ৬ দিন, ২০২১ সালে ৮ দিন, ২০২০ সালে ৫ দিন, ২০১৯ সালে ৭ দিন, ২০১৮ সালে ৪ দিন এবং ২০১৭ সালে ৪ দিন। আর এ বছরের চৈত্র মাসে ২৬ দিনের মধ্যে ১২ দিনই বৃষ্টি হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, লা নিনা ও আইওডি ইতিবাচকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় বৃষ্টি বেড়ে যায়। বঙ্গোপসাগরেও একই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে। এ কারণে এবার এপ্রিল-মে মাসেও বৃষ্টি বাড়বে। এর পর জুন থেকে বর্ষা শুরু হলে বৃষ্টি আরও বাড়বে, যা বন্যার ঝুঁকি বাড়াবে।

আজকের সাতক্ষীরা
আজকের সাতক্ষীরা